অবশেষে পর্দা নামলো এশিয়া কাপের এবারের আসরের। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের যৌথ আয়োজনে প্রথমবারের মতো হাইব্রিড মডেলে এশিয়া কাপ। এর পাশাপাশি বৃষ্টি, রিজার্ভ ডে মিলিয়ে এবারের এশিয়া কাপটা দারুণ জাঁকজমকপূর্ণ হওয়ার পথেই ছিল। তবে একপেশে, ম্যাঁড়ম্যাঁড়ে ফাইনালে সে আশায় গুড়ে বালি। ইতিহাসের সবচেয়ে একতরফা ফাইনালের স্বাক্ষী হয়েছে বিশ্ব ক্রিকেট।
এবারের এশিয়া কাপ জুড়ে নজর কেড়েছেন অনেকেই। মহাদেশীয় এ টুর্নামেন্টে পারফর্মেন্স বিবেচনায় এবার সেরা একাদশ বেছে নিয়েছে খেলা ৭১। খেলা ৭১ এর এই একাদশে সর্বোচ্চ ৬ জন ভারতীয় ক্রিকেটার জায়গা পেয়েছে। আর বাংলাদেশ থেকে ৩ ও শ্রীলঙ্কা থেকে ২ জন ক্রিকেটার রয়েছেন এই একাদশে।
- শুভমান গিল (ভারত)
এবারের এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ ৩০২ রান এসেছে শুভমান গিলের ব্যাট থেকে। নেপাল ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ফিফটি ছাড়াও বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন এ ওপেনার৷ যদিও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জেতাতে পারেননি।
তবে, ভারতের অষ্টম এশিয়া কাপ জয়ের পথে রেখেছেন দারুণ অবদান। আর সে কারণেই এশিয়া কাপ-২০২৩ এর সেরা একাদশে অবধারিতভাবেই থাকছেন শুভমান গিল।
- রোহিত শর্মা (অধিনায়ক)
পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই দারুণ আগ্রাসী ব্যাটিং করেছেন রোহিত শর্মা। ১০৭.৭৭ স্ট্রাইকরেটের সাথে ৩ ফিফটি তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১৯৪ রান।
এবারের এশিয়া কাপের সেরা একাদশে তাই ভারতীয় দলের মতোই শুভমান গিলের সাথে ইনিংস শুরু করবেন রোহিত শর্মা। আর খেলা ৭১ এর দৃষ্টিতে এশিয়া কাপজয়ী রোহিত শর্মাই থাকছেন এই একাদশের অধিনায়ক।
- কুশল মেন্ডিস (উইকেটরক্ষক)
এবারের এশিয়া কাপে লঙ্কান ব্যাটিং অর্ডারের অন্যতম ভরসার নাম ছিলেন কুশল মেন্ডিস। ফাইনাল বাদে প্রায় প্রতি ম্যাচেই হেসেছে তাঁর ব্যাট। শুভমান গিলের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান এসেছে এ ব্যাটারের কাছ থেকে।
৩ ফিফটিতে এবারের এশিয়া কাপে তাঁর রানসংখ্যা ২৭০। এর সাথে উইকেটের পিছনেও তিনি সামলেছেন। তাই খেলা ৭১-এর দৃষ্টিতে এবারের এশিয়া কাপের সেরা একাদশে থাকছেন কুশাল মেন্ডিস
- নাজমুল হোসেন শান্ত (বাংলাদেশ)
এবারের এশিয়া কাপে মাত্র ২ টি ম্যাচ খেলেছেন। আর তাতেই ৮৯ ও ১০৪ রানের ইনিংস খেলেছেন এ বাঁ-হাতি ব্যাটার। ইনজুরির কারণে সুপার ফোরে না খেলতে পারলেও বাংলাদেশের সুপার ফোরে ওঠার পথে দারুণ অবদান রেখেছিলেন শান্ত।
- লোকেশ রাহুল (ভারত)
৬ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। সুপার ফোরের মহা গুরুত্বপূর্ণ সে ম্যাচে নেমেই হাঁকিয়ে ছিলেন সেঞ্চুরি।
সুপার ফোরে আরো একটি ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি খেলেছিলেন ৩৯ রানের কার্যকরী এক ইনিংস। সুপার ফোরে এমন পারফর্মেন্সই মূলত তাঁকে এশিয়া কাপের সেরা একাদশে জায়গা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
- সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)
ব্যাট হাতে ২ ফিফটিতে ১৭৩ রান। আর বোলিংয়ে ৪.৩৯ ইকোনমিতে ৩ উইকেট। ভারতের বিপক্ষে ৫৯ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর তাঁর ৮০ রানের ইনিংসের উপরেই ভর করে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ।
আবার বল হাতেও পরে ভারতকে চাপে ফেলেছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে ভারতের বিপক্ষে ৬ রানের ম্যাচজয়ের নায়ক ছিলেন সাকিব। এশিয়া কাপের সেরা একাদশে অনুমিতভাবেই তাই থাকছেন বাংলাদেশের এ কাপ্তান।
- হার্দিক পান্ডিয়া (ভারত)
গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়ে গেলেও সে ম্যাচে ৮৭ রানের ইনিংস খেলে ভারতকে লড়াই করার মতো সংগ্রহ এনে দিয়েছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া।
পান্ডিয়া অবশ্য এর পরে টুর্নামেন্টে আর একটি ইনিংসেই ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছেন। তবে বল হাতে প্রতিপক্ষকে সিংহভাগ সময়েই অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন তিনি। ফাইনাল ম্যাচেও ৩ রানে ৩ উইকেট নেন পান্ডিয়া।
- দুনিথ ওয়েলেলাগে (শ্রীলঙ্কা)
পুরো টুর্নামেন্টেই বল হাতে নিজের রহস্যময় স্পিন ঘূর্ণিতে মুগ্ধ করেছিলেন দুনিথ ওয়েলেলাগে। ৫ ম্যাচে নিয়েছেন ১০ টি উইকেট। এ ছাড়া টেলএন্ডারে দারুণ ব্যাটিং সক্ষমতার প্রমাণ দেন এ স্পিনার। ২৮.৬৬ গড়ে করেছেন ৮৬ রান।
- তাসকিন আহমেদ (বাংলাদেশ)
সুপার ফোরে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচে বিশ্রামে ছিলেন তাসকিন। তবে পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের বোলিং লাইন আপকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনিই। ৪ ম্যাচে নিয়েছেন ৯ টি উইকেট। যা টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
- কুলদ্বীপ যাদব (ভারত)
এবারের এশিয়া কাপের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫ উইকেটসহ পুরো টুর্নামেন্টে ৯ উইকেট নেওয়া কুলদ্বীপ যাদব তাই কোনো সন্দেহ ছাড়াই থাকছেন একাদশে।
- মোহাম্মদ সিরাজ (ভারত)
ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে বলতে গেলে একাই ধসিয়ে দিয়েছেন সিরাজ। লঙ্কানদের ৫০ রানে অলআউট করার পথে সিরাজ একাই নেন ২১ রানে ৬ উইকেট।
এ ছাড়া সুপার ফোরে ওঠার ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন এ পেসার। সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ১০ উইকেট নেওয়া এ পেসার থাকছেন খেলা ৭১ এর একাদশে।
- মোহাম্মদ রিজওয়ান (দ্বাদশ ব্যক্তি)
সুপার ফোরে পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ রান এসেছে রিজওয়ানের ব্যাট থেকে। ২ ফিফটি সহ পুরো টুর্নামেন্টে করেছেন ১৯৫ রান। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭৩ বলে ৮৬ রানের দারুণ এক ইনিংস খেললেও ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত হেরে যায় পাকিস্তান।
পুরো এশিয়া কাপে রিজওয়ান যেমন ব্যাটিং করেছেন, তাতে সেরা একাদশে জায়গা পেতেই পারতেন তিনি। তবে খেলা ৭১ এর দৃষ্টিতে রিজার্ভ ক্রিকেটার হিসেবেই থাকছেন তিনি।