দূর্গ জয়ের উত্তাপ

প্রায় সত্তর হাজার সমর্থক দিয়ে মাঠ একেবারে কানায় কানায় পূর্ণ। গগন বিদারী চিৎকার, সুর করে স্লোগান সবকিছুই মিলিয়ে ম্যানচেস্টার সিটির খেলোয়াড়দের জীবন প্রায় ওষ্ঠাগত। স্নায়ুচাপের পারদটাও তখন আকাশ ছুঁয়েছে। ব্যবধান তো কেবল এক গোলের। নিমিষেই সে ব্যবধান হাওয়া হয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তার উপর অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের একের পর এক ফাউল। মাদ্রিদের ওয়ান্ডা মেট্রোপোলিটানো রীতিমত নরক হয়ে উঠেছিল পেপ গার্দিওয়ালার শীর্ষ্যদের জন্যে।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ আতিথিয়েতা দিয়েছিল ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিকে। মাঠের বাইরেই দুইদলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিল অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ সমর্থকেরা। ধোয়াচ্ছন্ন এক পরিবেশের মধ্যদিয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেছিল দু’দল। সে উষ্ণতা ছড়িয়েছে পুরো নব্বই মিনিট। না ঠিক নব্বই নয় আরও বেশি। কেননা নয় মিনিট অতিরিক্ত খেলা হয়েছে দ্বিতীয় অর্ধের ইনজুরি টাইমে।

বুঝুন তবে ঠিক কতটা উত্তেজনা ছড়িয়ে ছিল খেলোয়াড়দের মাঝে। তবে এই ম্যাচের আগে দুই দলের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস আর মানসিকতায় ছিল বিস্তর ফাঁরাক।

প্রথমমত ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে ম্যাচ শুরু করেছিল সিটি। তাছাড়া তাঁর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষস্থান নিজের দখলে রেখেছে। অন্যদিকে লা লিগার চার নম্বরের অবস্থান অ্যাতলেটিকোর। সে স্থানটাও বেদখল হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সেদিক থেকে চিন্তা করলে আগামী আসরের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলা নিয়েও হতে পারে সংশয়।

তবে ডাগআউটে যখন ডিয়েগো সিমিওনে রয়েছে তখন নিশ্চয় হারার আগেই হেরে যেতে নামেনি জোয়াও ফেলিক্স, ইয়ান ওবলাক, আন্তোনিও গ্রিজম্যানরা। অন্যদিকে পেপ গার্দিওয়ালা ভরসা জুগিয়েছেন রিয়াদ মাহরেজ, কেভিন ডি ব্রুইন ও ফিল ফোডেনদের। তাই হয়ত প্রায় লাখের কাছাকাছি দর্শকদের মাঝে থেকেও ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে সিটি। তবে ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোতে ম্যাচ যে হয়েছে সমানে সমান তা নিয়ে নিশ্চয়ই কেউ তর্কে জড়াবে না। বল দখলে সিটি এগিয়ে থাকলেও শট অন টার্গেটে এগিয়ে ছিল অ্যাতলেটিকো।

অ্যাতলেটিকো যখন হন্যে হয়ে একটি গোলের সন্ধান করে গেছে পুরো ম্যাচ জুড়েই তখন সিটি চেষ্টা চালিয়েছে আরেকটিবার বল জালে জড়িয়ে স্বস্তির একটা জায়গায় পৌঁছানো যাক। তবে আফসোস দুই দলের কেউই গোল পায়নি। 0-0 ব্যবধানে শেষ হয়েছিল ম্যাচ। তবে ম্যাচের উত্তাপ আর, মাঠে থাকা প্রত্যেকটি মানুষের রক্তচাপ যেন বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। এর প্রমাণ মিলেছে ম্যাচের একেবারে অন্তিম মুহূর্তে। দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে মাঠে বসেই। শেষের দিকে মিনিট তের কি পনেরো এতটুকুন সময়ের মধ্যে রেফারি বারে বারে হাত দিয়েছেন তাঁর পকেটে।

সাত দফা কার্ড দেখিয়েছেন দুই দলের খেলোয়াড়দের। হলুদ কার্ডের আধিক্য থাকলেও, রেডকার্ড জুটেছিল অ্যাতলেটিকোর ডিফেন্ডার ফিলিপের কপালে। ম্যাচের শুরু থেকে আগ্রাসী মনোভাবে থাকা ফিলিপে শেষ দিকে ফোডেনকে সুন্দর এবং ফুটবলের আইনে অপরাধ নয় এমন এক ট্যাকেল করেন। তবে তিনি ট্যাকেল করেই অযথা লাথি দিয়ে বসেন ফোডেনকে। ব্যাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোর সবুজ গালিচা। বাকবিতণ্ডা থেকে হাতাহাতি। সবই হয়েছে এদিন।

আসলে ঘরের মাঠে এত দর্শক-সমর্থকদের মাঝে কেই বা হারতে চায় বলুন। অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদও চায়নি। তাঁদের জেতার নেশায় বুদ হয়ে নিজেদের টেম্পারর্মেন্ট হারিয়েছেন। সিটির খেলোয়াড়েরাও যে তাঁদের টেম্পারমেন্ট ধরে রাখতে পেরেছিলেন তা নয়। এদিন ফুটবল ছাপিয়ে মাঠের তর্কে ছেড়ে গেছে সংবাদমাধ্যম। ম্যাচ শেষে মাদ্রিদ শহরের পুলিশকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল খেলোয়াড়দেরকে নতুন করে আর ঝামেলায় জড়ানো ঠেকাতে।

তবে পরিশেষে ফুটবলের প্রতিটা স্তরে যে আবেগে রাজত্ব তাঁর আরও একবার সাক্ষী হল গোটা বিশ্ব। ট্যাকটিস, ফরমেশন, নামিদামি খেলোয়াড়, তাঁদের ফর্ম এসব কিছু বড্ড ফিঁকে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link