ভারতের আধিপত্য ভেঙে এশিয়া মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করলো বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। আর এমন সাফল্যের পিছনের কারণ হিসেবে যার নাম সবার ওপরে থাকবে তিনি আশিকুর রহমান শিবলী, সেই সাথে সেমিফাইনালের নায়ক আরিফুল ইসলামের নামও নেয়া যেতে পারে। তবে লাইমলাইটের আড়ালেই থেকে গিয়েছেন টাইগার।বোলাররা।
পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা দেখিয়েছেন সদ্য আঠারো পেরুনো এই তরুণেরা। মারুফ মৃধা, রোহানাত দৌল্লা বর্ষণ ত্রাস ছড়িয়েছেন গতি আর সুইংয়ে; অন্যদিকে মাহফুজুর রহমান রাব্বি, পারভেজ রহমান জীবন ঘূর্ণিতে জাদুর ফাঁদে আটকে দিয়েছেন ব্যাটারদের। কিন্তু শিবলী, আরিফুলদের মত মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারেননি।
যদিও নিজেদের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করেছেন তাঁরা। পেসার আর স্পিনার একত্রিত হয়ে গঠন করেছে বিশ্বমানের বোলিং আক্রমণভাগ। কেউ শুরুতে উইকেট এনে দিয়েছেন, কেউবা আবার পার্টনারশিপ ভেঙ্গে নিজের সামর্থ্য দেখিয়েছেন।
এই যেমন মারুফ আর বর্ষণ – হালকাপাতলা গড়নের দুই পেসার জুটি গড়ে হাত ঘুরিয়েছেন নতুন বলে। একপ্রান্ত থেকে মারুফ গতির ঝড় তুলেছেন, সেই সাথে সিম মুভমেন্টের কল্যাণে অস্বস্তিতে ফেলেছেন প্রতিপক্ষ টপ অর্ডারকে। অন্যদিকে, বর্ষণও বলে কয়ে সুইং করিয়েছেন, বিশেষ করে ইনসুইংয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।
যুব দলের বাঁ-হাতি এই পেসার চার ম্যাচ খেলে নিয়েছেন দশ উইকেট, বোলিং গড় মাত্র ১১.৪০। আর ওভার প্রতি চার রানেরও কম খরচ করেছেন। আর তাঁর সঙ্গী বর্ষণ ২১ গড়ে শিকার করেছেন সাত উইকেট। সেমিফাইনালে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপকে ধ্বসিয়ে দেয়ার কাজটা কিন্তু এই দুজনেই করেছিলেন।
মারুফের চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে সমান উইকেট নিয়েছেন জীবনও। ক্যামেরার ফোকাসে না এলেও প্রতি ম্যাচে উইকেট তোলার কাজটা নীরবে করে গিয়েছেন তিনি। নিয়ন্ত্রিত লাইন লেন্থ আর কিপ্টে বোলিং তাঁর মূল বৈশিষ্ট্য; চল্লিশের বেশি ওভার করেও ২.৭১ ইকোনমি সেটারই প্রমাণ দেয়।
মাঝের ওভার গুলোতে তাঁর সঙ্গী হওয়া অধিনায়ক রাব্বিও কম যাননি। একটা উইকেট কম পেয়েছেন ঠিকই, তবে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক থ্রু এনে দেয়ার ক্ষেত্রে জীবনের মতই অবদান রেখেছেন তিনি।
আলাদা করে বলতে হয় লেগ স্পিনার ওয়াসী সিদ্দিকীর কথা, এক ম্যাচ খেলেই নজর কেড়েছেন এই কিশোর। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুর্দান্ত একটা দিন কাটিয়েছিলেন তিনি, লেগ স্পিনারের যে শূন্যতা লাল-সবুজের ক্রিকেটাঙ্গনে সেটা ওয়াসী দূর করবেন এমন স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছে ভক্ত-সমর্থকেরা।
এছাড়া খুব বেশি উইকেট না পেলেও মোহাম্মদ রিজওয়ান, ইকবাল হোসেন ইমনরা মুগ্ধ করেছেন তাঁদের কার্যকরী ফাস্ট বোলিংয়ে। সবাই মিলেই ‘কমপ্লিট প্যাকেজ’ হয়ে উঠেছে; সবার কাঁধে ভর করেই লাল-সবুজের পতাকা উড়েছে বিজয় মঞ্চে। এখন লক্ষ্য বিশ্বজয়ের – আরো একবার শরিফুল, রাকিবুলদের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে নিশ্চয়ই উন্মুখ হয়ে আছেন জীবন, মারুফরা।