ছোট্ট সংস্করণে বাঘের গর্জন

কালেভদ্রে বাংলাদেশি ব্যাটারদের দারুণ সব ইনিংসের দেখা মেলে। টি-টোয়েন্টির সঠিক মেজাজ বুঝে খেলা সেই ইনিংসগুলো, টাইগার সমর্থকদের আশা জাগায়, ভরসা জাগায়।

আরও একটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সমাপ্তি। প্রায় দেড় দশকের বেশি সময় ধরে এই ফরম্যাটটি ক্রমশ জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে যাচ্ছে। এই ফরম্যাটের একেবারে শুরু থেকে বাংলাদেশ নিয়মিত খেলে আসছে। তবুও ক্রিকেটের এই ক্ষুদ্র সংস্করণ ঠিক আয়ত্ব করতে পারছে না টাইগাররা। মূলত ব্যাটাররা ঠিক নিজেদেরকে এই ফরম্যাটের সাথে মানিয়ে নিতে পারছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাটারদের ব্যর্থতায় আজও টাইগারদের অর্জনের ঝুলি খালি।

তবে কালেভদ্রে বাংলাদেশি ব্যাটারদের দারুণ সব ইনিংসের দেখা মেলে। টি-টোয়েন্টির সঠিক মেজাজ বুঝে খেলা সেই ইনিংসগুলো, টাইগার সমর্থকদের আশা জোগায়, ভরসা জাগায়। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টগুলোতে বাংলাদেশি ব্যাটারদের সে সব দুর্ধর্ষ ইনিংসগুলো নিয়েই থাকছে আজকের আয়োজন।

  • মোহাম্মদ আশরাফুল (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ – ২০০৭)

বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে একটা সময় পোস্টার বয় হিসেবেই বিচরণ ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের। তবে ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নিজের উজ্জ্বল সেই ক্যারিয়ারের মাটি চাপা তিনি নিজ হাতেই দিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগে তিনি অবিস্মরনীয় এক ইনিংসের উপহার দিয়ে গিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের। তাও আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের তুখোড় বোলিং লাইন আপের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি খেলে ফেলেন, ২৭ বলের ৬১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। সে ইনিংসের উপর ভর করেই নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রথম জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তিন ছক্কা ও সাত চারের সেই ইনিংসটি আশরাফুলের নিজের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা। সেই জয়ের পর দীর্ঘ দেড় যুগ অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে, বিশ্বকাপের মূল আসরে আরও একটি জয় তুলে নিতে।

  • সাকিব আল হাসান (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ – ২০১২)

টি-টোয়েন্টি সংস্করণে বাংলাদেশের একমাত্র সফল খেলোয়াড় হিসেবে এখন পর্যন্ত বিবেচতি হয়ে আসছেন সাকিব আল হাসান। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও বাংলাদেশের মুখ সাকিব। ব্যাট-বল আর ফিল্ডিং তিন ডিপার্টমেন্টেই তিনি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা। তবে হুট করেই তিনি সেরা হয়ে যাননি। নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছেন। নিজের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংসটি তিনি খেলেছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরে।

সেবার মূল পর্বে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। দলের অধিনায়ক ছিলেন মুশফিকুর রহিম। বরাবরের মতই বাংলাদেশ দল একটা লড়াকু সংগ্রহের জন্য লড়াই করছিল। তবে সাকিব সব সময়ই একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করেন। তিনি ৫৪ বলে ৮৪ রানের এক মারকাটারি ইনিংসের উপহার দেয়। যার সুবাদে ১৭৫ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। এগারো খানা বাউন্ডারি ও দুই খানা ছক্কার সেই ইনিংসের পরও বাংলাদেশ ম্যাচটি হেরে যায় পাকিস্তানের কাছে।

  • সাব্বির রহমান (এশিয়া কাপ – ২০১৬)

সাব্বির রহমানকে বরাবরই বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন দিনের কাণ্ডারি ভাবা হত। তবে তিনি নিজের সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দিতে বারংবার হয়েছেন ব্যর্থ। বহুদিন বাদে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে তিনি দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে সে সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি। অথচ তিনি দারুণ সম্ভাবনাময় বলেই বিবেচিত হতেন। সে সম্ভাবনার স্ফুলিঙ্গ তিনি দেখিয়েছিলেন ২০১৬ সালের এশিয়া কাপের মঞ্চে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।

 

মিরপুরে ইনিংসের শুরুতেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় টিম টাইগার্স। সে পরিস্থিতি থেকে দলকে উদ্ধার করেন সাব্বির রহমান। তিনি বেছে নেন পাল্টা আক্রমণের পথ। ক্লিন হিট করতে পারার সক্ষমতা রয়েছে তাঁর। দশখানা বাউন্ডারির সাথে নান্দনিক তিনটি ছক্কার মারে সাব্বির সংগ্রহ করেন ৮০ রান। সে ইনিংসে তিনি বল খরচ করেন মাত্র ৫৪টি। সাব্বিরের সেই ইনিংসটি পরবর্তীতে তাঁর প্রতি প্রত্যাশা বাড়িয়েছে দলের। তবে তিনি তা কখনোই পূরণ করতে পারেননি।

  • মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (নিদাহাস ট্রফি – ২০১৮)

একটা সময় দলের অপরিহার্য অংশ ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বয়সের ভারে জাতীয় দলের এখন তাঁর অবস্থানটা নড়বড়ে। তবে একটা সময় নিজের কার্যকরী ইনিংসের মাধ্যমে তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ জয়ে ভূমিকা রেখেছেন নিয়ম করে। তেমনই এক ইনিংস তিনি খেলেছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৮ সালে নিদহাস ট্রফির অলিখিত সেমিফাইনাল ম্যাচে।

১৮ বলে অপরাজিত ৪৩ রানের ক্যামিও ইনিংসটি তাঁর ক্যারিয়ার তো বটেই, বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসেও অন্যতম সেরা এক ইনিংস। দলের জয়ের পথটা যখন বহুদূর ঠেকছিল। তখন হাল ধরে দলকে বিজয়ের ঠিকানায় পৌঁছে দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তিন চার ও দুই গুরুত্বপূর্ণ ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন রিয়াদ। যার সুবাদে নিদাহাস ট্রফির সেমিফাইনাল অবধি পৌঁছাতে পেরেছিল টিম টাইগার্স।

  • লিটন দাস (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ – ২০২২)

বর্তমান বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ব্যাটার লিটন দাস। যখনই তাঁর ব্যাট হেসেছে মন্ত্রমুগ্ধের মত করে তাকিয়ে দেখেছে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। নানান বন্দনায় ভাসিয়েছে তাঁকে। তিনি বাইশ গজে থাকা মানেই দলের সম্ভাবনা জ্বলতে থাকা। তেমনই এক উদাহরণের দেখা মেলে এবারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। ভারতের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে লিটনের ব্যাট আরও একবার জ্বলে ওঠে।

১৭৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা দুর্দান্ত হয় লিটন দাসের কল্যাণে। পাওয়ার প্লের ছয় ওভারের মধ্যেই লিটন তুলে নেন অর্ধশতক। সাবলীল ভঙ্গিমায় দৃষ্টিনন্দন সব শটের পসরা বসিয়েছিলেন লিটন। মাত্র ২১ বলে অর্ধশতকের দেখা পাওয়া লিটনের ইনিংস থামে ২৭ বলে ৬০ করে। সাত চার ও তিন ছক্কার সেই ইনিংসটির সমাপ্তি ঘটে দুর্ভাগ্যজনক এক রান আউটে। তাতে বাংলাদেশের জয়ের আশাও চুরমার হয়ে যায়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...