ভারতীয় সমর্থকদের গগণবিদারী চিৎকারও টলাতে পারলো না অস্ট্রেলিয়াকে। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামকে রীতিমত স্তব্ধ করে দিয়ে ৬ষ্ঠ বারের মতো শিরোপা উৎসবে ভাসলো অজি শিবির।
অথচ প্যাট কামিন্সের অস্ট্রেলিয়া এবার বিশ্বকাপের শুরুটাই করেছিল টানা দুই হার দিয়ে। কিন্তু এরপরই ঘুরে দাঁড়ায় তাঁরা। টানা নয় ম্যাচের জয়রথে বিশ্বকাপ শিরোপাটা উঠেছে তাদেরই হাতে। অপ্রতিরোধ্য ভারতকে ঠিক কোন কৌশলে বধ করলো অস্ট্রেলিয়া?
ভারত ম্যাচ হেরেছে ব্যাটিং ইউনিটের ব্যর্থতায়। তবে সেটি যতটা তাদের ব্যর্থতা, তার চেয়ে বেশি সফলতা অস্ট্রেলিয়ার বোলিং ও ফিল্ডিং ইউনিটের। আগ্রাসী ব্যাটিং রোহিত তখন রীতিমত আতঙ্কের এক নাম হয়ে উঠছিল। কিন্তু ট্রাভিস হেডের দুর্দান্ত ক্যাচে মোমেন্টাম ঘুরে যায় তখনই। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে ফেরে। আর ভারতের আগ্রাসনের বাতি নিভে যেতে শুরু করে।
রোহিত ফিরে যাওয়ার পরই মূলত শুরুর হতশ্রী বোলিংয়ে থেকে দারুণ ভাবে ফিরে আসে প্যাট কামিন্সরা। আগেই জানা গিয়েছিল, উইকেটে বল আসবে থেমে থেমে। আর সেই রণকৌশল অবলম্বন করেই বোলিং করে গিয়েছেন কামিন্স, হ্যাজলউডরা। স্লোয়ার দিয়েছেন। সহজাত বোলিং গতি কমিয়ে এনেছেন কন্ডিশন বিবেচনায়।
আর তাতেই ফল পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ভারত বাউন্ডারি বের করতে পারেনি। মন্থর গতির ব্যাটিংয়ে ম্যাচও ঘুরে গেছে সেখানেই। টানা ৯৭ বল বাউন্ডারিহীন থাকে রোহিত-লোকেশ জুটি। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, কোহলি ফিরে যাওয়ার পর এ দিন ব্যাট হাতে ৬-এ উঠে এসেছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। উদ্দেশ্য ছিল একটিই, উইকেট ধরে রেখে শুধু ইনিংসটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
কিন্তু সেই ভাবনায় কাল হয়ে দাড়িয়েছিল তাদের ইনিংসে। ভারতের অতিরক্ষণাত্বক ব্যাটিংয়ে সুরিয়াকুমার যাদব যখন ক্রিজে আসেন, ততক্ষণে অজি বোলিং অ্যাটাক ঘিরে ধরেছে মরণ কামড় দিতে। এরপর ভারতের ইনিংসে রান আর এগোয় নি। ২৪০ রানের থমকে যায় তাদের ইনিংস।
অস্ট্রেলিয়ার ফাইনাল জয়ের পথে এর পরের গল্পটা ছিল শুধুই ট্রাভিস হেডময়। ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে থমকে যেতে বসেছিল অজিদের জয়যাত্রা। তবে হেডের ব্যাটিংয়েই ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। অবশ্য সে পথযাত্রায় মার্নাস লাবুশানেরও অবদান কম নয়। তাঁর সময়োপযোগী রক্ষণাত্বক ব্যাটিংয়েই থেমে গিয়েছিল ভারতীয় পেসারদের সব আগ্রাসন। একই সাথে, কুলদ্বীপ যাদব, জাদেজার স্পিনঘূর্ণিও আর বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি হেড-লাবুশানে জুটিতে।
টানা দশ ম্যাচ জয়ে অপ্রতিরোধ্য ভারতের জয়রথ থেমেছে ফাইনালের মঞ্চে এসে। এ দিনে বিশ্বকাপজয়ী প্রথম দুই ম্যাচে হারের শিক্ষা নিয়েই পরবর্তীতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। হয়তো সেই হারের শিক্ষাটাও মাঝে মধ্যে হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভারত হারেনি কোনো ম্যাচই, কিন্তু হেরেছে ফাইনাল। আর তাতেই রানার্সআপের তিক্ততা সঙ্গী হয়েছে রোহিত-বিরাটের চাহনিতে। অন্যদিকে প্যাটিরা হেসেছেন বিশ্বজয়ের হাসি।