১২৫৮ দিন,৪১ মাস – মানে কাগজে কলমের হিসাবে প্রায় চার বছরের কাছাকাছি। না হলেও অন্তত সাড়ে তিন বছর তো বটেই। এই সময়টাতে ওয়ানডে ব্যাটসম্যানদের শীর্ষস্থানটা আনুষ্ঠানিক ভাবে ধরে রেখেছিলেন বিরাট কোহলি।
কিন্তু, এবার তিনি সিংহাসন থেকে নামতে বাধ্য হলেন। ভারতীয় অধিনায়ককে চূড়া থেকে নামিয়ে বসলেন এবার ক্রিকেটের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল পাকিস্তানের অধিনায়ক। তিনি হলেন বাবর আজম। আধুনিক ব্যাটিংয়ের নতুন বাদশাহ। বাদশাহকে স্বাগতম জানাবো নাকি বাবর আজমের যুগে সবাইকে স্বাগতম জানাবো ঠিক বোধগম্য নয়।
পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের জন্য ৫০ ওভারের ক্রিকেটে র্যাংকিংয়ের শীর্ষে ওঠাটা নিয়মিত কোনো ঘটনা নয়। আবর আজমের আগে মাত্র তিনজন ব্যাটসম্যান আইসিসির বিবেচনায় এক নম্বর হয়েছেন ওয়ানডেতে।
তারা হলেন জহির আব্বাস, জাভেদ মিয়াঁদাদ ও মোহাম্মদ ইউসুফ। এবার তাঁর সাথে যোগ হলেন বাবর আজম। প্রথম তিন জন ব্যাটসম্যানশিপে যে অবস্থানে নিজেদের নিয়ে গিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করতে পেরেছেন – বাবর আজমও আছেন সেই পথেই।
১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে প্রথম পাকিস্তানি ওয়ানডে ব্যাটসম্যান হিসেবে আইসিসি র্যাংকিংয়ের শীর্ষে জায়গা পান জহির আব্বাস। এরপর জাভেদ মিয়াঁদাদ একই জায়গাটা নিজের করেন ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে। এরপর মোহাম্মদ ইউসুফ শীর্ষে ওঠেন ২০০৩ সালে।
আপ্লুত বাবর বলেন, ‘এটা আমার ক্যারিয়ারের আরেকটি মাইলস্টোন। এখন আমাকে আরো বেশি পরিশ্রম করে যেতে হবে যাতে করে আমি রান করার ধরাবাহিকতা ধরে রেখে লম্বা সময় র্যাংকিংয়ে ওপর দিকে থাকতে পারি। এটা আমার জন্য খুব সম্মান ও গর্বের ব্যাপার যে আমি জহির আব্বাস, জাভেদ মিয়াঁদাদ ও মোহাম্মদ ইউসুফ – যারা পাকিস্তান ক্রিকেটের জ্বলজ্বলে তারা – তাদের সাথে একই কাতারে জায়গা পেয়েছি।’
বাবরের এই উত্থান পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্যও মঙ্গলজনক। কারণ, অনেকদিন হল পাকিস্তান ক্রিকেট হারিয়েছে তার হারানো সুদিন। মাঝেমধ্যে পারফরম্যান্সের ঝলক দেখা গেলেও সাফল্যের কোনো ধারাবাহিকতা নেই। বাবরের হাত ধরে এবার পাকিস্তান ক্রিকেট উঠে দাঁড়ালেই হয়। দলের কান্ডারিও যে তিনিই।
বাবরের লক্ষ্য এবার টেস্টের শীর্ষে ওঠা। তিনি বলেন, ‘আমি আগেই টি-টোয়েন্টির শীর্ষে উঠেছি। আর এখন আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য হল টেস্টের শীর্ষে ওঠা। আমি মনে করি টেস্টেই একজন ব্যাটসম্যানের সামর্থ্য, যোগ্যতা ও দক্ষতার চূড়ান্ত মাত্রা দেখানো যায়।’
বাবর আজম অনেকদিন হল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রথম সারির ব্যাটসম্যান হিসেবে আলোচিত হয়ে আসছিলেন। বলা হচ্ছিল, তাঁর মত নান্দনিক ও স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান আধুনিক ক্রিকেটেই এখন বিরল।
তবে, কোনো ভাবেই তিনি ‘ফ্যাবুলাস ফোর’-এ জায়গা পাচ্ছিলেন না। যে জায়গাটায় আছেন সময়ের সেরা চার ব্যাটসম্যান – ভারতের বিরাট কোহলি, অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথ, নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন ও ইংল্যান্ডের জো রুট। মাঝে মাঝে দাবি উঠছিল বটে, তবে সেটা পাকাপোক্ত হচ্ছিল না। তবে, ইদানিং বাবর নিজের মানটা এমন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন যেখানে সেদিন হয়তো খুব দূরে নয় – যখন তিনি এই চারজনকে ছাড়িয়ে চলে আসবেন সবার সামনে।
সেই প্রক্রিয়ারই শুরু হল ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে উত্থানের মধ্য দিয়ে। এবার সাদা পোশাকের পালা। আর বাবর তো বলেই দিয়েছেন – একজন ব্যাটসম্যানের সত্যিকারের চরিত্র বোঝা যায় টেস্ট ক্রিকেটে। সিট বেল্ট বেঁধে বসুন। আপনারা চলে এসেছেন ব্যাটিং বাদশাহ বাবর আজমের যুগে।