সোজাসাপ্টা সমীকরণ। জিতলেই মিলবে ফাইনালের টিকিট। শ্রীলঙ্কা আর পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচটি তাই ছিল অলিখিত এক সেমিফাইনাল। এমন এক ম্যাচে স্বাভাবিকভাবেই বাড়তি দায়িত্ব নিতে হয় অধিনায়কদের। শুধু দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ক্ষান্ত হলেই চলবে কেন? ক্রিকেটার হিসেবেও পারফরমেন্সে থাকা চাই সবার আগে।
তবে এদিন যেন আরও একবার চাপ সইতে পারলেন না পাকিস্তানের অধিনায়ক। দলে এসেছে বেশকিছু পরিবর্তন। কারণটা অবশ্য ইনজুরি। সব পরিবর্তনের মাঝেও বাবর অনড়। সেটাই স্বাভাবিক। তিনি তো অধিনায়ক। এদিন টসে জিতে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করবার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান।
এবারের এশিয়া কাপে প্রেমাদাসয় এখন অবধি দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করা দল হেরেছে সব ম্যাচ। মনস্তাত্ত্বিকভাবে সেটাই সম্ভবত প্রভাবিত করেছে বাবর আজমকে। তবে আগে ব্যাটিং করবার সিদ্ধান্ত যেন মোটেই ফলপ্রসূ হলো না। ওপেনিংয়ে এসেছে পরিবর্তন। ইমাম-উল হকের জায়গায় যুক্ত হয়েছে আবদুল্লাহ শফিক। তবে উদ্বোধনে থিতু থাকা ফখর জামান ফিরে গেলেন দ্রুতই।
এরপরই বাইশ গজে সম্রাটের ভঙ্গিমায় হাজির হলেন বাবর আজম। হাল ধরতে এলেন। দলের প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দিতে এলেন। শুরুর ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠতে শুরু করল পাকিস্তান। শফিক আর বাবর জুটি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যেতে থাকে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশার পাল হাওয়ার উড়তে থাকে। কিন্তু হুট করেই আবার ছন্দপতন। তরুণ দুনিথ ওয়েল্লালাগে এবার পাকিস্তানের পরিকল্পনার ছকে পানি ঢেলে দিলেন। অধিনায়ক বাবরকে বোকা বানালেন নিজের স্পিন ঘূর্ণিতে। বলের গতিপথ আন্দাজ করতে পারেননি তিনি। একটু সামনে এগিয়ে ওয়েল্লালাগের বল ছোঁয়ার প্রচেষ্টা করেন বাবর। তবে বলের গতিপথ বদলে যায় খানিকটা।
কুশল মেন্ডিস কোন রকম ভুল করেননি। দস্তানায় বল জমা হওয়া মাত্রই উইকেটের লাল বাতি জ্বালিয়ে দেন। সোজা প্যাভিলনের পথ ধরতে হয় বাবর আজমকে। আবারও মহা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাবর আজম প্রত্যাশার চাপ সইতে পারলেন না। দলকে নেতৃত্ব দিতে পারলেন না ব্যাট হাতে।
এটা যেন নিয়মিত এক চিত্রে পরিণত হয়েছে। এদিন কোনমতে নিজের ইনিংসের শুরুটা ঠিকঠাক করেছিলেন বাবর। যেই মাত্র ৩৪ বলে ২৯ রান অবধি পৌঁছেছেন, তখনই যেন চাপটা ব্যস্তানুপাতিক হারে বাড়তে থাকে বাবরের মস্তিষ্কে। আর ঠিক তখনই মনোযোগের ঘাটতি। করে বসেন ভুল। উল্টো দলকে ফেলে দিলেন ভীষণ চাপে। অথচ তারই উচিৎ ছিল দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেওয়া।
ড্রাইভিং সিটে বসে পাকিস্তানকে একটা লড়াই করবার মত পুঁজি এনে দেওয়ার। তবে বাবর আগের দিনের মতই ব্যর্থ। ভারতের বিপক্ষেও একইভাবে ব্যর্থ হয়েছেন দলকে স্বস্তি এনে দিতে। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাবর যেন নিজের ছায়ায় পরিণত হন প্রতিনিয়ত।
এই ধারা থেকে বাবরের বেড়িয়ে আসা প্রয়োজন। পাকিস্তান দলকে নেতৃত্ব দিতে হলে তাকে তো পারফরম করতে হবে ব্যাট হাতে। প্রয়োজনীয় ম্যাচ গুলোতেই যখন বাবর থাকবেন নিষ্প্রভ, তখন সমস্ত পরিসংখ্যান তো হয়ে যাবে রীতিমত শুভঙ্করের ফাঁকি। তেমনটি হোক নিশ্চয়ই বাবর তা চান না।