কাকতালীয় ‘ব্যানার্জি’ কথন

এ যাবত ভারতের হয়ে মোট তিনজন ‘ব্যানার্জি’ টেস্ট খেলেছেন। কাকতালীয় ব্যাপার হল - তাঁদের প্রত্যেকেই মাত্র একটা করে টেস্ট খেলেছেন! এখানেই শেষ নয়, তাঁদের ক্যারিয়ারে আরও বেশ কিছু মিল আছে।

এ যাবত ভারতের হয়ে মোট তিনজন ‘ব্যানার্জি’ টেস্ট খেলেছেন। কাকতালীয় ব্যাপার হল – তাঁদের প্রত্যেকেই মাত্র একটা করে টেস্ট খেলেছেন! এখানেই শেষ নয়, তাঁদের ক্যারিয়ারে আরও বেশ কিছু মিল আছে।

তিন জনের সর্বপ্রথম জন হলেন সুধাংশু ব্যানার্জী ওরফে মন্টু ব্যানার্জী। জন্ম, বেড়ে ওঠা সবই কলকাতায়। ডান-হাতি মিডিয়াম পেসার ছিলেন, ১৯৪৯ সালে ইডেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টেই পেয়েছিলেন পাঁচ উইকেট (ইনিংসে নয়, ম্যাচে)!

তবে কোন এক অজানা কারণে পরে আর কখনোই ডাক পান নি। ক্রিকেট ঐতিহাসিকরা দাবি করেন, কোনো কারণ ছাড়াই তাঁকে বাদ দেওয়া হয়। তবে, ১৩ বছরের লম্বা ক্যারিয়ারে ২৬ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছিলেন।

(বাঁ-থেকে) সুব্রত গুহ, মন্টু ব্যানার্জি ও মদন লাল শর্মা।

মন্টু ব্যানার্জি কলকাতা কর্পোরেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ছিলেন। ১৯৯২ সালে তিনি মারা যান। তাঁর ছেলে রবি ব্যানার্জিও ক্রিকেটার ছিলেন। তবে, বাংলা দলের হলে রঞ্জি খেলা ছাড়া বেশি দূর এগোতে পারেননি তিনি।

দ্বিতীয় জন হলেন শুটে ব্যানার্জি। প্রকৃত নাম হল শরবিন্দু নাথ ব্যানার্জি। ইনিও বাঙালি ঘরের সন্তান, মন্টুর মত তিনিও ডান-হাতি মিডিয়াম পেসার। মজার ব্যাপার হল, ইনিও টেস্ট অভিষেকে পাঁচ উইকেট (ম্যাচে) নিয়েছেন, একই বছর একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে! ভেন্যু ছিল ব্র‍্যাবোর্ন স্টেডিয়াম, মুম্বাই।

৩৮৫টি ফার্স্ট ক্লাস উইকেটের মালিক শুটে ব্যানার্জির অভিষেক হয়েছিল ৩৭ বছর বয়সে! তাঁর অভিষেকের পর টানা তিন বছর ভারত কোন টেস্ট খেলেনি, যার ফলে তিনিও আর কখনও খেলার সুযোগ পান নি।

অনুশীলনে শুঁটে ব্যানার্জি

চার বছর আগে ইংল্যান্ড সফরেই শুঁটের টেস্ট অভিষেক হতে পারতো। সেই সফরটায় মাঠে ও মাঠের বাইরে বাজে সময় কাটাচ্ছিল ভারতীয় দল। দরের সেরা খেলোয়াড় লালা অমরনাথকে সিরিজের মাঝপথে দেশে ফেরত পাঠানো হয়, দলটা তখন দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এক পক্ষে ছিলেন অধিনায়ক ও বিজয়নগরের মহারাজাকুমার পুষ্পপতি বিজয় আনন্দ গজাপতি রাজু, ওরফে ভিজ্জি। আরেক পক্ষে কিংবদন্তি সিকে নাইড়ু।

প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে শুটের পারফরম্যান্স ছিল দারুণ। ২৯.৪২ গড়ে ৪০ উইকেট পেয়ে গেছেন। লন্ডন ওভালে টেস্ট ক্যাপ পাবেন বলে ঠিক হয়ে গেল। কিন্তু, সেই টেস্ট শুরু হওয়ার দিন সকালে নাস্তার টেবিলি নাইড়ুকে অপমান করে বসেন বাকা জিলানি। তাই, ভিজ্জি খুশি হয়ে শুটের জায়গাতে খেলান জিলানিতে।

জিলানিরও সেটা প্রথম ও শেষ টেস্ট। এখানে না বললেই নয় যে রঞ্জির ইতিহাসে তিনি হ্যাটট্রিক করা প্রথম বোলার। এই ডান-হাতি পেসার ১৯৪১ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাড়ির ব্যাল-কনি থেকে পড়ে গিয়ে মারা যান।

(বাঁ-থেকে) লালা অমরনাথ, ইফতিখার আলী খান পতৌদি ও শুঁটে ব্যানার্জি। ১৯৪৬ সালে ভারতের ইংল্যান্ড সফরে।

ব্যানার্জি ত্রয়ীর সর্বশেষ হলেন সুব্রত ব্যানার্জি। যথারীতি ইনিও একজন বাঙালি ফাস্ট বোলার। ১৯৯২ সালে অভিষেক, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, সিডনি টেস্টে। ভারত সেই টেস্টে কোনো স্পিনার ছাড়াই খেলতে নামে। চতুর্থ পেসার হিসেবে খেলা সুব্রত বল করেছিলেন এক ইনিংসেই, নিয়েছিলেন তিন উইকেট। তাঁর শিকার ছিলেন যথাক্রমে জিওফ মার্শ, মার্ক ওয়াহ ও মার্ক টেলর।

সুব্রত’র বাবা টাটা ব্যানার্জিও ক্রিকেটার ছিলেন। তবে, তিনি মোটে তিনটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতে পারেন। সুব্রত’র সাথে সেই টেস্টে এক অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তির অভিষেক হয়। তিনি হলেন স্বয়ং শেন ওয়ার্ন!

তবে, প্রথম দু’জনের চাইতে সুব্রতের ব্যাপারটা একটু আলাদা। সেটা হচ্ছে, মন্টু এবং শুটে এরা দুজন শুধুই ‘টেস্ট’ খেলেছেন, আর সুব্রত টেস্টের পাশাপাশি ছয়টা ‘ওয়ানডে’ও খেলেছেন!

১৯৯২ বিশ্বকাপে (বাঁ-থেকে) প্রবীন আমরে, অজয় জাদেজা, শচীন টেন্ডুলকার, কিরন মোরে ও সুব্রত ব্যানার্জি।

ছয়টি ওয়ানডেতে সুব্রত’র শিকার পাঁচ উইকেট। সেরা বোলিং ফিগার – ৩/৩০, উইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে! ১৯৯২ বিশ্বকাপ খেলা সুব্রত ব্যানার্জীর ক্যারিয়ারে প্রথম উইকেট কার ছিল জানেন? স্বয়ং ব্রায়ান চার্লস লারা!

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link