বাইশ গজের ক্রিকেট বদলে গেছে বহু আগেই। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দৌরাত্ম্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এখন বলতে গেলে মৃতপ্রায়। সেই ধারাবাহিকতায় এই সময়ে নিলামের টেবিলও যেন নতুন এক লড়াইয়ের নাম। দর কষাকষির উত্তেজক লড়াইয়ে চোখ থাকে সবার। আর মঞ্চটা যখন আইপিএল, তখন তো কোনো কথাই নেই। বিশ্বের সেরা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগটার নতুন দামি ক্রিকেটার কে হবেন, তা নিয়ে কৌতূহল থাকে অনেকেরই।
আইপিএলে খেলা এখন সব ক্রিকেটারের স্বপ্ন। অনেকে তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দূরে ঠেলে দিয়েই, চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকেন আইপিএল খেলার জন্য। তবে অনেক দিন ধরেই স্রোতের বিপরীতে ছিলেন অজি পেসার মিশেল স্টার্ক।
২০১৪ ও ২০১৫ সালে খেলেছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে। এরপর থেকেই একটা দীর্ঘ বিরতি। ৮ বছর আইপিএল না খেলেই কাটিয়েছেন অজি এই পেসার। এমন না সুযোগ পাননি। একাধিকবার সুযোগ পেয়েছেন৷ ২০১৮ সালে তো কলকাতা নাইট রাইডার্স তাঁকে দলের ভিড়িয়েছিল। কিন্তু ইনজুরি শঙ্কায় আর সেবার খেলেননি। মূলত জাতীয় দলের জন্য নিজের সেরাটা দেওয়ার লক্ষ্যেই আইপিএল খেলা থেকে বিরতিতে ছিলেন।
তবে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন বলে তো একটা ব্যাপার আছে। সেটিই এবার ঘটালেন স্টার্ক। তিনি ফিরলেন ইতিহাস গড়ে। আইপিএলের নিলামের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে তাঁকে দলে ভিড়িয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স।
এবারের আইপিএল নিলাৃে স্টার্কের ভিত্তিমূল্য ছিল ২ কোটি রূপি। শুরুতে তাঁকে নিয়ে দর কষাকষি শুরু করেছিল দিল্লী ক্যাপিটালস ও মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। ৯ কোটি ৬০ লাখ রুপি পর্যন্ত এই দুই দলের মধ্যেই লড়াই এগিয়েছিল। কিন্তু এরপরই নিলামের টেবিলে যোগ দেয় কলকাতা। স্টার্ককে নিয়ে বাকি সময়টা কলকাতা ও গুজরাটের মধ্যেই এ লড়াই চলে। তবে শেষমেশ কলকাতার দরে হার মানে গুজরাট।
এর ঘন্টা দুয়েক আগের দৃশ্যপট। আইপিএল নিলামল নতুন ইতিহাস গড়েছিলেন স্টার্কের অস্ট্রেলিয়ান সতীর্থ প্যাট কামিন্স। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী এ অধিনায়ককে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ দলে ভেড়ায় ২০ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে।
জাতীয় দলের প্রতি মনোযোগী হতে আইপিএলের সর্বশেষ আসরটি খেলেননিগত কামিন্স। এতে অবশ্য আইপিএল না খেলার আক্ষেপে পুড়তে হয়নি অজি এ ক্রিকেটারকে। চলতি বছরে রীতিমত সাফল্যের সাগরে ডুব দিয়েছেন তিনি৷ তাঁর নেতৃত্বে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও বিশ্বকাপ— দুটোই শিরোপাই নিজেদের করে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
দেশের হয়ে এমন সফলতার গল্প লেখার পর আবার যখন তিনি আইপিএলে ফিরলেন, তখন রাজকীয়ভাবেই প্রত্যাবর্তন হলো তাঁর। স্টার্কের মতোই কামিন্সের ভিত্তিমূল্য ছিল ২ কোটি রুপি। তবে চেন্নাই, মুম্বাই আর হায়দ্রাবাদের দর কষাকষির ত্রিমুখী লড়াইয়ে ২০ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে তাঁকে শেষ পর্যন্ত বাগিয়ে নেয় হায়দ্রাবাদ।
এবারের বিশ্বকাপের সেমি ও ফাইনাল— দুই ম্যাচেই নায়ক বনে আবির্ভূত হয়েছিলেন ট্রাভিস হেড। সবশেষ আসরে অবিক্রীত থাকলেও বিশ্বকাপ পারফর্মেন্সের কারণে যে এবার দল পাবেন, তা অনুমেয়ই ছিল। হয়েছেও তাই। অজি এ ওপেনারকে ৬ কোটি ৮০ লাখ রুপিতে দলে ভিড়িয়েছে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। যে দলেই আবার রয়েছে আরেক অজি ক্রিকেটার কামিন্স।
এবারের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন হলেও ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত অর্জন সেভাবে শীর্ষ পর্যায়ে ছিল না৷ তবে একটা শিরোপা জয়ের জন্য প্রয়োজন টিম পারফর্মেন্স। আর সেই প্রভাবেই শিরোপা জিতেছে অস্ট্রেলিয়া৷ আইপিএলের দলগুলোও একই পন্থায় এবার হেঁটেছে।
আর সে কারণেই এবারের নিলামে অজি ক্রিকেটারদের দিকে আগ্রহ ছিল দলগুলোর। কারণ বিশ্বজয়ের মধুর অভিজ্ঞতা সবার হয় না। সেই অভিজ্ঞতা আইপিএল শিরোপা জয়ের পথেও হতে পারে পাথেয়। হয়তো এমন ভাবনাতেই এবারের আইপিএলে অজি ক্রিকেটারদের ভেড়াতে রীতিমতো কাড়াকাড়ি হয়েছে দলগুলোর মধ্যে।