শেষ কয়েক বছর ধরেই তাঁর ব্যাটে আগুন জ্বলছে। যখন যেখানে খেলছেন রান করেছেন। নিজেকে বিশ্বের সেরা ব্যাটারদের একজনে পরিণত করেছেন। মাঠে, মাঠের বাইরে, চায়ের আড্ডায়, ক্রিকেট দুনিয়ায় কিংবা পত্রিকার পাতায় সবজায়গায় শুধু তাঁর বন্দনা। সবার প্রশংসার জোয়ারে ভেসেছেন বাবর আজম।
রানের পর রান করে যাওয়ার জন্য যে বাবর আজম সবসময় আলোচনায় থেকেছেন তিনিই এবার আলোচনায় রান না পেয়ে। বাবর আজম রান পাচ্ছেন না বলে সমালোচনাও হচ্ছে। এটা আসলে নতুন, বাবর আজমের জন্য, ক্রিকেট দুনিয়ার জন্যও।
তবুও এই সত্য অস্বীকার করা যায় না। বাবার আজম সব সমালোচনার উর্ধ্বে ছিলেন সেটাও না। তাঁকে নিয়েও অনেক সমালোচনা ছিল। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর স্ট্রাইকরেট, ইনটেন্ট কিংবা তাঁর কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এসব প্রশ্নের পিছনে কারণও ছিল।
তবে বাবর আজম রান পাচ্ছেন না বলে সমালোচিত হচ্ছেন সেটা অবাক করে সবাইকে। অবাক করার মত ব্যাপারই ঘটছে বাবর আজমের সাথে। বিশেষ করে এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত পুরোপুরিই ব্যর্থ তিনি।
এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর ২৫। অর্থাৎ একটা অর্ধশতকও আসেনি পাকিস্তানের এই ওপেনারের ব্যাট থেকে। পাঁচ ম্যাচ খেলে সর্বসাকুল্যে করেছেন ৩৯ রান। এমনকি শেষ সাত ইনিংস আগে সর্বশেষ অর্ধশতকের দেখা পেয়েছিলেন এই ব্যাটার।
ব্যাট হাতে বাবর আজমকে এমন ভুগতে দেখাটাও নতুন। যেমন বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচেও এবাদতের বলে দুইবার ক্রস ব্যাট চালিয়েছেন। আউট হবার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল। আবার নাসুম আহমেদের বিপক্ষে দারুণ ভুগেছেন এই ব্যাটার।
বাবরের ব্যাটে যে ছন্দ, যে নান্দনিকতা, যে এলিগেন্সের দেখা মিলতো সেটাও দেখাও যাচ্ছে না এখন। একজন ক্রিকেটপ্রেমীর হিসেবে বোধহয় এটাই সবচেয়ে বড় খারাপ লাগা। বিশ্বের সেরা ব্যাটার নিজের চেনা ছন্দে নেই। এই বাবর আজমও তো নতুন।
তবে আবার একটা সুখবরও আছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৫ রানের ছোট ইনিংস খেলেছেন। তবুও এই ইনিংসটায় ব্যাট হাতে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত ছিলেন বাবর। বিশ্বকাপের অন্য ম্যাচ গুলোয় তিনি তাঁর ৬৬ শতাংশ শট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খেলেছেন। আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটায় সেটা ছিল মাত্র ৫৩ শতাংশ। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ শতাংশ।
হয়তো বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে বাইশ গজে একটু বেশি সময় পেয়েছেন বলেই নিয়ন্ত্রনটা বাড়াতে পেরেছেন বাবর আজম।
পাকিস্তানের হয়ে ওপেন করেছেন এমন ৩৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাবর আজম সিঙ্গেল ডিজিটের স্কোরে আউট হয়েছেন প্রতি পাঁচ ইনিংসে একবার। তবে গতবছর বিশ্বকাপের পর চিত্রটা পুরোপুরি পালটে গেছে। শেষ ৩০ ইনিংসে ১৪ বারই সিঙ্গেল ডিজিটে আউট হয়েছেন। আর শেষ পাঁচ ইনিংসেই সেটা হয়েছে চারবার।
তবুও এই সময়টায় তিনি বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। এই সময়ে তাঁর ঝুলিতে আছে একটি সেঞ্চুরি ও পাঁচটি হাফ সেঞ্চুরি। অর্থাৎ এই ফরম্যাটে বিশ্বের সব ব্যাটসম্যানই এমন পারফর্ম করছেন। বিশেষ করে ওপেনাররা আগের থেকে বেশি সিঙ্গেল ডিজিটের স্কোরে আউট হচ্ছেন।
আর এই ব্যাপারটা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত করছে ওপেনারদেরই। হয়তো ইনিংসের শুরুতে দ্রুত রান তোলার চিন্তা থেকেই এমন করছেন ওপেনাররা। তবে এসব আলোচনাই ব্যর্থ প্রমাণ করতে পারেন শুধু বাবর আজমই। সেমিফাইনালের বড় মঞ্চ তাঁর সামনে। রানে ফেরার জন্য, রাজত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য এরচেয়ে বড় সুযোগ আর কী ইবা হতে পারে। তবে, না ফিরলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারটা নিয়ে হয়ত তাকে ভাবতে হবে নতুন করে।