অন্তত আজকে দিনের আগে অধিকাংশ লোকই বিশ্বাস করতেন না যে তিনি পারবেন। তবে অধিনায়ক মুমিনুল হক আস্থাটা পুরোপুরি রেখেছেন। ইনিংসের দ্বিতীয় নতুন বল পাওয়ার সাথে সাথেই তাঁকে বোলিংয়ে নিয়ে আসলেন। খালেদ আহমেদও আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। এরপরের ওভারে এসেই বাংলাদেশকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দিলেন। তুলে নিলেন পরপর দুই উইকেট।
শুধু খালেদ আহমেদ না, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে পুরো পেস আক্রমণের উপরই দারুণ ভরসা বাংলাদশের অধিনায়কের। সংবাদ সম্মেলনেও বলেছিলেন ম্যাচ জিততে হলো পেসারদেরই কাজটা করে দিতে হবে। পেসাররাও অধিনায়ককে দুহাত ভরে দিচ্ছেন। আজ নতুন বলের সুবিধাটা পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছেন খালেদ। আর পুরো ইনিংসেই তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন তাসকিন আহমেদ ও এবাদত হোসেন।
অথচ দক্ষিণ আফ্রিকা তাঁদের ঘরের মাটিতেও এই সাহসটা দেখাতে পারেননি। তাঁরা মূলত আস্থা রাখছে স্পিনারদের উপর। মুমিনুল হক গতকাল টস জিতেই বোলিং নিয়েছিলেন পেসারদের হাতে বল তুলে দেয়ার জন্য। যদিও যেই সময়টায় পেসাররা সুবিধা পাওয়ার কথা সেটা নষ্ট হয়েছে সাইডস্ক্রিনের সমস্যার জন্য। এর প্রভাবও পড়েছিল গতকাল প্রথম সেশনে।
প্রথম সেশনে পেসাররা নতুন বলটাকে কাজে লাগাতে পারেননি। লেন্থ খুঁজে পেতেও বেগ পেতে হয়েছে বাংলাদেশের পেসারদের। তবে গতকালও পথটা দেখিয়েছিলেন খালেদ আহমেদও। অথচ এই টেস্ট তাঁর খেলারই কথা ছিল না। শরিফুলকে বিশ্রাম দিতে গিয়েই একাদশে জায়গা পেয়েছেন।
এছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও খালেদের পরিসংখ্যান খুব একটা সুখকর না। ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর টেস্ট ক্রিকেটে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। এরপর কেটে গেছে তিনটি বছর। মাঝে নানারকম সব ইনজুরিতে লম্বা সময় মাঠের বাইরেও ছিলেন। তবুও বিসিবি খালেদের উপর থেকে ভরসার হাত সরিয়ে নেয়নি কখনো। একজন টেপ টেনিস বোলার থেকে টেস্ট ক্রিকেটার হওয়ার যাত্রার পুরোটায় পাশে ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট। তবে তাঁর থেকে যে উইকেট প্রাপ্তির আশা, সেটা কোনভাবেই পূরণ করতে পারছিলেন না খালেদ।
অভিষেকের ঠিক ১১২০ দিন পর পাকিস্তানের বিপক্ষে পেয়েছিলেনব প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেট। মিরপুরে তুলে নিয়েছিলেন বাবর আজমের উইকেট। টেস্ট ক্রিকেটে গতকাল অবধি তাঁর ঝুলিতে উইকেট ছিল ওই একটিই। বোলিং গড় ২৯১.০০।
তবুও টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল তাঁর উপর আস্থা রেখে। ম্যাচ না খেললেও সবসময় দলের সাথে থেকেছেন। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পেতে হলে আজ বাংলাদেশকে দ্রুত কিছু উইকেট তুলে নিতে হতো। নতুন বল হাতে পেয়ে সেটিই করে দেখালেন তিনি। স্পেলের দ্বিতীয় ওভারে বোলিং করতে এসেই ফেরালেন কাইল ভেরেইনাকে।
তবে সেখানেই থেমে থাকেননি। পরের বলেই আবার ফাঁদে ফেলেছেন নতুন ব্যাটসম্যান ভিয়ান মুল্ডারকে। তবে এই উইকেটের পিছনে দারুণ অবদান আছে মাহমুদুল হাসান জয়েরও। স্লিপিং ফিল্ডিং নিয়ে বাংলাদেশের দুর্বলতা অনেক। তবে আজ স্লিপে দাঁড়িয়ে জয় নিলেন উড়ন্ত এক ক্যাচ।
টানা দুই উইকেট পেয়েই ম্যাচর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩০০ রানের মধ্যে আঁটকে দেয়ার আশাও তৈরি হয়। যদিও একপ্রান্ত থেকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছিলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক বাভুমা। এবাদত হোসেন অবশ্য তাঁকে ফেরানোর সুযোগ তৈরি করেছিলেন। তবে তীব্র গতিতে যাওয়া বলটা ইয়াসির রাব্বির হাত ছুঁয়েই চলে যায়।
পরে ৯৩ রান করা বাভুমাকে অবশ্য ফিরিয়েছেন মিরাজ। দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনেও এই স্পিনার দারুণ বোলিং করে যাচ্ছেন। পেসারদের সাথে সাথে তিনিও বোলিং আক্রমণের ধাঁর বাড়াচ্ছেন। সবমিলিয়ে চার বোলারের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়েই দক্ষিণ আফ্রিকাকে চেপে ধরতে পেরেছে বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদ কোন উইকেট না পেলেও একপ্রান্ত থেকে চাপ তৈরি করতে পেরেছেন।
এছাড়া ছোট ছোট কিছু ভুল করলেও বোলারদের পুরোপুরি সাপোর্ট দিয়েছেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। গতকাল মিরাজের অবিশ্বাস্য রান আউটের পর আজ জয়ের দুর্দান্ত এক ক্যাচ। সবমিলিয়ে পুরো দলই যেন দক্ষিণ আফ্রিকার উপর ঝাপিয়ে পড়ছে। আরেকটা স্বপ্ন পূরণের জন্য সবাই কী ভীষণ রকম মরিয়া।