বুনো এক উল্লাসে মাতোয়ারা পুরো বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের খেলোয়াড়েরা। কেনই বা উল্লাস করবেন না? কত বঞ্চনা, কত তিরস্কার, কত কটু কথা সহ্য করে তবেই না নেওয়া গেল মধুর এক প্রতিশোধ। বার্সেলোনা হারিয়ে গেছে এমন এক সরগোল উঠেছিল ইউরোপের ফুটবল অঙ্গন থেক শুরু করে গোটা বিশ্বে। তবে গুটিকতক মানুষ হয়ত বিশ্বাস করেছিল বার্সা আবার ফিরবে তাঁদের স্বরুপে। আবার দাপট দেখাবে ক্লাব ফুটবলে।
বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের উপর ভরসা রাখা অন্যতম ব্যক্তি জাভি। তাঁকে মৌসুমের মাঝপথেই দেওয়া হয়েছিল বার্সেলোনাকে সামলে নেওয়ার দায়িত্ব। একসময়ের কাতালান ক্লাবটির মধ্যমাঠ আগলে রাখতেন। এখন গোটা ক্লাবকে আগলে রাখছেন। দিচ্ছেন দিকনির্দেশনা। সেই নির্দেশনায় যে ভুল নেই সে প্রমাণও তো দিনের তপ্ত আলোর মত স্পষ্ট। যে আলোর তাপে পুড়ে ছাই হচ্ছে প্রতিপক্ষ।
জাভি যখন বার্সেলোনার কোচ হয়ে এলেন তখন বার্সেলোনা চরম বিষন্নতায় মগ্ন এক দল। দিকের হদিস নেই, কি করতে হবে, কি করা উচিৎ এসব কিছুই যেন জানা ছিল না কোন খেলোয়াড়ের। তবে সেই পরিস্থিতি বদলেছে। সবার ধারণা ধীরে ধীরে ফিরবে হয়ত বার্সেলোনা। শেষ লিগ ম্যাচগুলো অন্তত সে আভাসই পাওয়া যাচ্ছিলো। কিন্তু বার্সা যে অধীক কালক্ষেপণে অনিচ্ছুক তা তো বোঝা গেল মৌসুমের শেষ এল ক্ল্যাসিকো শেষে।
আহা কি দাপট! আগের সেই বার্সেলোনা যেন ফিরে এসেছে। চিরপ্রতিদ্বন্দী রিয়াল মাদ্রিদকে রীতিমত পাত্তা না দিয়ে দূর্দান্ত এক জয়। রিয়াল মাদ্রিদের ঘর বার্নাব্যু-তে থাকা প্রায় ৬০ হাজার দর্শকের সামনে মাদ্রিদের বিপক্ষে স্রেফ ছেলেখেলা করলো জাভির নতুন বার্সা। তরুণ এবং অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের মিশ্রণের দারুণ এক দল গুণে গুণে চার খানা গোল পুরেছে ফেরান তোরেস, পিয়েরি-এমরিক আউবেমিয়াংরা।
ভাবুন তবে। এই মৌসুমের শুরুতেই যে দল খাবি খাচ্ছিলো সে দল কিনা লিগ টেবিলের শীর্ষে থাকা দলকে তাঁদের ঘরের মাঠে ৪-০ গোল ব্যবধানে হারিয়েছে। অথচ এই সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতেই দিনকতক আগে লিওনেল মেসি, কিলিয়ান এমবাপ্পে, নেইমারদের প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনকে হারিয়েছিল শেষের দিকে ১৭ মিনিটে তিন গোল করে।
তবে সে ম্যাচের নায়ক করিম বেনজেমা ছিলেন না বার্সার বিপক্ষে ম্যাচে। বেনজেমা সামলানোর চাপ ছাড়াই তাই মাঠে নামতে পারে বার্সেলোনা। এখানেই শেষ নয়, মৌসুমের শেষ এল ক্ল্যাসিকোতে প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রে রিয়াল মাদ্রিদের থেকে এগিয়ে ছিল বার্সেলোনা।
জাভি বার্সেলোনার ক্ল্যাসিক ৪-৩-৩ ফরমেশনে নামিয়ে ছিল। তবে বার্সার রক্ষণ রেখা ছিল বেশ উপরে। আর রিয়ালের পায়ে বল রেখে আক্রমণ সাজানোর কোন সুযোগই দেয়নি। পুরোটা সময় চাপ প্রয়োগ করেছে। সে চাপ সামলাতে গিয়ে মাদ্রিদ রক্ষণ ভুল করেছে বারংবার।
আর সেই ভুলের মাশুল হিসেবে চারটি গোল হজম করেছে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। রিয়াল মাদ্রিদ যেন পুরো নব্বই মিনিট অসহায় হয়ে বার্সেলোনার গোছানো ফুটবল উপভোগ করেছে একরাশ বিরক্তি নিয়ে। এই যে মাদ্রিদের মত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বেশ ভাল ব্যবধানের জয় ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ইউরোপের ফুটবলের বার্সেলোনার দাপটে দেখা মিলতে চলেছে অতি শীঘ্রই। এবারের লিগটাও জেতার একটা সমীকরণ এখন অবধি আশা জাগাচ্ছে।
অবশ্য সে পথটা যে খুব সহজ তাও নয়। তবে টানা ১২ ম্যাচ ধরে অপরাজিত বার্সেলোনা আশাই করতে পারে লিগ শিরোপার খুব কাছাকাছি যাওয়ার। মাদ্রিদের সেক্ষেত্রে বেশ কয়েক দফা ভুল করতে হবে। কিন্তু এসব এখন ভিন্ন আলোচনা। এসব কিছু দূরে রেখে কাতালান সমর্থকরা নিশ্চয়ই এখন বেশ আপ্লুত। তাঁদের আবেগের ক্লাব আবার ফিরছে স্বরুপে। তাঁদের ক্লাব আবার দেখাচ্ছে দাপট। এর থেকে আনন্দের উৎস বোধকরি আর কিছু নেই।