ওয়ানডেতে ফল আনতে খেলা হতে হবে কমপক্ষে ২০ ওভার। কিন্তু চেমসফোর্ডের আকাশে যখন মেঘ জমেছে, আইরিশদের ইনিংসে তখন ১৭ তম ওভারের খেলা চলছে। এর কিছুক্ষণ বাদে ভারী বর্ষণ শুরু হলে অনুমিতভাবেই বন্ধ হয়ে যায় খেলা। এর পর যত সময় গড়িয়েছে, বৃষ্টির বেগ ততটাই বেড়েছে। ফলত, শেষ পর্যন্ত ম্যাচে আর ফল আসেনি। বৃষ্টিতে পন্ড হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড মধ্যকার সিরিজের প্রথম ওয়ানডে।
বাংলাদেশের দেওয়া ২৪৭ রানের লক্ষ্যে ১৬.৩ ওভারে ৬৫ রানে ৩ উইকেট হারানো আয়ারল্যান্ড ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের চেয়ে বেশ খানিকটায় পিছিয়েই ছিল। কিন্তু ম্যাচে ফল আনতে উভয় দলের ইনিংসে ২০ ওভার তো টপকাতে হবে। তাই এগিয়ে থেকেও বৃষ্টি আসাতে খুব একটা লাভ হয়নি বাংলাদেশের। ওয়ানডে সুপার লিগের অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় আইরিশদের সাথে দিনশেষে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
অবশ্য দিনের শুরুতে হোঁচট খেয়েছিল বাংলাদেশই। টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে শুরুতেই আইরিশ পেসারদের তোপের মুখে বাংলাদেশের ব্যাটাররস। ইনিংসের প্রথম ওভারে কোনো রান যোগ না করেই জশুয়া লিটলের বলে এলবিডব্লু হয়ে সাজঘরে ফেরেন লিটন দাস।
এরপর লিটনের পথ ধরে প্যাভিলিয়নের পথে হেঁটেছেন অপর ওপেনার তামিম ইকবালও। দুই চারে দারুণ শুরু করলেও সেই শুরুটা আর ধরে রাখতে পারেনি টাইগারদের দলপতি। ১৯ বলে ১৪ রান করে ফিরে যান তিনি।
১৫ রানের মাঝে দুই ওপেনারকে হারানো বাংলাদেশকে এরপর কিছুটা পথ দেখিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত আর সাকিব আল হাসান। ব্যাটিংয়ের প্রাথমিক বিপর্যয় সামলে এ দিনও পাল্টা আক্রমণের দিকেই নজর ছিল সাকিবের। কিন্তু গ্রাহাম হিউমের বলে ২০ রানেই থামতে হয় সাকিবকে।
সাকিব ফিরে যাওয়ার পর তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন শান্ত। সেই লক্ষ্যে তিনি সফলও হয়েছিলেন। তাওহীদ হৃদয়ের সাথে গড়ে তুলেছিলেন ৫০ রানের জুটি। একই সাথে, নিজেও হেঁটেছিলেন ব্যক্তিগত অর্ধশতকের পথে। কিন্তু উইকেটে থিতু হয়েও ৪৪ রানে ফিরে যান এ ব্যাটার।
এর কিছুক্ষণ বাদে আবার তাওহীদ হৃদয় ফিরে যান ২৭ রান করে। ১২২ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ তখন ২০০ পেরোনোর শঙ্কায়।
তবে বাংলাদেশকে লড়াই করার মতো পুঁজি এনে দেন মুশফিকুর রহিম আর মেহেদী হাসান মিরাজ। এ দুই ব্যাটারের ৬৫ রানের জুটিতেই ব্যাটিং বিপর্যয় এড়িয়ে লড়াই করার মতো সংগ্রহের পথে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
মিরাজ ২৭ রানে ফিরে গেলেও এ দিন ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নেন মুশফিকুর রহিম। তবে ফিফটি পূরণের পর অবশ্য বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি তিনি। ব্যক্তিগত ৬১ রানে জশুয়া লিটলের কাছে ধরা দেন তিনি।
অবশ্য মুশফিক ফিরলেও তাইজুলের ১৪ আর শরিফুলের ১৬ রানের ইনিংসে ঠিকই আড়াইশোর পথে ধাক্কা দিয়েছিল বাংলাদেশের সংগ্রহ। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ২৪৬ রান জমা করে বাংলাদেশ।
২৪৭ রানের লক্ষ্যে শুরুটা ভালই করেছিল আইরিশ ওপেনার পল স্টার্লিং। ২ চার আর ১ ছক্কায় শুরুতেই বাংলাদেশি পেসারদের বুকে কাঁপন ধরিয়েছিলেন এ ওপেনার। তবে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই এ ওপেনারকে ফেরান শরিফুল ইসলাম।
এরপর দুর্দান্ত এক ইনসুইং ডেলিভারিতে অ্যান্ড্রু বালবার্নিকে বোল্ড করেন হাসান মাহমুদ। ব্যস। দারুণ শুরু করা আইরিশা চাপে পড়ে তখনই। ৩৯ রানে ২ উইকেট হারানো চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেম স্টিফেন ডোহেনি আর হ্যারি টেক্টর।
যদিও স্টিফেন ডোহেনির অতি সাবধানী ব্যাটিংও তাকে রক্ষা করতে পারেনি। তাইজুলের বলে তাইজুলকেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এ ওপেনার। আর এর কিছুক্ষণ বাদেই চেমসফোর্ডের মাটিতে বৃষ্টি নামলে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। টানা ভারী বর্ষণের ফলে আর একটি বলও মাঠে না গড়ালে ম্যাচ অফিশিয়ালরা ম্যাচটিকে পরিত্যক্ত বলে ঘোষণা করেন।
তবে আইরিশদের ইনিংসে আর ২১ টি বল খেলা হলেই ম্যাচটা জিততে পারতো বাংলাদেশ। তাই ২৪ বছর পর চেমসফোর্ডের মাটিতে খেলতে নেমে বাংলাদেশের আক্ষেপের নাম হয়ে রইল ঐ ২১ টি বল। অন্যদিকে পরিত্যক্ত হওয়া ম্যাচে কপাল খুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকার। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে পারবে প্রোটিয়ারা।