একসময়ের তারকা ক্রিকেটারদের বিদায় আর বোর্ডের অব্যবস্থাপনায় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট হুট করেই মুখ থুবড়ে পড়ে। একসময় দলটা ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি। সেই দলটাই ঘরের মাটিতে রীতিমতো জয় পেতে হিমসিম খাচ্ছিলো। বাইশ গজে সিংহের গর্জনটা আর শোনা যাচ্ছিলো না। তরুণ প্রতিভাবান কিছু তারকার হাত ধরে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। আর শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটকে আবার আশার আলো দেখানো কিছু তরুণ তারকার একজন – চারিথ আসালাঙ্কা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা মাড়িয়েছেন এখনও বছর পেরোয়নি। এরই মধ্যে তিনি বনে গেছেন লঙ্কান ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ভরসা। মারকাটারি ব্যাটিং, নিঁখুত শটে বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করতে বেশ পটু এই বাঁহাতি ব্যাটার। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতিমধ্যেই নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন।
বছর খানেক আগে অভিষেক হলেও রঙিন পোশাকে এখন তিনি দলের নিয়মিত মুখ। ব্যাট হাতে আছেন উড়ন্ত ফর্মে। বার বার সেঞ্চুরির কাছে গিয়েও ব্যর্থ হচ্ছিলেন। সেঞ্চুরির অধরা স্বপ্নটা অবশ্য পূরণ হয়েছে ঘরের মাটিতেই শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
অজিদের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ওয়ানডেতে শেষ ওভারের শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের ম্যাচে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন আসালাঙ্কা। আসালাঙ্কার দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতেই ত্রিশ বছর পর ঘরের মাটিতে অজিদের বিপক্ষে সিরিজ জয় পায় লঙ্কানরা। পুরো দল যেখানে ব্যর্থ ধনঞ্জয়া ডি সিলভার সাথে জুটিতে দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন আসালাঙ্কা।
জশ হ্যাজেলউড, প্যাট কামিন্স, ম্যাথু কুনহেম্যানদের পাত্তাই দেননি এই তরুণ তারকা। মাঠের চারপাশেই ব্যাট হাতে ছুঁটিয়েছেন বাউন্ডারির ফোয়ার। ১০ চার আর ১ ছক্কায় খেলেছেন ১০৬ বলে ১১০ রানের অসাধারণ এক ম্যাচজয়ী ইনিংস। অজি বোলাররা যেন সমাধা করতে পারছিলেন না আসালাঙ্কা সমস্যার। ইনিংসের একদম শেষদিকে কামিন্সের কাছে ধরা পড়লেও নিজের কাজটা ঠিক সেরে গেছেন এই বাঁহাতি ক্রিকেটার।
অনূর্ধ্ব ১৯ দল থেকেই নির্বাচকদের নজরে ছিলেন তিনি। বয়সভিত্তিক দলে খেলে আসছেন ২০১৩ থেকে। অনূর্ধ্ব-১৭ দিয়ে শুরু। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইংলিশদের বিপক্ষে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন এই ব্যাটার। স্কুল ক্রিকেটে নিজ স্কুলের হয়ে ওপেনিংয়ে ব্যাট করতেন তিনি। এরপর অনূর্ধ্ব-১৯ দলে এসে দায়িত্ব পান অধিনায়কত্বের।
২০১৫ সালে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষীক সিরিজে তিনি ছিলেন দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। সেখান থেকে ছয় বছর বাদে উঠে আসা জাতীয় দলে। এরপর গেল এক বছরে ব্যাট হাতে রঙিন পোশাকে আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মারকাটারি ব্যাটিংয়ে নজর কেড়েছিলেন সবার। সেবার তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিংয়েই হেরে যায় বাংলাদেশ। সেবার পুরো আসরে ব্যাট হাতে ঝড়ো ইনিংস খেলেন এই তরুণ তারকা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা দিয়েই মুখ দেখেছিলেন ব্যর্থতার। অভিষেকেই শূন্য রানের লজ্জা মাথায় নিয়ে ফিরেছিলেন সাজঘরে। সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ানো। ব্যাট হাতে প্রায়ই দেখা মিলে লঙ্কান জার্সিতে আসালাঙ্কা ঝড়। বয়স মাত্র ২৫ ছুঁইছুঁই। দিনে দিনে নিজেকে আরও পরিণত করে তুলছেন।
অভিজ্ঞতার ঝুলিটাও ভারী করছেন। এখনও পাড়ি দিতে হবে লম্বা পথ। তবে ক্যারিয়ারের শুরুতে প্রাথমিক ধাক্কার পর যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন – তাতে আসালাঙ্কা হতে পারেন লম্বা রেসের ঘোড়া। আপাতত সেটা স্রেফ সম্ভাবনা। আর এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে নিজের সেরাটাই দিতে চাইবেন লঙ্কান ক্রিকেটের এই নব্য তারকা।