করোনা ভাইরাসের কালে বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) মত দু:খী প্রতিষ্ঠান ভারতীয় উপমহাদেশে কমই আছে। সময়মত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) আয়োজন করা যায়নি বলে এমনিতেই সৌরভ গাঙ্গুলিরা অনেক অর্থের লোকসান করে ফেলেছেন। আর চলতি বছর আদৌ যদি ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজিত না হয়, তাহলে মোট ক্ষতির পরিমান হবে চার হাজার কোটি রুপি।
তবে, এটুকু হলে ঠিক ছিল। নতুন দুশ্চিন্তা এসে ভর করেছে বোর্ডে। আর তার সূত্রপাত ভারতের সাথে চীনের চলমান রাজনৈতিক বৈরীতা থেকে। লাদাখে ভারত-চীন সীমান্তে দুই দেশের নিরাপত্তারক্ষীদের সংঘর্ষ হয়। এতে ২০ জন ভারতীয় সৈনিক নিহত হয়। চীনের সৈনিকও মারা গিয়েছে।
ভারতের নাগরিকরা এই সংঘর্ষে ক্ষেপে গেছেন। সেটা খুব স্বাভাবিকও। চীনা পন্য বর্জনের ডাকও এসেছে। আর এই অবস্থায় কঠিন বিপদে পড়েছে বিসিসিআই। খোদ আইপিএলেরই টাইটেল স্পন্সর যে চীনা মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভিভো।
এই অবস্থায় প্রথমে বিসিসিআই খুব ‘বিপ্লবী’ অবস্থান নিয়েছিল। যে করেই হোক ভিভো’র সাথে সম্পর্ক ধরে রাখতে মরিয়া ছিল তাঁরা। বিসিসিআইয়ের কোষাধ্যক্ষ অরুণ ধামাল বাস্তবতা বোঝার আহবান জানিয়েছিলেন।
বলেছিলেন, ‘আবেগ দিয়ে ভাবলে অনেক সময়ই যুক্তিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আমাদের বুঝতে হবে যে, চীনের স্বার্থে চীনের সংস্থাকে সাহায্য করা আর ভারতের স্বার্থে চীনের অর্থনীতির সাহায্য নেওয়ার মধ্যের পার্থক্য রয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত ভিভোর সঙ্গে চুক্তি রয়েছে বোর্ডের। প্রত্যেক বছর ভিভোর থেকে বোর্ডের আয় ৪৪০ কোটি টাকা। চীনের কোম্পানি আইপিএলে জন্য অর্থ ব্যয় করলে তাতে দেশেরই লাভ।‘
মানে ভিভোর বিপুল অর্থের হাতছানিটা এড়াতে পারছিল না বিসিসিআই। তবে, জনমতের বিরুদ্ধে যাওয়া কিছুটা হলেও নতি স্বীকার করতে বাধ্য হল সংস্থাটি। বাধ্য হয়ে আগামী সপ্তাহে জরুরী বৈঠক ডেকেছে আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিল।
অরুণ ধামাল বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যত যেকোনো চুক্তির ক্ষেত্রে আমরা দেশ ও মানুষের মনে কথাকে বিশেষ গুরুত্ব দিবো। দেশের জনগনের মত চাইনিজ পণ্য বয়কটের সাথে একমত বিসিসিআইও। বিসিসিআই এখন থেকে চীনের পরিবের্ত ভারতীয় কোম্পানিগুলোর দিকে নজর দিবে। ভবিষ্যতে কোনো চাইনিজ প্রতিষ্ঠানের সাথে কোনো চুক্তিতে যাবে না বিসিসিআই। তবে বর্তমানে ভিভোর সাথে যে চুক্তি রয়েছে তা আপাতত ভাঙ্গা যাবে না।’
ভিভোর সাথে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত চুক্তি রয়েছে আইপিএলের। গেল ২০১৮ সালে দুই হাজার ১০৯ কোটি রুপির বিনিময়ে পাঁচ বছরের জন্য আইপিএলের টাইটেল স্পন্সর কিনে নেয় চীনা প্রতিষ্ঠান ভিভো।
এমন অবস্থায়, বিসিসিআই যদি ভিভো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে দু’টি বিপদ সামনে অপেক্ষা করছে। প্রথমত, অপেশাদার আচরণের জন্য বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহ হারাবে আইপিএলে। আর দ্বিতীয়ত, ভিভো ব্যাপারটা ‘সিরিয়াসলি’ নিয়ে যদি পাল্টা মামলা করে দেয় তাহলে ‘আম আর ছালা’ দু’টোই যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।