আগ্রাসনহীন আহত সম্রাট

গোটা টুর্নামেন্ট জুড়েই দাপুটে ভাব। ফেভারিটের তকমা গায়ে জড়িয়েই পাকিস্তান হাজির হয়েছিল আরব আমিরাতের মরুভূমিতে। শুরুটায় হোঁচট, তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষকালে তীরে এসে ডুবল তরী। কি এক অদ্ভুত এশিয়া কাপ যাত্রা! এই যাত্রার পেছনের কারণটা কি হতে পারে সে নিয়ে চিন্তার যেন শেষ নেই।

তবে একটা সমাধান অবশ্য খুঁজে পেয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আকরাম। অধিনায়ক বাবর আজমের মধ্যে আগ্রাসনের কমতি দেখেছেন অভিজ্ঞতায় ঠাঁসা ওয়াসিম। পাকিস্তানের কাছে এমন ভরাডুবিও একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল সবার কাছেই। কেননা টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে শ্রীলঙ্কা ছিল না কোন রকমের আলোচনায়। বরং সেদিক থেকে এগিয়ে রাখা হয়েছিল বাংলাদেশকে।

যখন শ্রীলঙ্কাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে ফাইনালের মঞ্চে পায় পাকিস্তান ঠিক তখনই সমর্থকদের বড় একটা অংশ শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে ২০১২ সালের পর আবারও এশিয়া কাপের শিরোপা জয়ের উল্লাসে ভাসবে গোটা দেশ। আর টস জয় তো স্বপ্নের পালে বাড়তি এক হাওয়ার সঞ্চার ঘটায়। এশিয়া কাপটায় দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করাদের হারের পরিসংখ্যান যে অতীব নগন্য।

তবে শেষ মেশ পাকিস্তান আর পারল না। ২৩ রানের বড় ব্যবধানেই হাত ছাড়া হয়ে এশিয়া কাপের শিরোপা। তবে চিত্রনাট্যটা ভিন্ন হতে পারত। শ্রীলঙ্কাকে অল্প রানেই বেঁধে ফেলতে পারতেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম। তবে তিনি ম্যাচটা শেষ অবধি গড়ানোর অপেক্ষায় ছিলেন। আর শেষ অবধি যা হওয়ার তাই হল।

টসে হেরে শ্রীলঙ্কা ব্যাটিং করতে নেমে একটা পর্যায়ে দারুণ বিপাকে পড়ে যায়। ইনিংসের মধ্যভাগে ৫৮ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলে লংকানরা। ঠিক সে সময় লংকানদের উইকেট অতিদ্রুত তুলে নেওয়ার প্রয়াসটাই করা উচিৎ ছিল বাবর আজমের। তেমনটাই মনে করেন ওয়াসিম আকরাম।

তিনি বলেন, ‘বাবরকে অতি দ্রুতই শিখতে হবে, যখন প্রতিপক্ষের পাঁচ উইকেট নেই তখন মূল বোলারদের দিয়েই বোলিং করাতে হয়। শেষের দুই ওভারের চিন্তা করার দরকার নেই।’ সেই মুহূর্তে বাবর তাঁর পেসারদের বদলে স্পিনারদের কোটা পূরণ করবার পেছনে ছুঁটেছেন। ফলশ্রুতিতে বাইশ গজে থিতু হওয়ার সুযোগটা পেয়ে যান ভানুকা রাজাপাকশে এবং ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।

এই জুটি মিলে যোগ করেন ৫৮ রান। আর শেষ দিকে হাত খুলে খেলতে শুরু করেন ভানুকা রাজাপাকশে। যার ফলশ্রুতিতে ১২০ এর আশেপাশের একটা টার্গেট গিয়ে ঠেকে ১৭১ রানে। পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের বেশকিছু ক্যাচ মিস তাঁদেরকে মানুষিকভাবে বিপর্যস্ত করে দেয়। আর টার্গেটটা যেন পীড়া বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ।

সে পরিস্থিতি থেকে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি পাকিস্তান। অপেক্ষার প্রহরটা আরও একটু প্রসারিত হল পাকিস্তানের। এশিয়া কাপের এই ব্যর্থতা থেকে নিশ্চয়ই ঘুরে দাড়ানোর মন্ত্রটা খুঁজে নেবেন বাবর আজম, সেই সাথে গোটা পাকিস্তান দল।

বাবর আজমকে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) অধিনায়ক হিসেবে বহাল রাখবে, নাকি অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে – সেটা জানতে সময়ের অপেক্ষা করতে হবে। ফাইনাল শেষে পিসিবি চেয়ারম্যান রমিজ রাজা মুখ খুলেছেন, দল নিয়ে অনেক কিছু বললেও অবশ্য সেখানে অধিনায়কত্ব ইস্যুতে কিছু বলেননি। তাতে, অনুমান করা যায় যে বাবর আজম আরেকটা সুযোগ পেয়ে যাবেন বিশ্বকাপের মঞ্চে, অস্ট্রেলিয়ায়। এর আগে অবশ্য নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশের সাথে ত্রিদেশীয় সিরিজেও তাঁর একটা পরীক্ষা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link