২০০ রানের কম টার্গেট, সংখ্যাতত্ত্বে মামুলি বলাই যায়। কিন্তু তাড়া করতে নেমে পাওয়ারপ্লেতেই যদি দলের তিন উইকেটের পতন ঘটে তাহলে কোন লক্ষ্যকেই বোধহয় ছোট করে দেখার সুযোগ থাকে না। উল্টো রানের চাপ তখন ঝেঁকে বসে ভারী হয়ে। সেই চাপ সামাল দিতে কেবল ব্যাটিং জানাই যথেষ্ট নয়, থাকতে হয় শক্ত মনোবলও।
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল বনাম ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ম্যাচের গল্পটা এমনি। ভারতের ছুঁড়ে দেয়া ১৮৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে দশ ওভারেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারায় বাংলাদেশ। সমর্থকেরা যখন আরো একবার ভারতের কাছে অপ্রত্যাশিত পরাজয়ের ক্ষণ গণনা করছিল তখনি আবির্ভূত হন আরিফুল ইসলাম, ত্রাতা হয়ে উদ্ধার করেন দলকে।
আউট হওয়ার আগে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৯০ বলে ৯৪ রান। ছয় রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করলেও দলের জয় নিশ্চিত করতে ভুলেননি তিনি। তাঁর এই দুর্দান্ত ইনিংসের কল্যাণেই ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিলো টিম টাইগার্স।
ক্রিজে এসে দেখে শুনে শুরু করেছিলেন এই তরুণ। সেট হয়ে তারপর দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা; ব্যাট আর স্নায়ুর মিলিত শক্তিতে ভারতীয় বোলারদের উল্টো চাপে ফেলে দিয়েছেন। তাঁর সাহসী ব্যাটিংয়ে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ আবারো ম্যাচে ফেরে, সেই সাথে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও চলে আসে হাতে।
আরিফুলকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন আরেক ব্যাটার আহরার আমিন। পার্শ্বনায়ক হয়ে নীরবে সমর্থন দিয়েছেন আরিফকে, আর তাতেই নিজের সেরাটা দেয়া সহজ হয়েছে এই ডানহাতির জন্য। দুজনের শতরানের জুটিতে মূল অবদানও তাঁর, তবে আহরারের কৃতিত্বকে ছোট করার যৌক্তিকতা নেই।
গত যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল ব্যর্থ হলেও আলো কেড়েছিলেন আরিফুল। মাত্র চার ইনিংস ব্যাট করেই দুইবার সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন তিনি, সেই পারফরম্যান্সের সুবাদে জুনিয়র পিএসএলও খেলেছিলেন। এসব অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই আরো শানিত করেছে তাঁকে। তাই তো বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছেন বুক চিতিয়ে, জয়ের পথ চিনিয়েছেন দলকে।
২০২২ বিশ্বকাপের পরেই দেশীয় গণমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছিলেন আরিফুল ইসলাম। কিন্তু ক্ষণিকের মোহে নিজেকে ভাসিয়ে দেননি তিনি, বরং কাজ করেছেন নিজেকে নিয়ে। সেটারই প্রমাণ আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এমন পারফরম্যান্স। আগামী সময়গুলোতেও এমন সংযম দেখাতে পারলে বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছে ভরসা করার মত আরেক তারকা।