সেঞ্চুুরিয়নে ইতিহাস

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এর আগে কোনো জয় নেই! কন্ডিশন বিবেচনায় দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্যই শক্ত প্রতিপক্ষ। তবে সবশেষ দেখায় বিশ্বকাপের জয়টা ছিলো বাংলাদেশের জন্য আরো একবার আশায় বুক বাঁধার জন্য। সেঞ্চুরিয়ানে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩৮ রানে হারিয়ে প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ।

টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ধীরে গতিতেই শুরু করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। দু’জনে মিলে ওপেনিং জুটিতে করেন ৯৫ রান। ওপেনিং জুটির পথে লিটন তুলে নেন ব্যক্তিগত ফিফটির। দলীয় ৯৫ রানে অ্যান্ডাইল ফেহলুকওয়াওর বলে লেগ বিফোরের শিকার হয়ে ব্যক্তিগত ৪১ রানে ফিরেন তামিম। এক ওভারের ব্যবধানেই আউট লিটনও। ১০৪ রানে ২ উইকেট হারিয়ে তখন চাপের মুখে বাংলাদেশ। কেশব মহারাজের বলে দ্রুতই মুশফিক ফিরলে ১২৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন বিপাকে বাংলাদেশ।

চতুর্থ উইকেটে ইয়াসির আলিকে সঙ্গে নিয়ে জুটি বাঁধেন সাকিব। ধীরে ধীরে বিপর্যয় সামাল দিয়ে রান রেট বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন এই দুই ব্যাটার। দু’জনের ব্যাটে দল পায় পঞ্চাশোর্ধ জুটি। এরপর দুই প্রান্তে সাকিব-ইয়াসিররা শুরু করেন ঝড়ো ব্যাটিং। দু’জনের হাঁকাতে থাকেন বাউন্ডারি। একপ্রান্তে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে সাকিব তুলে নেন ব্যক্তিগত ফিফটি। সাকিবকে অনুসরণ করে মেইডেন ফিফটির দেখা পান ইয়াসিরও। চতুর্থ উইকেটে দু’জনে মিলে গড়েন ১১৫ রানের অনবদ্য জুটি। এরপর পর পর দুই ওভারে আউট সাকিব ও রাব্বি! ৬৪ বলে ৩ ছক্কা ও ৭ চারে সাকিব এবং ৪৪ বলে ২ ছক্কা ও ৪ চারে ৫০ রানে রাব্বি ফিরলে ২৪৩ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এরপর আফিফ, রিয়াদদের ছোট ছোট ইনিংসে বড় সংগ্রহের দিকেই এগোয় বাংলাদেশ। আফিফ ১৩ বলে ১৭ ও রিয়াদ ১৭ বলে ২৫ রানে ফিরলে ২৮৮ রানে ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তবে শেষদিকে মিরাজ-তাসকিনের ২৬ রানের জুটিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩১৪ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন মারকো জানসেন ও কেশব মহারাজ।

জবাবে কঠিন লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে দলীয় ১৮ রানেই জেনম্যান মালানকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে ১৮ রান যোগ করতে একই ওভারে কাইল ভেরেইনে ও এইডেন মার্করামকে ফিরিয়ে ম্যাচ নিজেদের আধিপত্যে নেন তাসকিন আহমেদ। ৩৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন চরম বিপর্যয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। চতুর্থ উইকেটে রসি ভ্যান ডার ডুসেনকে নিয়ে ৮৫ রানের জুটি গড়ে দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলে অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। এই দুইজনের ব্যাটে আবারও জয়ের স্বপ্ন দেখে প্রোটিয়ারা।

এরপর দলীয় ১২১ রানে শরিফুলের দ্বিতীয় শিকার হয়ে বাভুমা ফিরেন ৩১ রানে। একপ্রান্তে অসাধারণ ফিফটি তুকে নেন ডুসেন। পঞ্চম উইকেটে মিলারকে নিয়ে দ্রুত রান তুলতে থাকেন এই ব্যাটার। পঞ্চম উইকেটে দু’জনের ৭০ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় প্রোটিয়ারা। তবে দলীয় ১৯১ রানে ইয়াসির রাব্বির দুর্দান্ত এক ক্যাচে ডুসেন ব্যক্তিগত ৮৬ রানে ফিরলে আবারও ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় বাংলাদেশ। একপ্রান্তে মিলার ফিফটি করলেও আরেকপ্রান্তে মিরাজ ঘূর্নিতে ফেহলুকওয়াও, রাবাদা দ্রুত ফিরায় ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় প্রোটিয়ারা। এরপর ব্যক্তিগত ৫৭ বলে ৩ ছক্কা ও ৮ চারে ৭৯ রানে মিরাজের বলে স্টাম্পিং হয়ে মিলার ফিরলে ম্যাচে তখন বাংলাদেশের জয় সময়ের ব্যাপার। শেষ পর্যন্ত ৭ বল বাকি থাকতে ২৭৬ রানে থামে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।

সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ

বাংলাদেশ – ৩১৪/৭ (৫০ ওভার); সাকিব ৭৭(৬৪), ইয়াসির ৫০(৪৪), লিটন ৫০(৬৭); জানসেন ১০-০-৫৬-২, মহারাজ ১০-০-৫৬-২।

দক্ষিণ আফ্রিকা – ২৭৬/১০ (৪৮.৫ ওভার); ডুসেন ৮৭(৯৮), মিলার ৭৯(৫৭), বাভুমা ৩১(৫৫); তাসকিন ১০-১-৩৬-৩, মিরাজ ৯-০-৬১-৪, শরিফুল ৮-০-৪৭-২।

ফলাফলঃ বাংলাদেশ ৩৮ রানে জয়ী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link