বার্সেলোনার লোগোতে কেন ইংল্যান্ডের পতাকা!
কাতালানরা এ ক্লাবটিকে তাদের স্বকীয়তা ও বীরত্বের প্রতীক হিসেবে মনে করেন। ক্লাবের মনোগ্রামেও সেকথা সু-নিপুণভাবে খোদাই করা আছে। বার্সেলোনার লোগোর দিকে খেয়াল করলে তিনটি ভিন্ন ধরণের মনোগ্রাম দেখতে পাওয়া যায়; এর উপরে বামপাশে রয়েছে সাদা রঙের উপরে রেডক্রসের চিহ্ন, তারপাশে লাল ও হলুদ রঙের কাতালান পতাকা এবং নীচের অংশে ক্লাবের নিজস্ব রঙ লাল ও নীল।সাদা রঙের উপরে রেডক্রসের চিহ্ন সংবলিত প্রতীককে আমরা ইংল্যান্ডের পতাকা হিসেবে চিনি।
বার্সেলোনা বা রিয়াল মাদ্রিদের ভক্তের অভাব এই বাংলাদেশেও নেই। ক্লাবগুলোর লোগো, পতাকা, প্রতীক আমাদের প্রায় সবার মুখস্থ। কিন্তু একটা মজার ব্যাপার কী লক্ষ্য করেছেন? বার্সেলোনার লোগোতে একটা ইংল্যান্ডের পতাকা আছে!
স্পেনের কাতালান রাজ্যের রাজধানী বার্সেলোনা শহরে অবস্থিত শতাব্দী প্রাচীন একটি ক্লাব এফসি বার্সেলোনা। পৃথিবীর অন্যতম সফল কয়েকটি ক্লাবের একটি তারা। কাতালানরা এ ক্লাবটিকে তাদের স্বকীয়তা ও বীরত্বের প্রতীক হিসেবে মনে করেন। ক্লাবের মনোগ্রামেও সেকথা সু-নিপুণভাবে খোদাই করা আছে। বার্সেলোনার লোগোর দিকে খেয়াল করলে তিনটি ভিন্ন ধরণের মনোগ্রাম দেখতে পাওয়া যায়; এর উপরে বামপাশে রয়েছে সাদা রঙের উপরে রেডক্রসের চিহ্ন, তারপাশে লাল ও হলুদ রঙের কাতালান পতাকা এবং নীচের অংশে ক্লাবের নিজস্ব রঙ লাল ও নীল।
সাদা রঙের উপরে রেডক্রসের চিহ্ন সংবলিত প্রতীককে আমরা ইংল্যান্ডের পতাকা হিসেবে চিনি। কিন্তু কাতালানের সাথে ইংল্যান্ডের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত কোন ধরণের সম্পর্কই নেই। আবার দুই অঞ্চলের মধ্যে দূরত্বের ব্যবধানও প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার। তারপরেও কেন বার্সেলোনার লোগোতে ইংল্যান্ডের পতাকার চিহ্ন ব্যবহার হয়? এ প্রশ্নটি আমাদের মনে আসতে পারে।
আসলে এর একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা আছে। সাদা রঙের উপরে রেডক্রসের ছবি হিসেবে আমরা যা দেখি আসলে তা হচ্ছে ইংল্যান্ডের বীর সেন্ট জর্জের ক্রস। তার বীরত্বের সম্মানার্থে তার ব্যবহারিত এই ক্রস চিহ্নিত প্রতীক ইংল্যান্ড জাতীয় পতাকার মর্যাদা দেয়। যা আধুনিক কালের শুরু থেকে আজ অবধি বিদ্যমান আছে। তিনি ইংল্যান্ডের পাশাপাশি কাতালানেও সমানভাবে সম্মানিত; সেখানে তিনি সেন্ট জর্দি নামে পরিচিত। সেন্ট জর্জকে উনিশ শতকে কাতালান রেঁনেসার সময় থেকে কাতালানে বীরত্ব ও সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। বার্সেলোনা সেন্ট জর্জের সম্মানার্থে প্রতি বছর সেন্ট জর্জ দিবস পালন করে।
সেন্ট জর্জের বীরত্ব নিয়ে কাতালানে একটি জনশ্রুতি আছে। তিনি একদা একটি ড্রাগনের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন বলে লোকমুখে এখনো প্রচলিত আছে। অনেক অনেক বছর আগে কাতালানে মন্টব্লাঙ্ক নামে একটি রাজ্য ছিল। সে রাজ্যে একটি ড্রাগন প্রতিনিয়ত হানা দিত এবং মানুষের গবাদি পশুপাখি খেয়ে ফেলত। স্থানীয় মানুষেরা সর্বদা ড্রাগনের ভয়ে অতিষ্ঠ থাকতো। তারা অসহায়ের মত দিন পার করতে লাগলো।
ধীরে ধীরে ড্রাগনটি রাজ্যের সমস্ত পশুপাখি খেয়ে ফেলল। তারপর রাজ্যের সকলে লটারির মাধ্যমে প্রতিদিন একজন করে নরবলি দিত; যাতে ড্রাগনটি পুরো রাজ্যে তার প্রলয়লীলা আর না চালায়। ঘটনাক্রমে একদিন লটারিতে রাজকন্যার নাম চলে আসলো। রাজকন্যাকে প্রথানুযায়ী ড্রাগনের সামনে পাঠানো হল।
ড্রাগন যখনই রাজকন্যাকে খেতে যাবে তখনই সেখানে দৈব্যক্রমে সেন্ট জর্দির আগমন ঘটলো। ড্রাগন ও সেন্ট জর্দির মধ্যে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হল; যুদ্ধে ড্রাগনটি পরাজিত ও নিহত হল এবং ড্রাগনের রক্ত যেখানে পড়েছিল সেখানে একটি লাল গোলাপ গাছের জন্ম হয়েছিল। এ ঘটনার পর থেকেই কাতালানে প্রিয় মানুষকে লাল গোলাপ উপহার দেয়ার প্রচলন শুরু হয়।
এ বীরত্বের কারণে বার্সেলোনার স্থানীয় সরকারের পতাকা ও ফুটবল ক্লাব উভয়ের প্রতীক হিসেবে সেন্ট জর্জের রেডক্রস চিহ্ন ব্যবহারিত হয়ে আসছে। সেন্ট জর্জের সম্মানার্থে প্রতি বছর ২৩ এপ্রিল কাতালানে সেন্ট জর্জ দিবস পালন করা হয়; যাকে কাতালান ভালোবাসা দিবসও বলা হয়।
ইংল্যান্ডের মত তাই বার্সেলোনাও সেন্ট জর্জের প্রতীক বীরত্বের চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করে। এ কারণে ইংল্যান্ডের পতাকা ও বার্সেলোনার লোগোতে সাদা রঙের উপর রেডক্রস চিহ্ন স্থান পেয়েছে।
ইতালির ক্লাব এসি মিলানের লোগোতেও অবশ্য সাদা রঙের উপর রেডক্রসের চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু ইংল্যান্ড ও বারর্সেলোনার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। মিলান এ ক্রস ব্যবহার করে চতুর্থ শতাব্দীর খ্রিস্টান ধর্মযাজক সেন্ট অ্যামব্রোসের সম্মানার্থে; যিনি ৩৭৪ থেকে ৩৯৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মিলান শহরের প্রধান ধর্মযাজক ছিলেন।
– গোল.কম অবলম্বনে