বিসিবির লেজেগোবরে সভা ও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য

কেন হয়নি? উত্তর হতে পারে একটাই, বিসিবি একটা চরম অপেশাদার সংস্থা। বোর্ড কর্তাদের নিজেদের মধ্যেই কমিউনিকেশন গ্যাপ এক সমুদ্র।

ওয়ানডে অধিনায়কের নাম আর ২-৩ দিন পরে জানালে এমন কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না। এমনিতেও দেরি হয়েই গেছে। তবে গোটা ব্যাপারটিতে বিসিবি যেভাবে এলোমেলো হয়ে পড়েছে এবং যেভাবে সামলানোর চেষ্টা করছে, তাতেই বোঝা যায় কতটা অপেশাদার সংস্থা এটি। আজকে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের জরুরি সভা ছিল, শুধুমাত্র অধিনায়ক নির্বাচন করার জন্যই। কিন্তু সেই সভায় প্রসব হলো অশ্বডিম্ব!

সভা শেষে জানানো হলো, অধিনায়ক নির্বাচনের জন্য বিসিবি পরিচালকরা দায়িত্ব দিয়েছেন বিসিবি সভাপতিকে। তিনি নাকি কথা বলবেন নেতৃত্বের বিবেচনায় থাকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে। এটার জন্য জরুরি সভা করতে হলো? ভাবটা এমন, এতদিন যেন এই দায়িত্ব বোর্ড সভাপতির ছিল না!

বরাবরই তো তিনিই এসব ঠিক করেন। গত বৃহস্পতিবার তামিম ইকবাল পদত্যাগ করার পরই বোর্ড সভাপতি বলেছিলেন, দু-একজনের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি নতুন অধিনায়ক ঠিক করে ফেলবেন। আজকে আবার জরুরি সভায় ঘটা করে তাকে দায়িত্ব দিতে হলো কেন!

এমন নয় যে জরুরি সভায় অধিনায়কত্ব চূড়ান্ত করে ফেলতেই হবে। অনেক কারণে তা আরও পিছিয়ে যেতেই পারে। অনেক ঝামেলাই থাকতে পারে, যেটা তারা খোলাসা করতে চান না বা খোলাসা করার উপায় নেই। মিডিয়ায় সেসব বলা জরুরিও নয়। কিন্তু এই যে তারা ঠুনকো একটি যুক্তি দেখালেন, হাস্যকর একটি কারণ তুলে ধরলেন, এতেই ফুটে ওঠে তারা কতটা অপেশাদার এবং তাদের কথায় কতটা ফাঁক আছে।

গত ৫ দিনেও সাকিব আল হাসান, লিটন কুমার দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে কেন কথা বলা গেল না? ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস জানালেন, আজকে থেকে বোর্ড সভাপতি ওই তিনজনের সঙ্গে কথা বলবেন। এই ৫ দিন ধরে তাহলে কি কথা বলার জন্য নেট প্র্যাকটিস চলছিল নাকি কোনো গবেষণাপত্র তৈরি করা হচ্ছিল!

ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জানালেন, তাদের নিজেদের মধ্যেও কিছু আলাপ-আলোচনার ব্যাপার ছিল। খুবই স্বাভাবিক, তা থাকবেই। কিন্তু সেসব কত বিপুল, কতটা বিশদ আলোচনা যে ৫ দিন লেগে গেল নিজেদের মধ্যে আলোচনা শেষ করতে? সিরিজ আলোচনা চলছিল? ৫ ম্যাচের অ্যাশেজ আলোচনা?

এসব প্রশ্নের চেয়েও ভয়াবহ একটা ব্যাপার অবশ্য আছে। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান বলেছেন, যেহেতু আমাদের সামনে এশিয়া কাপটা আছে, আমরা চাচ্ছি আগে এশিয়া কাপের অধিনায়ক ঘোষণা করি। যেহেতু আমাদের ১২ তারিখ মধ্যে দিতে হবে (এশিয়া কাপের দল), সেজন্য ১২ তারিখের মধ্যে এশিয়া কাপের অধিনায়কত্ব দেওয়া হবে। আমাদের দলও দেওয়ার ব্যাপার আছে সেই সাথে। যেহেতু বিশ্বকাপের জন্য ৫ সেপ্টেম্বর শেষ সময় (দল ঘোষণা করার), তার আগে আমরা চাচ্ছি যে ভেবেচিন্তে পরবর্তীতে বিশ্বকাপের অধিনায়ক ঘোষণা করতে।’

তার মানে, এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের অধিনায়ক আলাদাও হতে পারে! এই প্রশ্নে তিনি বললেন, ‘এশিয়া কাপের অধিনায়কেরই তো চালিয়ে যাওয়া উচিত…’ পরে তিনি আরেক দফায় বলেছেন, ‘আগে এশিয়া কাপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব ও অধিনায়কত্ব চূড়ান্ত করব আমরা।’ পরে আরেক প্রশ্নে আবার তিনিই বলেছেন, ওয়ানডে অধিনায়ক যে হবেন, সামনে এশিয়া কাপ, দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ড সিরিজ ও পরে বিশ্বকাপ, তিনটি আসরে সে চালিয়ে যাবে দায়িত্ব।

তার নিজের কথাই বারবার সাংঘর্ষিক। মানে কি? মানে হলো, একদম লেজেগোবরে অবস্থা। যা-তা অবস্থা। পুরোই এলোমেলো। বিসিবি তাদের চিন্তাভাবনায় পরিষ্কার নয়। একদমই স্বচ্ছ নয়। হ্যাঁ, অধিনায়কত্ব নিয়ে একটা জটিলতার কথা শুনেছি, যেটা আসলে বিসিবির জন্যও একটু কঠিন ছিল। সেটা যদি সত্য হয়, বিসিবির পক্ষে তা খোলাসা সম্ভব নয়, আমাদের পক্ষেও সম্ভব নয়। কিন্তু সেই জটিলতাও এমন নয় যে, সমাধান করা অসম্ভব। বরং এতদিনে সমাধান হয়েই যাওয়ার কথা। স্রেফ দু-তিনটি জায়গায় খোলামেলা কথা বলার ব্যাপার।

কেন হয়নি? উত্তর হতে পারে একটাই, বিসিবি একটা চরম অপেশাদার সংস্থা। বোর্ড কর্তাদের নিজেদের মধ্যেই কমিউনিকেশন গ্যাপ এক সমুদ্র।

– ফেসবুক থেকে

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...