ইউরোপা লিগ থেকে বাদ পড়ার পর বার্সেলোনার দু:সময় যেন কেবল দীর্ঘায়িত হচ্ছে। মাঠের বাইরের নানা নেতিবাচক খবরে টালমাটাল ক্লাবকে স্বস্তি এনে দিতে পারতো মাঠের পারফরম্যান্স। কিন্তু মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই থেকে বাদ পড়ার মাসুল হিসেবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ক্লাবটি। ফলে আসন্ন গ্রীষ্মকালীন দলবদলে আক্রমণভাগের কয়েকজন তারকাকে ছেড়ে দিতে পারে ক্লাবটি।
এবারের মৌসুমে বার্সার রক্ষণভাগের যেন পুর্নজন্ম হয়েছে। রোনাল্ড আরাউহো, ক্রিস্টেনসেন, জুলস কুন্দেরা ভরসা জুগিয়েছেন রক্ষণে। কিন্তু বার্সার চিরায়ত আক্রমণভাগই যেন ছন্দহীন এবারের মৌসুমে। এক রবার্ট লেওয়ানডস্কি ছাড়া বলার মতো পারফর্ম করতে পারেননি কেউই। উসমান দেম্বেলে মাঝে ফর্মে ফেরার ইংগিত দিয়েছিলেন। কিন্তু আরো একবার ইনজুরির শিকার হয়ে মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন ফরাসি এই তারকা।
বার্সা কোচ জাভির কপালে তাই চিন্তার ভাঁজ। বাকিদের মাঝে কেবল ব্রাজিলিয়ান উইংগার রাফিনহাই কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছেন। যদিও তাঁর ট্রান্সফার ফি’র তুলনায় সেই মানের পারফরম্যান্স তাঁর কাছে থেকে এখনো পায়নি কাতালানরা। গত মৌসুমে চেলসির সাথে এক প্রকার লড়াই করেই ৬০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে লিডস থেকে তাঁকে দলে ভেড়ায় বার্সা। তবে জাভির ট্যাকটিকসের সাথে তাঁর খেলার ধরণ মিলে যাওয়ায় হয়তো এ যাত্রায় বেঁচে যাবেন রাফিনহা।
অন্যদিকে, মেসির রেখে যাওয়া দশ নম্বর জার্সিধারী আনসু ফাতি মাঝেমধ্যে ঝলক দেখালেও বেশিরভাগ সময়েই ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরেই থাকছেন। অথচ ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে দারুণ পারফরম্যান্স বার্সার আক্রমণভাগের বাঁ প্রান্তটা নিজের করে নিয়েছিলেন এই তরুণ। বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে তাঁর কাঁধে তুলে দেয়া হয়েছিল দশ নম্বর জার্সির ভার। কিন্তু সেই জার্সির ভার তিনি বইতে পারছেন কই!
স্প্যানিশ উইংগার ফেরান তোরেসের অবস্থা সবচেয়ে বাজে। এক সময় ম্যানচেস্টার সিটির ডানপ্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ঝড় তোলা এই উইংগার কাতালান ক্লাবটিতে এসে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। শুরুর একাদশে জায়গা তো হারিয়েছেন, বেঞ্চ থেকে উঠে এসেও কোনো ব্যবধান গড়তে পারছেন না। অথচ ভবিষ্যতের কথা ভেবে বড় অংকের ট্রান্সফার ফি দিয়ে আনা হয়েছিল তাঁকেও।
এবারের মৌসুমের ব্যর্থতা ভুলে বার্সা তাই আগামী মৌসুমের জন্য দল সাজাতে কাজ শুরু করে দিয়েছে। স্প্যানিশ দৈনিকের মতে, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বেলজিয়ান উইংগার ইয়ানিক কারাস্কোর দিকে নজর আছে বার্সার। কারাস্কোকে দলে ভেড়াতে প্রয়োজনে ট্রান্সফার ফি’র পাশাপাশি ফাতি কিংবা তোরেসের একজনকে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত ক্লাবটি।
তাছাড়া ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্ট থেকে আগেই ছিটকে যাওয়ায় বড় অংকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে ক্লাবটিকে। জানা গেছে আগামী মৌসুম শুরুর আগে কমপক্ষে ২০০ মিলিয়ন ইউরোর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় মৌসুম শুরুর আগে তাঁদের সামনে অপেক্ষা করছে ঘোর অমানিশা। ফলে তারকা খেলোয়াড়দের ছেড়ে দেয়ার বিকল্প নেই ক্লাবটির। আর এই তালিকার শুরুতেই আছেন ফাতি এবং তোরেস। এই দুজনকে ছেড়ে দিলে যেমন ট্রান্সফার ফি হিসেবে বেশ কিছু অর্থ পাওয়া যাবে, তেমনি বেতনও বাঁচবে দলটির।
তবে ইউরোপা লিগ থেকে বাদ পড়লেও লা লিগার শীর্ষেই আছে বার্সেলোনা। শেষ ম্যাচে দুর্বল আলমেরিয়ার কাছে হারলেও এখনো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের চাইতে সাত পয়েন্টে এগিয়ে আছে কাতালানরা।