কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে এবারের বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্স। নিজের শেষ বিশ্বকাপে শিরোপা জিততে মুখিয়ে আছেন লিওনেল মেসি। দুরন্ত ফর্মে থাকা মেসি পাঁচ গোলের পাশাপাশি করেছেন তিনটি অ্যাসিস্টও। ফাইনালে তাঁকে আটকানোর পরিকল্পনা করতে তাই বেগ পোহাতে হচ্ছে ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশমের।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে দুই অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার পল পগবা এবং এনগোলো কান্তের ইনজুরিতে ফ্রান্সের বিদায় দেখে নিয়েছিলেন অনেকে। এই দুই তারকার অনুপস্থিতি ফ্রান্সকে মানসিকভাবেও দুর্বল করে দিয়েছিল অনেকটাই।
কিন্তু, বিশ্বকাপ শুরু হতেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে দ্রুতই, দুই তারকার অভাব টের পেতে দেননি তরুণ অরেলিয়ের চুয়ামেনি। নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন ফরাসি মিডফিল্ডের নেতা হিসেবে। বুঝিয়ে দিয়েছেন এমনি এমনি তাঁর উপর ১০০ মিলিয়ন বিনিয়োগ করেনি রিয়াল মাদ্রিদ।
সেমিফাইনালে মরক্কোর বিপক্ষেও ছিলেন আপন মহিমায় উজ্জ্বল। বল রিকোভারিতে তাঁকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি কেউই। সর্বোচ্চ ১১ বার প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়েছেন। কেবল প্রতিপক্ষের আক্রমণ নস্যাৎ করা নয়, পুরো ফ্রান্সের মিডফিল্ড নিয়ন্ত্রণ করেছেন একাই। ম্যাচের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ ফাইনাল থার্ডে পাস বাড়িয়েছেন।
সেমিফাইনালে ইনজুরির কারণে মাঠে ছিলেন না আন্দ্রিয়ান রাবিওট। ফলে শুয়ামেনি জুটি বেঁধেছিলেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ইউসুফ ফোফানার সাথে। ফাইনালে ইনজুরি সারিয়ে একাদশে ফেরার কথা অভিজ্ঞ রাবিওটের। এই দুজনের মিডফিল্ডের সামনে ফ্রি রোলে খেলবেন আতোয়ানে গ্রিজম্যান।
দেশম জানেন মেসিকে জায়গা করে দিলে তিনি কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন। প্রতিপক্ষের ডিফেন্স একাই ধ্বংস করে দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে তাঁর। সেজন্যেই তাঁর তুরুপের তাস শুয়ামেনি, তাঁর ওয়ার্করেট এবং শারীরিক শক্তি বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে মেসির জন্য।
মেসিকে পুরোপুরি থামানো প্রায় অসম্ভব, সেকারণে এই তরুণের দায়িত্ব থাকবে মেসি যেন ফাঁকা জায়গা না পান মিডফিল্ডে। বছর তেইশের এই তরুণ যদি ফাইনালে মেসিকে সামলানোর দায়িত্বটা ঠিকমতো সামলাতে পারেন, তবে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয়ের স্বপ্নটা দেখতেই পারে ফ্রান্স।
মরক্কোর বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের পর এই মিডফিল্ডারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল মেসিকে আটকানোর ব্যাপারে। সংবাদ সম্মেলনে চুয়ামেনি বলেন, ‘আমাদের ঠিকভাবে ডিফেন্স করতে হবে। এটা বিশ্বকাপ ফাইনাল, মেসি ছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন দুর্দান্ত ফুটবলার আছে আর্জেন্টিনা দলে। আমাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে, ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছি আমরা। দেখা যাক ফাইনালে কি ঘটে।’
পরিসংখ্যানই জানিয়ে দেয় নিজের কাজে কতটা দক্ষ এই মিডফিল্ডার। তিনিই একমাত্র ফুটবলার যিনি ফ্রান্সের হয়ে প্রতিটি ম্যাচে মাঠে নেমেছেন। এমনকি তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ফ্রান্সের বেশ কয়েকজনকে তারকাকে বিশ্রাম দেয়া হলেও শুয়ামেনি বিশ্রাম পাননি। ডেড রাবার সেই ম্যাচে হারের পর ভেঙে পড়েছিলেন এই তরুণ। খেলার প্রতি আত্ননিবেদন বুঝিয়ে দিতে সেই ম্যাচটাই যথেষ্ট।
ফ্রান্সের ফুটবলারদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশি ১২ বার প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়েছেন। কেবল গোল ঠেকানো নয়, বক্সের বাইরে থেকে দারুণ সব দূরপাল্লার শটে গোল করতেও পটু শুয়ামেনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ কোয়ার্টার ফাইনালে গোল করে ফ্রান্সকে এগিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই। বাইশ বছরের এই তরুণই ফ্রান্সের স্কোয়াডের সবচেয়ে তরুণ ফুটবলার।
পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন এই তরুণ। ফাইনালে মেসিকে আটকাতে পারলেই নিজের প্রথম বিশ্বকাপটা স্বপ্নের মতো কাটবে শুয়ামেনির।