উত্তেজনায় মোড়ানো একটা ম্যাচ; শুধু মাঠের খেলায় নয়, খেলার বাইরেও ছড়িয়েছে উত্তেজনা। মাঠে সাকিব আল হাসানের অপ্রত্যাশিত প্রবেশ, আম্পায়ের ভুল সিদ্ধান্ত আর দুই দলের সমানে সমানে লড়াই। শেষ পর্যন্ত অবশ্য রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ৬ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে টুর্নামেন্টের ফেভারিট ফরচুন বরিশাল।
রংপুর আর বরিশাল দুই দলই এবারের বিপিএল শুরু করেছে ভিন্ন ধারায়। নিজেদের প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী কুমিল্লাকে উড়িয়ে দিয়েছিল নুরুল হাসান সোহানের দল। অন্যদিকে, ১৯৪ রানের পাহাড় গড়েও সিলেটকে আটকাতে পারেনি বরিশাল। তাই তো দ্বিতীয় ম্যাচে সাকিব, মিরাজরা খেলতে নেমেছিলেন ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে। আর তাতে সফলও হয়েছেন তাঁরা।
টসে হেরে সাকিব আল হাসানের আমন্ত্রণে আগে ব্যাট করতে নামে রংপুর রাইডার্স। আর প্রথম বলেই নিজের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রমাণ করেন সাকিব, তুলে নেন নাইম শেখের উইকেট। তবে আগের ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান রনি তালুকদার এই ম্যাচেও ছিলেন দারুণ ছন্দে। পাঁচ চার আর এক ছয়ে মাত্র ২৮ বলে করেছেন ৪০ রান। চতুরাঙ্গা ডি সিলভার বলে আউট হওয়ার আগে দলকে এনে দিয়েছিলেন বড় রানের ভিত।
রনি তালুকদার আউট হওয়ার পরেও ১৭০ রান খুব সহজেই করতে পারতো রংপুর রাইডার্স; কিন্তু মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় তেমন বড় স্কোর গড়তে পারেনি দলটি। একমাত্র শোয়েব মালিক ছিলেন অবিচল, বাকিরা সবই আসা-যাওয়ার মিছিলে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি তারকার অপরাজিত অর্ধ শতকের উপর ভর করে ১৫৮ রানের মাঝারি পুঁজি পায় রংপুর।
বল হাতে দুই উইকেট পেয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ এবং ডি সিলভা। এছাড়া সাকিব আল হাসান, কারিম জানাত, এবাদত হোসেন শিকার করেছেন একটি করে। তবে স্পিনারদের তুলনায় পেসাররা একটু বেশিই রান বিলিয়েছেন।
১৫৮ রানের জবাবে ব্যাট করতে নামা ফরচুন বরিশালের শুরুটা হয় নাটকীয়তায় ভরা। ডানহাতি এনামুল বিজয় নাকি বাঁ-হাতি চতুরাঙ্গা ডি সিলভা কে স্ট্রাইক নিবেন, আবার ডানহাতি শেখ মাহেদী নাকি বামহাতি রকিবুল হাসান কে বল করবেন – এসব নিয়ে বাইশ গজেই ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। এসময় মাঠেই নেমে আসেন অধিনায়ক সাকিব, পরে আম্পায়ারদের হস্তক্ষেপে সমাধান হয় সমস্যার।
অবশ্য উদ্বোধনী জুটি থেমে যায় প্রথম ওভারে, লঙ্কান ব্যাটারকে থামান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের তারকা রকিবুল হাসান। এরপর বিদায় নেন এনামুল হক বিজয়ও, তবে তাঁর আউট নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট বিতর্ক। দুই ওপেনারকে হারালেও পথ হারায়নি বরিশাল। ইব্রাহিম জাদরান এবং টপ অর্ডারে জায়গা পাওয়া মেহেদি মিরাজ দুইজন মিলে এগিয়ে নেন দলকে।
২৯ বলে ৪৩ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে মিরাজ আউট হলে দুই ডানহাতির জুটি ভাঙ্গে। নিজের ফিফটি পূর্ণ করে ফিরে যান ইব্রাহিমও। তবে কোন অঘটন ঘটতে দেননি আরেক আফগান করিম জানাত। ইফতেখার আহমেদের সাথে ৩৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে বরিশালকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন এই অলরাউন্ডার।
ম্যাচের প্রথম ভাগের মত এই ভাগেও স্পিনাররা ছিলেন দুর্দান্ত। রকিবুল, সিকান্দার রাজারা দারুণ বোলিং করলেও পেসাররা অবশ্য ছিলেন নখদন্তহীন। যদিও তিন স্পিনারের বারো ওভার ব্যবহার করতে পারলে হয়তো আরেকটু লড়াই করতে পারত রংপুর।
পয়েন্ট টেবিলে এখন বরিশাল আর রংপুর দুই দলের অবস্থান প্রায় একই। দুই ম্যাচে একটি করে জিতেছে উভয়ই, যদিও নেট রান রেটে এগিয়ে আছে একবারের বিপিএল চ্যাম্পিয়নরা। আপাতত দুই দলেরই নজর থাকবে টুর্নামেন্টের চট্টগ্রাম পর্বে, সেখানে জয় ছাড়া ভিন্ন কিছু নিশ্চয়ই ভাববে না কেউই।