সকালেই ২-৩ উইকেট চায় বাংলাদেশ

দ্বিতীয় দিনটা বাংলাদেশের জন্য একেবারেই হতাশার। টেস্ট ক্রিকেটকে বলা হয় প্রতি সেশনের খেলা। তবে আজ দিনে একটা মুহূর্তের জন্যেও বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে ছিল না। টেস্টের প্রথম দিনে লিটন মুশফিকের জুটিতে যাও একটু ঘুরে দাঁড়ানোর আশা ছিল দ্বিতীয় দিন শেষে সেই আশায়ও গুরোবালি।

সন্ধ্যায় খেলা শেষ হওয়ার পর গ্যালারি থেকে দর্শকরা যখন বেরিয়ে যাচ্ছিল তখন দেখা গেল তাঁদের বিষন্ন মুখ। সূর্য ডোবার লালচে আলোয় সেই বিষন্ন মুখগুলো যেনো পুরো সাগরিকা জুড়ে একটা বিষন্ন সুর রেখে গেল। সেই বিষাদ দেখা গেল লিটন দাসের মুখেও। গতকালকের নায়কও আজ সংবাদ সম্মেলেনে যেন কী ভীষণ ক্লান্ত। গতকালকের এতটা পরিশ্রম সার্থক হলো কিনা সেই প্রশ্নই যেন ঘুরপাক খাচ্ছে লিটনের চোখে মুখে।

তবুও সংবাদ সম্মেলনে এসে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেন। দ্বিতীয় দিন শেষে খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই বাংলাদেশ। ম্যাচ হারের শঙ্কাই বেশি। তবুও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় শোনা গেল লিটনের মুখে। আজকের খেলা শেষে ম্যাচের নাগালটা কার হাতে সেটাও জানিয়েছেন লিটন। তিনি মনে করেন ম্যাচ এখনো বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দুই দেশেরই সমান নিয়ন্ত্রণ আছে।

ম্যাচের পরিস্থিতে নিয়ে লিটন বলেন, ‘দেখেন ভাইয়া, প্রথম দিন যেটা ছিল, আমাদের মধ্যাহ্ন বিরতির আগে যখন ৪ উইকেট পড়ে যায় হয়তো সবাই ধারণা করছিল বাংলাদেশ অল্প রানেই অল আউট হয়ে যাবে। ওখান থেকে আমি আর মুশফিক ভাই অনেক ভালো জুটি গড়ে কামব্যাক করেছিলাম। আমরা যখন দিন শেষ করেছি, আমাদের ইচ্ছা ছিল একটা ভালো সংগ্রহের দিকে নিয়ে যাব কাল। কিন্তু এটাই ক্রিকেট। যেটা আগের দিন হয় সেটা পরেরদিন  হয় না। পাকিস্তান ভালো অবস্থায় আছে কারণ কোন উইকেট হারায়নি। এই বোর্ডে যদি ২/৩ উইকেট থাকতো, এই রানে বা এর থেকে বেশি ১৬০ রানে ৩ উইকেট থাকত তাহলে স্কোর দেখতেও ভালো লাগত। তাহলে মনে হতো দুই দিকেই খেলা থাকত। আমার মনে হয় আমরা যদি কাল আর্লি মর্নিং ২-৩ টা উইকেট নিতে পারি তাহলে সিমিলার জায়গায় চলে আসবে। এখন পর্যন্ত খেলা দুই পক্ষেই আছে।’

লিটন আশার কথা শোনালেও বাংলাদেশের জন্য ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়া ভীষণ কঠিন কাজই হবে। আজ বিনা উইকেটে ১৪৫ রান করে বিশাল সংগ্রহের পথেই হাঁটছে পাকিস্তান। তাই ম্যাচে ফিরতে হলে তৃতীয় দিনটাকে নিজেদের করে নিতে হবে বাংলাদেশকে। যদিও ম্যাচের ফল নিয়ে এখনই ভাবতে চাচ্ছেন না লিটন দাস।

ম্যাচের ফলাফল কেমন হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে লিটন বলেন, ‘এখন ফলের দিকে চিন্তা করা যাচ্ছে না। আমি আগেও বললাম আমি ও মুশফিক ভাই যদি আরেকটু ভালো ব্যাটিং করতাম তাহলে ৪০০-৪৫০ রান থাকত। তাহলে ভিন্ন সিনারিও থাকতো। আবার বোলিংয়ে ২-৩ উইকেট নিতে পারতাম তাহলে সিনারিও ভিন্ন হতে পারত। তবে এখনও খেলা দুই পক্ষে আছে। আমরা আগামীকাল এসে ২-৩ উইকেটে ব্রেক থ্রু এনে দিতে পারি…সংখ্যায় দেখলে রান রেট কিন্তু খুব েএকটা বাড়ছে না। উইকেটে কুইক রান করা কঠিন।ওদিক থেকে ধরলে খেলা দুই পক্ষে আছে। কালকের দিনের উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।’

ওদিকে প্রতিপক্ষের বিশ উইকেট নিতে চিরকালই লড়াই করতে হয়েছে বাংলাদেশের বোলারদের। অধিকাংশ ম্যাচেই সেটা সম্ভব হয়ে উঠেনা। এর উপর সাকিব না থাকায় এই ম্যাচে বাংলাদেশ চারটা বোলার নিয়েই মাঠে নেমেছে। পঞ্চম বোলার হিসেবে আজ বল করতে দেখে গেছে মুমিনুল হককে। এছাড়া বাংলাদেশের পেসারদের পারফর্মেন্সও টেস্ট ক্রিকেটে খুব একটা সুখকর না। ফলে দুর্বল বোলিং লাইন আপ নিয়ে খেলতে নামলো কিনা এমন প্রশ্নে অবশ্য একমত হননি এই ওপেনার।

বোলারদের উপর আস্থা রেখে লিটন বলেন, ‘আপনি কীভাবে পুওর বোলিং লাইন আপ বলতে পারেন? যে কয়টা বোলার খেলতেছে সবাইতো টেস্ট বোলার। এবাদত, রাহি এরা দুজনেই টেস্ট বোলার এবং অনেক উপকারও করেছে, সাহায্য করেছে, উইকেটও নিয়েছে। তাইজুল, মিরাজকে নিয়েতো সন্দেহই নেই। তো এখানে পুওর বোলিংয়ের তো কিছু নেই।

বাংলাদেশের এই বোলিং লাইন আপ আসলেই শক্তিশালী কিনা সেটার সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটা হবে আগামীকাল। সকাল সকাল কিছু উইকেট তুলে নিতে পারলে সত্যি সত্যি ম্যাচে ফিরতে পারেন লিটনরা। তাই লিটনের কথায় বিশ্বাস রাখা ছাড়া এই মুহূর্তে আর উপায় কী।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link