বাংলাদেশ দল এখন আছে নিউজিল্যান্ডে। ২০ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া ওয়ানডে সিরিজের জন্যে নতুন ওয়ানডে অধিনায়কের অধীনে পূর্ণ প্রস্তুতিতে ব্যাস্ত দলটি। তবে নিউজিল্যান্ডে দেশটির পরিসংখ্যান যথেষ্ট নাজুক। সিরিজ জয় তো দূরের কথা, নিউজিল্যান্ডের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেতেই হিমশিম খেতে হয় বাংলাদেশকে।
আর সেখানকার কন্ডিশনে কিউই পেসারদের বিপক্ষে খেলা যেন আরো কঠিন বাংলাদেশের জন্যে। তবে এই কঠিনের মাঝেও বেশ কিছু বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান এই কন্ডিশনেই নিইউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত কিছু ইনিংস খেলেছেন।
- মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ – ১২৮* (হ্যামিল্টন, ২০১৫)
২০১৫ বিশ্বকাপটা মাহমুদউল্লাহর জন্যে স্মরণীয় হয়েই থাকবে। নিজের দল দুর্দান্ত খেলে তো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছেই, নিজেও দুর্দান্ত খেলে রেকর্ডের পাতায় নাম উঠিয়েছেন। টানা সেঞ্চুরি করেছেন। আর সেই সেঞ্চুরির একটা এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই। ম্যাচের শুরুটা ভাল ছিল না বাংলাদেশের জন্যে।
২৭ রানেই ২ উইকেটের পতন ঘটলে ক্রিজে আসেন মাহমুদুল্লাহ। আর সেখান থেকেই খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা দলকে টেনে তুলেছেন, কিউই বোলারদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন। ১২ চার আর ৩ ছয়ে ১২৩ বলে করেছেন ১২৮ রান, স্ট্রাইক রেট ১০৪.০৭! পুরো ম্যাচে সাউদি-বোল্ট-ভেট্টরিতে সাজানো কিউই বোলিং লাইনআপ রিয়াদকে আর আউট করতে পারেননি।
- সাব্বির রহমান – ১০২ (ডানেডিন, ২০১৯)
২০১৯ এর ২০শে ফেব্রুয়ারির দিনটার কথা মনে করলে সাব্বিরের হয়তো মন খারাপই হবে। নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ৩৩১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই প্রথম উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। আর এরপর সাউদির তোপে একে একে বাকি সবাইও ফিরে যেতে থাকে প্যাভিলিয়নে, ৪০ পেরোবার আগেই বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে চার উইকেট।
আর তখনই ক্রিজে আগমন সাব্বির রহমানের। এমনিতে এটা ছিল নিষেধাজ্ঞা কাটানোর পর তাঁর প্রথম ম্যাচ, তাকে দলে নেওয়া নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছিল বেশ। আর সেই ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে তিনি খেলেন ১১০ বলে ১০২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। সাউদির বলেই ফিরে যাওয়ার আগে তিনি মেরেছেন ১২ চার আর ২ ছয়!
- ইমরুল কায়েস – ১০১ (ক্রাইস্টচার্চ, ২০১০)
২০১০ সালে বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর। ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে মাঠে নামছে বাংলাদেশ আর সেখানেই তামিম ইকবালের সাথে ওপেনিংয়ে নামছেন সেদিনের ইমরুল কায়েস। বরাবরের মতই প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের ইনিংসের মাত্র প্রথম ওভারের শেষ ওভারেই দলকে বিপদে রেখে আউট হয়ে যান তামিম ইকবাল।
আর সেখান থেকেই কখনও আফতাবের সাথে, কখনও আশরাফুলের সাথে জুটি গড়ে বাংলাদেশের ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যান ইমরুল। তবে ইনিংসের সবচাইতে বড় ৮৪ রানের জুটিটা তিনি গড়েন সাকিব আল হাসানের সাথেই। যা হোক, দলের ২৩৪ রানের সময় যখন ইমরুল আউট হয়ে গেলেন তখন তাঁর নামের পাশে ১৩৮ বলে ১০১ রান!
- মুশফিকুর রহিম – ৮৬ (ডানেডিন, ২০১০)
২০১০ এর ইমরুলের সেই সেঞ্চুরির সফরেরই দ্বিতীয় ওয়ানডের কথা। মুশফিকুর রহিম ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন , সেখানে তার আগের পাঁচজন ব্যাটসম্যানের রান যথাক্রমে – ১, ৯, ১, ১০, ০! বোঝাই যাচ্ছে ২৩ রানে চার উইকেট পড়ে গেলে মুশফিক যখন ব্যাট করতে নামলেন কি অতিমানবীয় চাপ ছিল তাঁর ওপর।
আর সেই সামলেই তিনি খেলে ফেললেন ৮৬ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস। ১৮০ মিনিট ক্রিজে থেকে আশি স্ট্রাইক রেটের সেই ইনিংস দেখলে মুশফিক নিজেও মনে হয় অনুপ্রেরণা খুঁজে পাবেন!
- মোহাম্মদ আশরাফুল – ৭০ (অকল্যান্ড, ২০০৭)
এখন নিউজিল্যান্ডেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের তিনটে সেঞ্চুরি আছে। গত সফরে মিথুনও টানা হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন। কিন্তু ২০০৭ এর সময়টাতে মান বাঁচানো ইনিংস খেলাও ছিল দুরূহ কাজ। অকল্যান্ডে অধিনায়ক হিসেবে নামা মোহাম্মদ আশরাফুল সেদিন এই দুরূহ কাজটাই করেছিলেন।
চার নম্বরে নেমে ৭০ রান করেছিলেন মাত্র ৫৭ বলে! জ্যাকব ওরামের বলে ফুলটনের ক্যাচ হয়ে যখন তিনি ফিরে যাচ্ছেন প্যাভিলিয়নে, উইকেটের চারপাশে মেরেছেন দশ চার আর এক ছয়! ১২২.৮১ স্ট্রাইক রেটে সাজানো এই ইনিংস এখনও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের সাথে করা এক ইনিংসে পঞ্চম সর্বোচ্চ রান!