অর্জুন বনাম সরফরাজ ও ভারতীয় নেপোটিজম

রঞ্জি ট্রফির গত মৌসুমে ১২২.৭৫ গড়ে ৯৮২ রান। আর চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে করে ফেলেছেন ৪৩১ রান, গড়টা আগের মতোই ১০০ এর উপরে, ১০৭.৭৫। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পরেই তার ব্যাটিং গড় (৭৯.৭)। নিজেকে কিছুটা অভাগা ভাবতেই পারেন মুম্বাইয়ের ক্রিকেটার সরফরাজ খান। কারণ মৌসুমের পর মৌসুম এমন রানবন্যা ছড়িয়েও ভারতের টেস্ট ক্যাপটা এখনো পরা হয়নি ২৫ বছর বয়সী এ ব্যাটারের।

প্রধান নির্বাচক চেতন শর্মার কাছে একটা প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেই ডাক পাবেন সরফরাজ। কিন্তু সেই ডাক আর তিনি পাননি। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দলে জায়গা পাননি। তাতে কী! নিজের কাজটা তো করে যেতে হবে। সরফরাজ সেটিই করে দেখালেন। রঞ্জি ট্রফির পরের ৪ ম্যাচের ৩ টিতেই সেঞ্চুরি করলেন। মাঝখানে যে ম্যাচটায় সেঞ্চুরি পেলেন না সে ম্যাচটাতে করলেন ফিফটি (৭৫)।

দুর্দান্ত এমন ফর্মের পরও জায়গা পাচ্ছিলেন না- তা নিয়ে এক ধরনের হতাশা তো আগে থেকেই জমে ছিল। কিন্তু হতাশা আর লুকাতে পারলেন না, যখন দেখলেন বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ১৭ জনের দলে তিনি জায়গা পেলেন না। তাঁর জায়গায় দলে ঠাই হয়েছে সুরিয়াকুমার যাদবের। সুরিয়া জায়গা পেয়েছেন বলে যে ক্ষোভ উগরে দিলেন ব্যাপারটা এমন নয়।

প্রকাশ্যে হতাশা বের হয়ে আসলো একটা প্রশ্নে, – আর কী করতে হবে আমায়। সরফরাজকে নিয়ে এরপর থেকেই উত্তাল ভারতের ক্রিকেট পাড়া। আকাশ চোপড়া তো বলেই দিলেন, চেতন শর্মা যেটি করলেন তাতে তো সরফরাজ ভাবতেই পারেন তাঁর সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।

প্রতারণা কিংবা উপেক্ষিত যেটাই হোক, সরফরাজের এমন মন খারাপের সময়ে পাশে দাঁড়িয়ে গেলেন তাঁর বাবা নওশাদ খান। ধৈর্য্য ধরতে বললেন তাঁর ছেলেকে। নিজের কাজটা চালিয়ে গেলে একদিন না একদিন সফলতা ধরা দিবেই- এই আপ্ত বাণীতে ছেলে সরফরাজকে শান্ত করলেন।

নওশাদ খান নিজেও একসময় মুম্বাইয়ের ক্রিকেটার ছিলেন। শচীন টেন্ডুলকারের সাথে দুই একটা ম্যাচেও খেলেছেন। তাই এমন বাজে মুহূর্ত কিভাবে সামলাতে হয় সেটা ভাল করেই জানেন নওশাদ খান। বাবার এক টোটকায় ছেলেও হতাশাকে শক্তিতে পরিণত করে আবারো মাঠে নামলেন। এমনকি সেঞ্চুরিও করলেন।

ছেলে সরফরাজ খানকে ক্রিকেটার বানানোর জন্য সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে দিয়েছেন নওশাদ খান। যাপিত জীবনে হয়তো জৌলুশ নেই, আভিজাত্য নেই, কিন্তু নওশাদ খান সব সময় ছেলের জন্য সময় বের করেছেন। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে রীতিমত ছেলের মনস্তাত্ত্বিক কোচের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। ছেলের দলে জায়গা না পাওয়ার পর নওশাদ খানও গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেছেন। কিন্তু কোনো হতাশা প্রকাশ করেননি। বরং ছেলের সাথে তাঁর একটি স্মৃতির কথা সামনে এনেছেন।

ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে একবার বাবাকে সরফরাজ খান বলেছিল, ‘দেখো বাবা, অর্জুন টেন্ডুলকার কত ভাগ্যবান। ওর সব আছে। গাড়ী আছে, আইপ্যাড আছে। সব আছে।’

ছেলের এমন কথায় নিশ্চুপ বনে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না বাবা নওশাদ খানের। তবে সে স্মৃতি টেনেই নওশাদ খান এবার একটা স্বপ্ন ব্যক্ত করে বললেন, ‘আশা করছি আমার ছেলে একদিন বলবে, বাবা, আমি ওর (অর্জুন টেন্ডুলকার) চেয়েও ভাগ্যবান। তুমি আমাকে পুরো ক্যারিয়ারে সময় দিয়েছ। তার বাবা তো ছেলেকে সেভাবে সময়ই দিতে পারেনি।’

সবে ২৫ বছর বয়স সরফরাজ খানের। সামনে এখনো অঢেল সময়। সরফরাজ খানের সামনে তাই দুয়ার এখনও বন্ধ হয়ে যায়নি। ব্যাটে বলে মিললে খুব শীঘ্রই লাল বলের ক্রিকেটে সুযোগ মিলতে পারে সরফরাজের। এমন কিছু হলে, বাবা ছেলে- দুজনেরই স্বপ্ন পূরণ হবে একসাথে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link