শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন-মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।
এই নব্বইয়ের দুয়ারে দাড়িয়ে তিনি দেখছেন, কেবল মুখ নয়, শরীরের প্রায় সব অংশই বিজ্ঞাপনে ঢাকা পড়েছে। বাকী ছিলো বগলটা। এবার বিগ ব্যাশে সেই বগলেও বিজ্ঞাপন বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আম্পায়ারদের বগলে থাকছে বিজ্ঞাপন।
বিজ্ঞাপন এবং খেলা আজকাল যেন পরস্পরের সমার্থক শব্দ হয়ে গেছে। বিশ্বের সব খেলায় এখন বিজ্ঞাপনের তাণ্ডব। বিভিন্ন টুর্নামেন্টের স্পন্সর, জার্সি স্পন্সর, জুতা স্পন্সর, ব্যাট স্পন্সর; এমনকি খেলোয়াড়দের ব্যবহৃত তাদের ব্যক্তিগত জীবনের পণ্যসামগ্রীতেও বিভিন্ন কোম্পানি নিজেদের পণ্যের বিজ্ঞাপন করে।
ফুটবলের মেসি-রোনালদো-নেইমার থেকে শুরু করে ক্রিকেটের বিরাট কোহলি কিংবা সাকিব আল হাসানরা বিশ্বের বিভিন্ন নামী দামি পন্যের ব্রান্ড এম্বাসেডর হিসেবে তাদের পন্যের প্রচারে কাজ করছেন। ছোট ছোট তারকারাও পিছিয়ে নেই।
এতদিন পর্যন্ত এগুলা সবার কাছেই স্বাভাবিক ছিল। তবে এবার ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তাদের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগ বিগ ব্যাশে বিজ্ঞাপনের এক নতুন মাত্রা যোগ করছে। এখন থেকে পন্যের প্রচারে যুক্ত হবেন আম্পায়াররাও। সেটিও আবার খেলা চলাকালীন সময়ে মাঠের মধ্যেই। আর সেই বিজ্ঞাপন বসবে বগলের নিচে।
অবাক কান্ড হলেও এমনটিই ঘটতে চলেছে এবার বিগ ব্যাশ লিগে।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এবার ডিওডোরেন্ট পন্য রেক্সোনা, যার মূল কোম্পানি ইউনিলিভারের সাথে চুক্তি সেরেছে। সেই চুক্তির অংশ হিসেবে তারা মাঠে থাকা আম্পায়ারদের বগলের নিচে পন্যের লোগো লাগানো শার্ট দেবেন।
এতে করে মাঠে থাকা আম্পায়াররা যতবার দুই হাত তুলে ছক্কার সংকেত দেবেন, ততবারই রেক্সোনার লোগো দেখা যাবে। এ বাদেও মাঠে বাই রানের সংকেত দেয়ার সময়েও এই লোগো দেখা যাবে বলে জানিয়েছন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।
এ সম্পর্কে ইউনিলিভার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ক্রিকেটে ইতোমধ্যে নতুন তরতাজা স্বাদের অনেক কিছুই যুক্ত হয়েছে, আমরাও আরও নতুন কিছু যোগ করতে পেরে খুশি!’
মূলত ক্রিকেটে এতদিন খেলোয়াড়দের শার্টগুলা বিভিন্ন লোগো লাগানো থাকত। কিন্তু আম্পায়ারদের শার্ট এর বেশিরভাগই ফাকা থাকত। সেই সুযোগ টাই কাজে লাগাতে চাইছে রেক্সোনা।
এখন অবধি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকে অনেক নতুন কিছুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সে হিসেবে ‘বগলের নিচের বিজ্ঞাপন’-এর এই পদ্ধতিটি আরও একটি নতুন জিনিস হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বে প্রকাশ পেতে যাচ্ছে।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তাদের দেয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমাদের সাথে রেক্সনা একত্রিত হয়ে একটি চুক্তি করেছে। কিন্তু তারা এটা এখনো পরিষ্কার করেনি যে, আম্পায়ারদের তাদের পন্য ব্যবহার করায় কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে কি না ।’
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া আরও যোগ করেছে যে, এতে করে আম্পায়ারদের কোনো তাদের মূল দায়িত্ব মনোযোগী থাকতে কোনো সমস্যা হবে না। অপরদিকে সমালোচকরা বলছেন, আম্পায়ারদের এমন ফোকাসে আনলে, হয়ত তারা তাদের আসল মনযোগ হারাতে পারেস।
মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির খেলাধুলা বিষয়ক শিক্ষাবিদ রবিন ক্যানিফোর্ড এই বিষয় নিয়ে বলেন, ‘ক্রিকেট অনেক সিরিয়াস একটি খেলা। যার মূল সিদ্ধান্ত গুলো নির্ভর করে আম্পায়ার দের ওপর। একজন ভাল আম্পায়ার ই খেলা টাকে আরও সুন্দর করতে পারে। কিন্তু আম্পায়ারদের এমন সামনে নিয়ে এলে তা আম্পায়ার দের মনোযোগ এ বিঘ্ন ঘটাতে পারে, যা খেলাটাকে নষ্ট করতে পারে।‘
তিনি আরও বলেন যে, ‘এটা নতুন একটা বিষয়,যেটা খেলাধুলার সাথে বিজ্ঞাপনকে এক নতুন মাত্রা দেবে হয়ত। কিন্তু দিনশেষে আপনি নিশ্চয় চাইবেন না সুন্দর খেলা নষ্ট হোক,কোনো একটা পন্যের বিজ্ঞাপনের জন্য।’
ক্রিকেটে নতুন হলেও খেলাধুলাতে এরকম বগলের নিচে বিজ্ঞাপনের ধারণা অবশ্য নতুন নয়।
২০০৯ সালে মাইক টাইসন এবং জুলিয়ায়া ফ্রান্সিসের মধ্যকার এক বক্সিং ম্যাচে এরকম ভাবে বগলের নিচে বিজ্ঞাপন এর উপায় ব্যবহার করা হয়। ফ্রান্সিস কে ‘ডেইলি মিরর’ পত্রিকাটির লোগো ব্যবহার করতে দেখা যায়।
বিএমএফ এর প্রধান নির্বাহী অফিসার অ্যালেক্স ডারউইন এই বিষয়ে বলেন, বিগ ব্যাশ লিগে বিজ্ঞাপনের এই নতুন আবিষ্কারটি সাফল্য পেতে পারে। তিনি আরও বলেছেন, এটা খুব সাধারণ এবং স্বাভাবিক একটা পদ্ধতি, ‘বিগ ব্যাশ হলো চার ছক্কার লিগ। সুতরাং আপনি সেরা উপায়টিকেই বেছে নিয়েছেন পন্যের বিজ্ঞাপন হিসেবে। আর যেহেতু বগলের তলা বিষয়টা একটু হাস্যকর, তাই এটি মানুষের আগ্রহ কাড়বে।’
রেক্সনার সাথে এই চুক্তিটি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এই বছরের অন্যতম বড় একটি চুক্তি। কোভিড মহামারির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এই বছরে এই চুক্তি থেকে প্রায় ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।