শ্রীধরন শ্রীরাম, নাবিকহীন জাহাজের মাঝি

২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স হতাশাজনক। এ সময় মাত্র দুইটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিততে পেরেছে বাংলাদেশ। তাছাড়া জয়ের মানসিকতা দেখা গিয়েছে কালেভদ্রে। সাফল্যের খোঁজে তাই সংস্কারের পথ খুঁজে নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

নতুন অধিনায়ক নির্বাচন করা হয়েছে, সাথে তৈরি করা হয়েছে তারুণ্য নির্ভর দল। আর সাহসী ব্যাটিং অ্যাপ্রোচের কথা এখন সবার মুখে মুখে। কোচিং প্যানেলেও এসেছে পরিবর্তন। টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে শ্রীধরন শ্রীরামকে। শুরুতে টি-টোয়েন্টির হেড কোচ করার কথা থাকলেও আপাতত এই ভারতীয়কে টেকনিক্যাল কনসালট্যান্টের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

আসন্ন এশিয়া কাপেও ব্যাটিং কোচ, বোলিং কোচদের পাশাপাশি তিনি গেম প্ল্যান সাজানোর কাজ করবেন। তবে বাংলাদেশ আরব আমিরাতে গিয়েছে কোন হেড কোচ ছাড়াই। অনেকদিনের গুঞ্জনকে সত্যি করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে সাবেক কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোকে। রাসেল ডোমিঙ্গো অবশ্য এর জের ধরে বিসিবি থেকেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।

অবশ্য হেড কোচ পরিচয়ে কেউ না থাকলেও এটা প্রায় পরিষ্কার যে, এশিয়া কাপে টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম খুব সম্ভবত প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করবেন। বড় একটা টুর্নামেন্টের আগে নতুন কাউকে এভাবে দায়িত্ব দেয়া আসলে কতটা যৌক্তিক সেটা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তোলা যায়। শুধু তাই হয়তো নয়, রাসেল ডোমিঙ্গো চলে যাওয়ার পর তাঁকে ওয়ানডে দলের দায়িত্ব দিলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

রাসেল ডোমিঙ্গো বাংলাদেশ দলের সাথে আছেন লম্বা সময় ধরে। কোন ক্রিকেটারের সামর্থ্য কেমন, কি করতে পারেন সেসব এতদিনে নিশ্চয়ই জানা হয়ে গিয়েছে তাঁর। তাই নি:সন্দেহে নিজেদের সক্ষমতা বিবেচনায় গেমপ্ল্যান সাজানোর কাজটা এই প্রোটিয়া কোচের জন্য তুলনামূলক সহজ হতো।

আবার একই ব্যাপার সত্যি ক্রিকেটারদের জন্যও। গত প্রায় তিন বছরের মত তারা ছিলেন রাসেল ডোমিঙ্গোর অধীনে। এখন প্রায় হুট করে নতুন কারো সাথে মানিয়ে নিতে সমস্যা হওয়ারই কথা। জাতীয় দলের অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত তো অকপটে বলেছেন যে টি-টোয়েন্টিতে রাসেল ডোমিঙ্গোকে মিস করবেন তিনি।

অবশ্য শ্রীধরন শ্রীরামের সাথে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারলে বাংলাদেশের জন্য ভাল কিছুই অপেক্ষা করছে। কেননা এই ভারতীয় কোচ শুধু যে অভিজ্ঞ তা নয়, বরং ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) কোচিং করার বদৌলতে তাঁর আধুনিক টি-টোয়েন্টির সাথে সখ্যতাও আছে। তাই বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে গেম প্ল্যান সাজানোর ব্যাপারে শ্রীধরন দক্ষতার পরিচয় দিবেন – সেটা আশা করাই যায়।

তবে মাঠে তো খেলবেন ক্রিকেটাররা। কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো কিংবা কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম; ড্রেসিং রুমে পরিকল্পনা যার-ই হোক, বাস্তবায়ন করার কাজটা কিন্তু সাকিব, মুশফিকদের। আর তাই খেলোয়াড়রা যদি শ্রীধরন শ্রীরামের পরিকল্পনা বুঝে সে অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেন তাহলে অন্তত ভরাডুবি থেকে রক্ষা পাবে বাংলাদেশ।

এর আগে হেড কোচ ছাড়াই বাংলাদেশকে নিদাহাস ট্রফিতে খেলতে দেখা গিয়েছে। আবার দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও খেলছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। দুই জায়গাতেই হেড কোচ ছিল না, কিন্তু পারফরম্যান্সে ছিল আকাশ-পাতাল ফারাক।

তাই বলাই যায়, কোচিং প্যানেলে পরিবর্তন ড্রেসিরুমের পরিবেশে হয়তো কিছুটা পরিবর্তন আনবে। তবে মাঠের সাফল্য নির্ধারণ করবে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স কেমন হচ্ছে তার উপর।

অবশ্য টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট কিংবা অধিনায়ক সাকিব আল হাসান স্বাধীনভাবে গেমপ্ল্যান সাজাতে পারবেন কি না সেটা নিয়ে সংশয় রয়ে যায়। কারণ, আরব আমিরাতে বাংলাদেশ দলের সাথে থাকবেন বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। দেশের ক্রিকেট অনুসরণ করা সবারই নিশ্চয়ই জানা আছে দলের পরিকল্পনায় হস্তক্ষেপ করতে বেশ পছন্দ করেন বিসিবি বস।

আবার কোচিং প্যানেলে টিম ম্যানেজম্যান্টের অযাচিত খবরদারির অভিযোগ নতুন নয়। সর্বশেষ রাসেল ডোমিঙ্গো এক সাক্ষাৎকারে প্রায় একই অভিযোগ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নাকি চিন্তার স্বাধীনতা দেয়া হয় না। তাদের সবসময় ধমকের উপর রাখা হয়, প্রতিটা পদক্ষেপে বলে দেয়া হয় কি করতে হবে।

এই প্রোটিয়া কোচের অভিযোগ কতটা সত্যি সেটা আলোচনার বাহিরে থাকুক, তবে এমন কিছু যদি আসলেই ঘটে থাকে তাহলে সেটা নিশ্চয়ই স্বস্তিকর কিছু নয়। এমনটা হলে আসলে বিশ্বের কোন কোচ-ই পারবে না কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দিতে।

বরং কোচিং প্যানেল, অধিনায়ককে স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে দেয়া এবং উপযুক্ত উপায়ে তাদের সাহায্য করাটাই সাফল্যের মন্ত্র হতে পারে। পরিবর্তনের এই সময়ে টিম ম্যানেজম্যান্টের মানসিকতাও পরিবর্তন হবে, তারা সাফল্যের মন্ত্র অনুসরণ করবে এমনটাই প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link