ফ্ল্যাশব্যাক – অক্টোবর ৩০, ২০১৬। বাংলার ক্রিকেটের অমর এক বিকেল। প্রথমবার টেস্টে ইংল্যান্ডকে হারানো তাও মাত্র তিন দিনে! তিন দিনও নয়, তিন ঘণ্টার এক সেশন।
শেষ কবে এমন আনন্দের কান্না কেঁদেছিল বাংলাদেশ? রঙিন পোশাকের ঠাঁটবাটের কল্যাণে কাঁদতে ভুলে গেছি আমরা। জয় পরিণত রুটিনে।
প্রতিদিন শুঁটকি দিয়ে লাউ তরকারি খাওয়া কেউ যখন পাতে চিংড়ি আবিষ্কার করে, পানির গ্লাসে অলক্ষ্যে কয়েক ফোঁটা নোনাপানি যোগ হয় অনায়াসেই। না! নোনাজলের চিংড়ি নয়; এর কারণ তৃপ্তি, উচ্ছ্বাস, মানসিক প্রশান্তি। আজকের সাদাপোশাকের এগারো বাঘের বিকেলও কি তেমন তৃপ্তিময় নয়?
খুব গুছিয়ে লিখার মতো অত দক্ষতা আয়ত্ত্ব হয়নি। সময়ে অসময়ে তাই ভুল হয়ে যায়। ঠিক বাংলাদেশের মতোন! ওরাও এখনো শুভ্রদ্যুতিতে নিজেদের অভ্যস্ত করতে পারেনি।
১৬ বছরের যাত্রায় আটবার জয় কুড়িয়েছেন, যার সাতটিই জিম্বাবুয়ে-উইন্ডিজদের বিরুদ্ধে। উইন্ডিজদের এখন অবস্থা যাই হোক তাঁরা পরাশক্তি, তাদের ঘরের মাঠে বছর সাতেক আগে তাঁদের হারানো চাট্টিখানি কথা নয়। সেসব এতদিন চায়ের আড্ডায় ঝড় তুলতো, তুলতে তুলতে ধোঁয়ার সাথে ধুলোও মিশে গেছে। তবু এতদিন সবেধন নীলমণি ছিল!
আজকের পর এরা পার্শ্বচরিত্রে। অষ্টম জয় এসে গেছে, বীরের বেশে। ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তী কার্টনি ওয়ালশ বোধকরি এরচেয়ে ভালো বার্থডে গিফট লাইফে কখনো পাননি! তিনদিনেই ম্যাচ জয়। তিন ঘণ্টার ওয়ানডেতে পারলে তিনদিন আর এমন কী? হয়ত তাই শেষ সেশনের শেষ তিনঘন্টায় ওয়ানডে স্টাইলে ব্রিটিশবধ কাব্য রচিত করে বাঘেরা। ওদের বড্ড তাড়া! বড্ড বেখেয়ালে একেক জন! মেহেদী হাসান মিরাজের টপাটপ উইকেট নেবার তাড়া, সাকিবের জবাব দেবার তাড়া, আর পুরো দলের শান্তিতে ঘুমাবার তাড়া! ফলাফল, তিনদিনে গন্তব্যে, অভিজাত রঙে অভিজাত সব লোকজনের মুখে উপেক্ষা-অবজ্ঞার সমুচিত জবাব।
আজ রাতে জম্পেশ ঘুম হবে। ঘুমের অবশ্য হাজারটা কারণও আছে। সিরিজভর হার্টবির্ট কারোই ঠিকঠাক ছিল না। আজ তা নিশ্চয়ই স্বাভাবিক? সেরের উপর সোয়া-সেরস্বরূপ ডাবল পার্টি। কার্টলি অ্যান্ড ভিক্টোরি।
রাত বাড়ছে। হাজার বছরের পুরনো সেই রাত! না! হাজার বছর না, হাজার দিবস-রজনীর অপেক্ষার রাত। মধ্য কার্তিকের ভরা শীতের কোন এক রজনীতে যুগ পেরিয়ে প্রজন্মের কেউ একজন গল্পের আসরে কথা পাড়বে, ‘ব্রিটিশ দম্ভ চূর্ণ করেছিলাম সদম্ভে, বাইশ গজে আঁছড়ে ফেলেছিলাম হাসতে হাসতে।
অভিবাদন বাংলাদেশ। কালকের ভোরের শুভ্র কুয়াশা তৈরি তোমাদের চলার পথ ধুঁয়ে দিতে, চায়ের কাপের শুভ্র ধোঁয়াও আলিঙ্গন প্রত্যাশী। ওরা জানে, নিরাশ হবে না!