Social Media

Light
Dark

তামিমের বিকল্প ঠিক করে ফেলার এখনই সময়

তর্কের খাতিরে ধরেই নেওয়া যাক, তামিম ইকবাল খান আর জাতীয় দলে ফিরছেন না। তার অবর্তমানে বাংলাদেশ দলের ওপেনিং পজিশন কি থমকে যাবে? নিশ্চয়ই না। আবার ধরুণ তিনি ফিরলেন, ওয়ানডে ক্রিকেটে। ২০২৫ পরবর্তী সময়ে তিনি খেলা চালিয়ে যাবেন- সে নিশ্চয়তা নিশ্চয়ই নেই। তাইতো তামিমের বিকল্প শুধু খোঁজা নয়, তাকে প্রস্তুত করে ফেলাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

ads

২০২৭ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজিত হবে আফ্রিকায়। সেখানে বাংলাদেশের রয়েছে সুখস্মৃতি। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিল টাইগার যুবারা। সেই দলের বেশ কয়েকজন বর্তমান বাংলাদেশ দলের কাণ্ডারি। সেই দল থেকে উঠে আসা তানজিদ হাসান তামিমকে ভাবা হয়েছিল তামিম ইকবালের যোগ্য উত্তরসূরী।

কিন্তু দুইটি ভিন্ন ফরম্যাটের বিশ্বকাপ খেলে ফেলা তানজিদ প্রত্যাশার সুবিচার করতে পারেননি। তাইতো প্রশ্ন আবারও হয়েছে ঘনিভূত, কে হবেন তামিমের স্থলাভিষিক্ত? তাছাড়া সমস্যা রয়েছে ভিন্ন জায়গায়। লিটন কুমার দাস্ দীর্ঘ একটা সময় ধরে বাজে পারফরমেন্সের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। হয়ত তিনি আবার স্বরুপে ফিরবেন। কিন্তু সেটারও নিশ্চয়তা নেই।

ads

তার ফর্ম যে আবার ২০২৭ সালের বিশ্বকাপের আগে আবার নিম্নগামী হবে না- সে গ্যারান্টিও তো দেওয়া সম্ভব নয়। তাইতো এক সেট ওপেনার তৈরি করে রাখার এটাই মোক্ষম সময়। তৈরি করার ক্ষেত্রে তানজিদ তামিমই হয়ত প্রাধান্য পাবেন বেশি। যেহেতু তামিমের পরিবর্তে একজন বা-হাতি ওপেনারকেই চাইবে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট।

অবশ্য বা-হাতি ওপেনার চাহিদা মেটানোর অপেক্ষায় আছেন আরও দুইজন। একজন জাকির হাসান, অন্যজন পারভেজ হোসেন ইমন। বাকিদের চাইতে জাকির অবশ্য ওপেনিং পজিশনের দাবিটা জোরাল করতে পারেন। কেননা প্রায় ১১৮টা লিস্ট এ ম্যাচ ইতোমধ্যেই খেলে ফেলেছেন জাকির। ৪ শতকের বিপরীতে ২২টি অর্ধশতক রয়েছে।

৩৩৫২ রান রয়েছে তার নামের পাশে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। টি-টোয়েন্টিও খেলেছেন বাংলাদেশের হয়ে। এমনকি ওয়ানডেতেও তিনি মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছেন। যদিও বাকি দুই ফরম্যাটের চাইতে টেস্ট ক্রিকেটে জাকিরের পারফরমেন্স সন্তোষজনক। সেখানে ১টি সেঞ্চুরি করেছেন। ৭ ম্যাচে ৪টি হাফসেঞ্চুরি করেছেন।

অতএব অভিজ্ঞতা বিচারে তিনি প্রাধান্য পেতেই পারেন। কিন্তু সেদিক বিবেচনায় আবার তানজিদ তামিম ঢের এগিয়ে। কেননা তিনি ইতোমধ্যেই তিনটি বড় টুর্নামেন্ট খেলে ফেলেছেন। এশিয়া কাপ, ওয়ানডে বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেয়াল্র অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছেন তানজিদ তামিম। ৫০ ওভারের দুইটি টুর্নামেন্ট খেলা তানজিদ, ১১ ম্যাচে সর্বসাকুল্যে ১৫৮ রান। একটি ফিফটির কল্যাণে এই রান সংগ্রহ করেছেন তিনি।

অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে ৭৬ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। অথচ যে ২০২৩ এশিয়া কাপের ঠিক আগে ইমার্জিং এশিয়া কাপে ৪ ম্যাচে ১৭৯ রান করেছিলেন তিনি। ১১৪ স্ট্রাইকরেটের সেই ইনিংসগুলোর কল্যাণেই জাতীয় দলের ডাক অতিদ্রুতই পেয়ে যান। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সি গায়ে বড্ড মলিন তরুণ এই ব্যাটার।

মলিনতা ছেয়ে আছে অবশ্য পারভেজ হোসেন ইমনের উপর। তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন জাতীয় দলের হয়ে। সেখানে নিজের পারফরমেন্সের ছাপ ফেলতে পারেননি। অগ্যতা তাকে জাতীয় দল ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে হয়েছে। যদিও ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি নিয়মিত পারফর্মারদের একজন। জাতীয় দলের সন্নিকটে থাকা প্রতিটি ক্যাম্পে নিয়মিত ডাক পান তিনি।

সেজন্য অবশ্য প্রভাবক হিসেবে কাজ করে তার পারফরমেন্স। সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ মাতিয়ে রেখেছিলেন তরুণ এই ব্যাটার। ৩ সেঞ্চুরি ও ২ হাফসেঞ্চুরিতে ৬২৩ রান নিয়ে হয়েছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। অবশ্য ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই রানের দেখা পেয়ে থাকেন ইমন। লিস্ট এ ক্যারিয়ারে ১৮৩৩ রান করেছেন তিনি। ৫৩টি ভিন্ন ম্যাচ পরিস্থিতি সামলেছেন। তাইতো তাকেও বিকল্প হিসেবে প্রস্তুত করা যায়।

এখন প্রশ্ন হতেই পারে এই প্রস্তুতির মঞ্চটা কি হবে? সে প্রশ্নের সহজ উত্তর হচ্ছে জাতীয় দল। বেশ রুঢ় হলেও সত্য, বাংলাদেশের পাইপলাইন সমৃদ্ধ হওয়ার জন্যে যথেষ্ট ‘রিসোর্স’ খেলোয়াড়দের কাছে থাকে না। ঘরের মাঠে টুর্নামেন্টের সংখ্যা নেহায়েত হাতেগোনা। তাছাড়া সেসবের মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। তাছাড়া হাই পারফরমেন্স ও বাংলা টাইগার্স নামক চলা ক্যাম্পগুলোতে স্রেফ অনুশীলনই হয়। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের সংখ্যা সামান্যই।

একই দশা বাংলাদেশ এ দলের ক্ষেত্রেও ঘটে। ঠিক সে কারণেই জাতীয় দলই আন্তর্জাতিক মানের ব্যাটার হয়ে গড়ে ওঠার একমাত্র অবলম্বন। এই তিনজনকে প্রস্তুত করার রাস্তাটা সংকীর্ণ হবে। কিন্তু সেটা ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপায় নেই। এক্ষেত্রে তরুণ এই তিন ওপেনারের মাঝে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

আসন্ন ওয়ানডে সূচিতে, ক্ষেত্র বিশেষে এদের প্রত্যেককেই বাজিয়ে দেখা যেতে পারে। তাতে করে তাদের কাছেও পৌঁছানো যাবে একটা বার্তা- ‘তুমি কিন্তু একা নও’। সেক্ষেত্রে হয়ত তারা প্রত্যেকেই নিজেদের সেরাটা যতদ্রুত বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা চালাতে পারে। তাছাড়া নিজেদের ভুলচুকগুলো শুধরে ফেলার, অতিরিক্ত পরিশ্রম করবার মানসিকতাও হতে পারে জাগ্রত।

তিনজনের প্রত্যেকেরই রয়েছে দূর্বলতা। একমাত্র প্রতিযোগিতাই পারে তাদেরকে সেরা হিসেবে গড়ে তুলতে। ‘আমার বিকল্প নেই’ এমন মানসিকতা একবার মস্তিষ্কে ঘর বেঁধে ফেললে তা হবে বাংলাদেশের জন্যে বিশাল ক্ষতি। এবার অন্তত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে একটু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিতেই হবে। যদিও বিসিবি সর্বদাই স্বল্প সময়ের মধ্যে সাফল্যের সন্ধান করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link