ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া দ্বৈরথ, বাইশ গজের ইতিহাসে এ যেন এক কুলীন লড়াইয়ের নাম। তবে ১৯৮৭ বিশ্বকাপ জিতে বৈশ্বিক অর্জনে ইংল্যান্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। শুধু তাই নয়, ঐ বিশ্বকাপের পর টানা ৩ অ্যাশেজ জিতে রীতিমত অপরাজেয় হয়ে উঠেছিল অ্যালান বোর্ডারের দল।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে এমন টানা অসহায় আত্মসমর্পণে বিষিয়ে তুলেছিল ইংল্যান্ডকেও। তাই প্রতিশোধের মঞ্চ হিসেবে ইংলিশদের চোখ ছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে। বহুদিন বাদে ইংলিশ শিবির একটা উৎসবের উপলক্ষ্য পেয়ে যায় সেই বিশ্বকাপেই। যদিও ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে সেই উৎসবটা আর পূর্ণতা পায়নি শেষ পর্যন্ত।
তবে, ইয়ান বোথামের অলরাউন্ডিং নৈপুণ্যে সেবার অস্ট্রেলিয়াকে একেবারে ধসিয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ড। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে কখনোই ফাইফারের স্বাদ পাননি ইয়ান বোথাম।
আবার বিশ্বকাপের মঞ্চে ততদিন পর্যন্ত কখনোই কোনো ইনিংস পঞ্চাশ ছোঁয়া হয়নি কিংবদন্তি এ অলরাউন্ডারের। অস্ট্রেলিয়ারের বিপক্ষে সে ম্যাচে ফাইফার না পেলেও ক্যারিয়ার সেরা বোলিং আর বিশ্বকাপের প্রথম ফিফটি আসে ঐ এ ম্যাচের মাধ্যমেই।
অবশ্য ম্যাচের দৃশ্যপটটা কিন্তু শুরুতে ইংল্যান্ডের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ ছিল না। বরং অ্যালান বোর্ডার আর ইয়ান হিলি মিলে দারুণ একটা জুটি গড়ার পথেই ছিলেন। দলীয় ১৪৫ রানে ৪ উইকেট থাকা অবস্থায় ব্যাটিং করছিলেন এ দুই ব্যাটার।
তবে, এরপরই ইয়ান বোথামের এক দমকা হাওয়ায় রীতিমত উড়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন আপ। পরের ২৬ রান তুলতেই অস্ট্রেলিয়া হারিয়ে ফেলে শেষ ৬ টি উইকেট। যার মধ্যে ৪ টি উইকেটই নেন ইয়ান বোথাম।
শুরুটা অ্যালান বোর্ডারকে বোল্ড করে। এরপর একে একে তুলে নেন ইয়ান হিলি, পিটার টেইলর, ক্রেইগ ম্যাকডরমেটের উইকেট তুলে নেন এ ইংলিশ অলরাউন্ডার। ১০ ওভারে সে দিন ৩১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগারে পৌঁছে যান বোথাম। আর তাঁর এমন বোলিং তাণ্ডবেই ১৭১ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
ইয়ান বোথাম সেদিন শুধু বল হাতে পারফর্ম করেই ক্ষান্ত থাকেননি। ১৭২ রান তাড়া করতে ওপেনিংয়ে নেমে খেলেন ৫৩ রানের ইনিংস। যা বিশ্বকাপে বোথামের একমাত্র ফিফটি হয়ে আছে। বোথামের মতো সেদিন ফিফটি পেয়েছিলেন অধিনায়ক গ্রাহাম গুচ।
যার পরিপ্রেক্ষিতে ইংলিশদের সাথে সেদিন ন্যূনতম প্রতিরোধও গড়তে পারেনি অস্ট্রেলিয়ানরা। ইংলিশদের কাছে তারা হেরে যায় ৮ উইকেটে। ৩১ রানে ৪ উইকেট ও ব্যাট হাতে ৫৩ রান। ইয়ান বোথামের এমন অলরাউন্ডিং নৈপুণ্য সেই সময় পর্যন্ত বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা পারফরম্যান্স হিসেবেই বিবেচিত হতো।
কারণ এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক ম্যাচে ফিফটির পাশাপাশি ফাইফারের কীর্ত রয়েছে শুধু দুজনের। তাঁরা হলেন যুবরাজ সিং (২০১১) আর সাকিব আল হাসান (২০১৯)। অর্থাৎ শেষ শতকের বিশ্বকাপে ইয়ান বোথামের এই পারফরম্যান্সটি ছিল অন্যতম সেরা।
বিশ্বকাপের ইতিহাস বাদ দিলেও ততদিনে ইয়ান বোথাম ক্রিকেটে অমরত্ব পেয়ে গিয়েছিলেন। তবে বলা হয়ে থাকে, বৈশ্বিক মঞ্চেই কিংবদন্তিরা আসল খেল দেখান। ইয়ান বোথাম সেই অপূর্ণতাটা রাখেননি।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেদিন এমন অতিমানবীয় পারফর্ম করে বিশ্বকাপ মঞ্চেও পেয়ে যান অমরত্বের স্বাদ। যদিও সেবারের আসরে হাত ছোঁয়া দূরত্বে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করায় ইয়ান বোথাম রয়ে গিয়েছেন বিশ্বকাপ শূন্য কিংবদন্তিদের তালিকায়।