এই ৪ মাস আগেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল ইংল্যান্ড। আর সেই ইংল্যান্ডকেই কিনা এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ হারালো বাংলাদেশ! কিছুটা অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় ব্যাপারই বটে। ব্যাপারটা এমন নয় যে, ইংল্যান্ড তুলনামূলক কম শক্তিধর দল নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল।
মোটেই এমন নয়। ইনজুরি আক্রান্ত আর টেস্ট ক্রিকেট খেলা ক্রিকেটার বাদ দিলে বিশ্বকাপের সিংহভাগ সদস্যই বাংলাদেশ সফরে এসেছিল। বরং তুলনামূলক কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আর তারুণ্য নির্ভর দল গড়েছিল বাংলাদেশ। তাই সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এমন পরাশক্তির বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে আশাবাদী হওয়ার মতো তেমন কিছু ছিল না বললেই চলে। কিন্তু অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই সিরিজে আধিপত্য দেখালো বাংলাদেশ।
প্রথম ম্যাচটা পূর্ণ আধিপত্য বিস্তার করে জয়। এরপরের লো স্কোরিং ম্যাচে লড়াইটা হলো বেশ। কিন্তু জয়টা পেল বাংলাদেশই। এমন ম্যাচ জয়ের পরে স্বভাবতই খুশি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তবে মিরপুরের এ ম্যাচ জেতার পিছনে কৃতিত্ব দিয়েছেন মিরাজ আর শান্তর ব্যাটিংকে।
ম্যাচ শেষে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমরা বোলিংয়ে ভাল করেছি। ফিল্ডিং তো আগের ম্যাচের চেয়েও ভাল ছিল। বোলিংয়ের সময় ওদের কোনো সুযোগই দিইনি। তাই প্রত্যাশিত ফল এসেছে। আর ব্যাটিংয়ের কথা বলতে গেলে, শান্ত দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছে। এই উইকেটে ব্যাট করা বেশ কঠিন। একই সাথে মিরাজের মতো ১৫-২০ রানের ইনিংসও এমন পরিস্থিতিতে ম্যাচ জেতাতে সহায়তা করে।’
বল হাতে ৪ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ ২০ রানের ইনিংস খেলেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। অলরাউন্ড নৈপুণ্যের কারণে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও গিয়েছে মিরাজের হাতে। ম্যাচ সেরা পুরস্কার নিতে গিয়ে জানিয়েছেন নিজের প্রতিক্রিয়াও।
এই ম্যাচ খেলার আগে বেশ দ্বিধায় ছিলেন বলে মন্তব্য করে বলেন, ‘আমি অনেক দিন পর দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নেমেছিলাম। তাই নিজের রোল সম্পর্কে শুরুতে দ্বিধায় ছিলাম। তবে কোচিং স্টাফ আর অধিনায়ক আমাকে সহযোগিতা করেছে। আমি উইকেটে শুধু লাইন ঠিক রেখে বল করতে চেয়েছি। এর বাইরে কিছু না আর ব্যাটিংয়ের সময় শুরু থেকেই স্ট্রাইক রোটেট করতে চেয়েছিলাম। আর বাজে বল গুলো হিট করতে চেয়েছি। ম্যাচে আমি সেটাই করেছি।’
ম্যাচের পালাবদলে মিরাজের মত বড় ভূমিকা আছে শান্তরও। শান্তও কৃতিত্ব দিলেন মিরাজকে, ‘ওই সময় দু’টো ছক্কা, আর ১৫-১৬ বলে ২০ টা রান আমাদের জন্য খুবই জরুরি ছিল। আমাদের চাপ অনেকটা কমে গিয়েছিল ওই জায়গায়। বিশেষ করে আমি নিজে অনেক চাপমুক্ত হই।
এক ম্যাচ বাকি থাকতেই থ্রি লায়ন্সদের সিরিজ হার। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের কাছে বিরাট ধাক্কাই বটে। গত বছরে জুলাইয়ের দীর্ঘ নয় মাস পর এই প্রথম তারা কোনো টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারলো। খুব স্বাভাবিকভাবেই হতাশ হওয়ার কথা ইংলিশ দলপতি জশ বাটলারের। তবে বাটলার কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশকে।
ম্যাচ শেষে গিয়ে বলেন, ‘কঠিন ম্যাচ ছিল। উইকেট কঠিন থাকলেও বেন ডাকেট ভাল খেলছিল। কিন্তু ও আউট হয়ে যাওয়াতে আমরা ছিটকে যাই। আর পুরো কৃতিত্ব বাংলাদেশের। আমরা ভাল বোলিং করেছি। আর বোলারদের এমন প্রচেষ্টা নিয়ে আমি গর্ব করি।’
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এ সিরিজ জয় ছুঁয়েছে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফিকেও। তরুণদের নিয়ে গড়া দলের এমন জয়ের বেশ উচ্ছ্বাসই প্রকাশ করেছেন তিনি। নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, এবার ইংল্যান্ড। দেশের মাঠে বড় তিনটি দলকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারালো বাংলাদেশ।
তবে এই জয়টা একটু আলাদা। কারণ, তরুণদের নিয়ে যেভাবে দলটা গড়েছে, সেটা এক কথায় অসাধারণ। টি-টোয়েন্টি দলকে ঢেলে সাজানো দরকার ছিল, হাতুরুসিংহে এবং সাকিব দারুণভাবে সেই কাজটা করেছে। ভালো উইকেটে এই দলটারও কঠিন সময় আসবে, কিন্তু সবার ধৈর্য্য রাখা জরুরী।
তরুণদেরকে এই ফরম্যাটে খেলার সুযোগ করে দিতে হবে এবং এর মধ্য দিয়েই আস্তে আস্তে দারুণ একটা দল হবে ইনশাআল্লাহ। অনেক দেরিতে হলেও এই পরিবর্তনটা টি-টোয়েন্টিতে খুব প্রয়োজন ছিল।’