দ্বিতীয় জীবনের প্রথম প্রেম

পিঠটাকে একটু চেপে দেখলেন। পেছনের দিকে শরীর এলিয়ে দিয়ে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করলেন, কোমড়ের পরিস্থিতি। এই কোমড়টাই যে সঙ্গ দিতে চায়নি। কোমড়ের ইনজুরিই তো সম্ভাবনার প্রদীপের সকল জ্বালানি শুষে নিয়েছে যেন। তাইতো সতর্ক থাকার আপ্রাণ চেষ্টা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের।

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে অভাব রয়েছে বেশ কিছু। তার মধ্যে অন্যতম একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের। সেই অভাব পূরণের সমস্ত রসদ নিয়েই লাল-সবুজ জার্সিটা গায়ে চাপিয়েছিলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। কিন্তু যতটুকু সম্ভাবনার ঝলক দেখিয়েছেন, ততটুকুও ডেলিভার করতে পারেননি তিনি।

একটু পুরনো বলে মিডিয়াম পেস বোলিং। সেই সাথে ব্যাটিং অর্ডারের শেষের দিকে দ্রুত কিছু রান যোগ করা। এই কাজগুলোর জন্যই তাকে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপও খেলেছেন তিনি ২০১৯ সালে। ক্যারিয়ার গ্রাফটার ঢাল শুরু এরপর থেকেই। ইনজুরি ও দলের অন্দরমহলের নানা কারণে সাইফউদ্দিন হারিয়ে যাওয়াদের মিছিলে অংশ নিতে শুরু করেন।

ব্যক্তিগতভাবে ইনজুরি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন, সহয়তার হাত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও। এখন হয়ত সেই পিঠের পীড়া কমতির দিকে। তবে পুরোপুরি সেরে হয়ত এখনও ওঠেনি। তাতে নিশ্চয়ই ঘরে বসে থাকা যায় না। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দশম আসর আসন্ন। গায়ে খুলনা টাইগার্সের জার্সি থাকলেও, এবারের আসরের জন্য তাকে দলে ভিড়িয়েছে ফরচুন বরিশাল।

দলের অনুশীলনে তাই সাইফউদ্দিনও হাজির হয়েছেন। ব্যাটিংয়ের চাইতে বোলিংটাই করেছেন বেশি। যেন নিজের বোলার সত্ত্বাকে রিচার্জ করছেন সাইফউদ্দিন। মাঝে মধ্যে কোচ মিজানুর রহমান বাবুল তাকে ভুল শুধরে দিচ্ছেন। সেটা বেশ জরুরি সাইফউদ্দিনের জন্য। এবারের বিপিএলই সামগ্রিকভাবে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সাইফের জন্য।

কেননা চলতি বছরের মধ্যভাগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেই দলে জায়গা করে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিপিএল নিশ্চিতরূপেই প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে যেকোন খেলোয়াড়ের জন্য। তাছাড়া বিশ্বকাপটা যে আয়োজিত হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্র্যে। ওই কন্ডিশনে সাইফউদ্দিনের মিডিয়াম পেস হতে পারে বাংলাদেশের জন্য কার্যকর।

সেজন্য অবশ্য নিজেকে প্রমাণ করা চাই। বিপিএলই সাইফউদ্দিনের সেই প্রমাণের মঞ্চ। দেশের অন্যতম সেরা কোচের সান্নিধ্য পাচ্ছেন সাইফ। তাছাড়া ডেভ হোয়াটমোরের মত কোচের কাছ থেকেও শেখার আছে অনেক কিছু। সবার টোটকা সঙ্গী করে সাইফউদ্দিন নিশ্চয়ই আবার পা রাখতে চাইবেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।

ঘরোয়া ক্রিকেট খেললেও ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে শেষবারের মত তাকে দেখা গিয়েছিল জাতীয় দলে। সেই ম্যাচে ৩.৫ ওভার বোলিং করে ৫৩ রান হজম করতে হয়েছিল সাইফউদ্দিনকে। অন্তত এমন দৃষ্টিকটু একটা পরিসংখ্যানেই ক্যারিয়ারের ইতি ঘটুক তেমনটি নিশ্চয়ই চান না তিনি। সেজন্য সোজাসাপ্টা ভাষায়, তাকে পারফর্ম করতেই হবে। পারবেন তো সাইফ? প্রশ্ন তোলা থাক সময়ের কাছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link