প্রায় এক যুগ আগে সর্বশেষ আইসিসির বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টে শিরোপা জিতেছিল ভারত। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে সেবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতেছিল তাঁরা। সাবে ওপেনার গৌতম গম্ভীরের মতে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, জাসপ্রিত বুমরাহদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিয়মিত বিরতি নেয়াই ভারতের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ।
২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর আরো বেশ কয়েকবার শিরোপা জয়ের কাছাকাছি এসেছে ভারত। ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পাশাপাশি ২০১৯ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলেছে তাঁরা। কিন্তু ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি, প্রতিবারই ফিরতে হয়েছে হাত ছোঁয়া দূরত্বে থেকেই। সর্বশেষ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও বিদায় নিতে হয়েছে শেষ চার থেকে। গ্রুপ পর্বের পাঁচ ম্যাচে চারটি জয় পেলেও সেমিতে ইংল্যান্ডের কাছে ১০ উইকেটের হারে অসহায় আত্নসমর্পন ভারতের।
২০২৩ সালে এক যুগ পর বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফিরছে ভারতে। এক যুগের আগের সেই বিশ্বকাপে ওয়াংখেড়েতে শিরোপা জিতে ভারত বিদায় জানিয়েছিল শচীন টেন্ডুলকারকে। ঘরের মাঠে আরো একবার কি শিরোপা খরা কাটাতে পারবেন কোহলি-রোহিতরা?
আইপিএল, দ্বিপাক্ষিক সিরিজের টানা ম্যাচ থাকার কারণে বিশ্বকাপের আগে ক্রিকেটারদের বিশ্রাম দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিসিআই। যদিও ভারতের সাবেক ওপেনার গৌতম গম্ভীর সরাসরি সমালোচনা করেছেন এমন সিদ্ধান্তের। তাঁর ভাষ্যমতে, বিসিসিআইয়ের নেয়া আত্নঘাতি সিদ্ধান্ত এটি। বিশ্রাম না দিয়ে বরং নিয়মিত ম্যাচ খেলিয়ে বিশ্বকাপের জন্য পারফেক্ট কম্বিনেশন খোঁজাই উচিত হবে টিম ম্যানেজমেন্টের।
গম্ভীর বলেন, “তাঁদেরকে একত্রে খেলতে হবে। আমি মনে করি সর্বশেষ, দুই বিশ্বকাপে ভারতের বাজে খেলার মূল কারণ ক্রিকেটাররা একত্রে খুব বেশি ম্যাচ না খেলা। আপনিই বলুন কয় ম্যাচে আমরা আমাদের সেরা একাদশ মাঠে নামিয়েছি? আমরা নামাইনি, কেবলমাত্র বিশ্বকাপের সময় আমরা সেরা এগারোজনকে খেলাই। তাঁদেরকে একত্রে আরো বেশি ক্রিকেট খেলতে হবে, বিশেষ করে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে।”
২০০৭ টি-টোয়েন্টি এবং ২০১১ বিশ্বকাপজয়ী এই ওপেনারের ভাষায় সিনিয়র ক্রিকেটার এবং ফার্স্ট বোলাররা চাইলে টি-টোয়েন্টি কিংবা আইপিএলের কিছু ম্যাচ থেকে বিশ্রাম নিতে পারেন ক্লান্তিবোধ ভর করলে। তাঁর মতে, ‘যদি তাঁরা বিশ্রাম নেয়ার কথা চিন্তা করে, বিশেষ করে যারা তিন ফরম্যাটেই খেলে তাঁরা চাইলে টি-টোয়েন্টি কিংবা আইপিএল থেকে বিশ্রাম নিতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই ওডিয়াই থেকে নয়। জাতীয় দলের চাইতে ফ্যাঞ্চাইজি দল কোনোভাবেই বড় হতে পারে না। আইপিএল প্রতি বছরই আসবে, কিন্তু বিশ্বকাপ ক্রিকেট চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত হবে। আমার কাছে আইপিএল জেতার চাইতে বিশ্বকাপ জেতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
জাতীয় দলের খেলার ধরণ এবং দল নির্বাচন নিয়েও নিজের মতামত ব্যক্ত করেন গম্ভীর। তিনি বলেন, ‘প্রথমে আপনাকে ভয়ডরহীন ক্রিকেটার খুঁজে বের করতে হবে। বিশ্বকাপ জিততে হলে দলে সব ধরনের ক্রিকেটার থাকতে হবে। দলে কেবল অ্যাংকর থাকলে চলবে না এবং প্রত্যেকের নিজের রোল সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। আমাদের সময়ে কেবলমাত্র একটি নতুন বলে খেলা হত। এখন দুই প্রান্ত থেকেই নতুন বল চালানো হয়, সুতরাং পার্ট-টাইমাররা এখন ইতিহাস। আপনি এখন সাদা বলের ক্রিকেটে রিভার্স সুইং কিংবা অফস্পিনার খুব বেশি পাবেন না।’
তাঁর মতে, বিশ্বকাপ জিততে হলে বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। তাছাড়া এই দুই কিংবদন্তির এটাই শেষ বিশ্বকাপ।
গম্ভীর বলেন, ‘সঠিক খেলোয়াড় খুঁজে বের করা এবং তাঁদের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করে ভীষণ জরুরি। একই মানসিকতার ১৫ জনের চাইতে ভিন্ন ভিন্ন চিন্তাচেতনার ১৫ জন বেশি কার্যকরী। আমার ধারণা কোহলি এবং রোহিত যারা কিনা ইনিংস বড় করতে জানেন এবং স্পিনের বিপক্ষে সাবলীল, তাঁদেরকেই বিশ্বকাপে মূল দায়িত্বটা নিতে হবে।’