একটা কথা প্রায়শই শোনা যায়- এনামুল হক বিজয় পর্যাপ্ত সুযোগ পান না। হ্যাঁ, একদিক থেকে এই কথা সম্পূর্ণ সত্য। একটানা সুযোগ কখনোই পান না এনামুল। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, অল্প-বিস্তর যে সুযোগটুকুই তিনি পাচ্ছেন, তা কি তিনি আদতে কাজে লাগাতে পারছেন?
সোজাসাপ্টা উত্তরটা হবে, না, তিনি পারছেন না। এখন আর বিজয় একটানা সুযোগ পাবেন বলেও মনে হয় না। কেননা প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। তরুণ অনেক ক্রিকেটার দরজায় নাড়ছেন কড়া। এমন এক মুহূর্তে দলে সুযোগ পেতে হলে গুটিকতক সুযোগগুলোকেই ব্যবহার করতে হবে সম্পূর্ণরূপে।
বিজয় সেটা কোনভাবেই করতে পারেননি। অন্তত শেষ ৭-৮ ম্যাচে তিনি ব্যাট হাতে ছিলেন একেবারেই অনুজ্জ্বল। শুধুই কি অনুজ্জ্বল? অকার্যকরও বটে। শেষ ৮ ইনিংসে বিজয়ের ব্যাট থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ৪৩ রান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ডানেডিনে খেলা ওই একটি ইনিংসই তার সাম্প্রতিক হাইলাইটস।
বাংলাদেশের জার্সিতে শেষ আট ওয়ানডেতে তিনি সর্বসাকুল্যে রান করেছেন ১৩১ রান। এই সময়ে তার গড় ১৬.৩৮। এখন বর্তমান সময়ে এমন গড় নিয়ে খেলা একজন ওপেনারকে ঠিক কতক্ষণই বা সুযোগ দেওয়া সম্ভব? সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।
আরও একটা উদাহরণ অবশ্য টেনে নিয়ে আসা যায়। তরুণ তানজিদ হাসান তামিমের কথাই ধরুণ। বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে হুট করেই এশিয়া কাপের দলে তিনি। এরপর এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ খেলেছেন ভীষণ চাপের মুখে। সে চাপে খেলেও নিজের উদ্দেশ্য স্পষ্ট রেখেছিলেন। তরুণ ক্রিকেটার, বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেন। বড় ইনিংস খেলার প্রবৃত্তিও রয়েছে তার।
এমনকি নিজের অপ্রত্যাশিত সুযোগ লুফে নিয়ে পারফর্ম করবার দৃঢ় মানসিকতাও রয়েছে। সেটাই তো তিনি দেখিয়েছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ম্যাচের মাঝপথে পাওয়া সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন শতভাগ। তবে পরিপক্কতার অভাবে নিজের সেঞ্চুরিটা মিস করেছেন। কিন্তু তিনি দেখিয়েছেন কুড়িয়ে পাওয়া সুযোগের ঠিক কিভাবে সদ্ব্যবহার করতে হয়।
এনামুল হক বিজয় ঠিক এখানেই মাত খেয়ে যাচ্ছেন। তিনি সুযোগ পাচ্ছে বটে- তবে মানসম্মত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে একেবারে নুইয়ে পড়ছেন। তার ব্যাটিংয়ের সমস্যারও যে খুব উন্নতি সাধন করতে পেরেছেন তেমনটিও নয়। একেবারেই যে নিষ্ফলা তিনি তেমনটি নয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০২২ সালে দু’টো ফিফটি করেছেন। দু’টো ইনিংসই থেমেছে ৭০ এর ঘরে।
প্রতিপক্ষ বিবেচনায় জিম্বাবুয়ে নিশ্চয়ই ঠিক শ্রীলঙ্কার মানের শক্ত প্রতিপক্ষ নয়। তাদের বিপক্ষে দু’টো ইনিংসকে শতকে রূপান্তরিত করবার সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। সেখানেই এনামুলের সীমিত সামর্থ্য ‘এক্সপোজ’ হয়ে যায়। প্রশ্ন হতেই পারে, শতক তো তানজিদ তামিমও করেননি? হ্যাঁ, করেননি- তাই বলে যে করবে না তা নয়।
বরং তানজিদ তামিমের হাতে পর্যাপ্ত সময় আছে। তিনি নিজেকে গড়ার সুযোগ পাবেন। তাছাড়া ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার মানসিকতা রয়েছে তার। এনামুলের সেখানেও রয়েছে ঘাটতি। বর্তমানে বাংলাদেশ দলের আশেপাশে থাকা প্রতিটা তরুণ ওপেনার হয়ত ধারাবাহিক নন। তবে তাদের প্রত্যেকের মাঝেই রয়েছে সম্ভাবনা। আর তারা প্রত্যেকেই নির্ভীক মানসিকতা লালন করেন।
আর এনামুল হক বিজয় ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক বটে। তবে ধারাবাহিকতার উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি তিনি আঁকতে ব্যর্থ আন্তর্জাতিক সার্কিটে। ঠিক সে কারণেই একটানা সুযোগ তিনি পাচ্ছেন না। আর রুঢ় সত্য হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে তিনি সুযোগ খুব নগন্যই পাবেন বলে রয়েছে শঙ্কা। কেননা যখন সুযোগ মেলেনা, তখন সুযোগ তৈরি করে নিতে হয়। আর সেসব ক্ষেত্রে ব্যর্থতার প্রমাণই রেখে চলেছেন বিজয়।