বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা দল যদি বাছাই করতে বলেন তাহলে নি:সন্দেহে সেখানে সবার আগে আসবে ব্রাজিলের নাম। আচ্ছা তর্কসাপেক্ষে যদি মেনেও নেই যে তাঁরা সেরা দল নয় তবুও তো তাঁরা সবচেয়ে সফল দল। এই বিষয়ে তো আর তর্ক খাটে না। কেননা পাঁচবার বিশ্ব সেরার মুকুট পড়েছে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা। আবার সুন্দর ফুটবলের দিক থেকেও বাকিদের চেয়ে অনেক এগিয়ে সেলেসাওরা।
পাঁচটি বিশ্বকাপ জয়ের পেছনে ব্রাজিলিয়ান প্রতিটা খেলোয়াড়ের অবদান থাকলেও পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন গোলদাতারা। যত নান্দনিক ফুটবল খেলাই হোক না কেন, খেলাটা আসলে তো গোলের। এখানে গোলটাই মুখ্য। ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপে বহু খেলোয়াড় গোল করেছেন। তাঁদের নিয়েই থাকছে আজকের আলোচনা। দুভার্গ্যজনক হলেও সত্য ব্রাজিলের এ সময়ের ‘পোস্টার বয়’ নেইমার থাকছেন না এই তালিকায়।
- রোনালদো
প্রথমেই যার নামটা ভেসে উঠছে সবার আগে তিনি হলেন রোনালদো নাজারিও দ্য লিমা। ব্রাজিল তো বটেই, বিশ্বকাপের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। নিজের ক্যারিয়ারে তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। এর মধ্যে জিতেছেন একটি। ২০০২ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে জয়সূচক দুইটি গোল করেন তিনি।
এছাড়া বিশ্বকাপে তাঁর মোট গোল সংখ্যা ১৫টি। তিনি ম্যাচ খেলেছেন ১৯টি। এর মধ্যে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ অর্থাৎ ১৯৯৮ বিশ্বকাপে করেন চার গোল। শিরোপা জয়ের আসরে করেন আট গোল। ছিলেন ২০০২ আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা। এরপর ২০০৬ বিশ্বকাপেও পাঁচ বার খুঁজে পান তিনি জালের দেখা।
- পেলে
এটা বিশ্বাস করা হয় যে ব্রাজিলের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার পেলে। তিনি ছিলেন অসাধারণ গোলদাতা। গোলবারের সামনে তিনি ছিলেন দূর্দান্ত। তাইতো ব্রাজিলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ডটা এখনও রয়েছে তাঁর দখলে। তাঁর আমলেই কিংবা তাঁর জাদুতেই তিন তিনবার বিশ্বকাপ জিতেছিল ব্রাজিল। অবশ্য তিনি খেলেছিলেন চারটি বিশ্বকাপ।
চার বিশ্বকাপে তাঁর খেলা ম্যাচের সংখ্যা ১৪টি। এই ১৪টি ম্যাচের মধ্যে ১২ বার তিনি প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়েছেন। প্রথম দফা ১৯৫৮-১৯৭০ টানা চার বিশ্বকাপ খেলেন তিনি। প্রথম বিশ্বকাপে তাঁর পা থেকে আসে ছয় গোল। মাঝে দুইটিতে তিনি গোল করেন একটি করে। এরপর আবার ১৯৭০ এর বিশ্বকাপে তিনি করেন চার গোল।
- ভাভা
পেলের সতীর্থ থেকেও ভাভা ছিলেন নিজ আলোয় আলোকিত। পেলের মত লম্বা সময় তিনি বিশ্বকাপের মঞ্চে ছিলেন না। মাত্র দুইটি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ হয়েছে তাঁর। তবে সে দুই বিশ্বকাপেই তিনি পেলের সাথেই একটা স্বাস্থ্যকর লড়াই চালিয়ে ঠিকই অমর হয়ে রইলেন ব্রাজিলের বিশ্বকাপ ইতিহাসে।
পেলের মত খেলোয়াড়ের থাকার পরও দশটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। আর সে সুযোগগুলো হেলায় হারিয়ে যেতে দেননি তিনি। কাজে লাগিয়ে করেছেন নয় খানা গোল। প্রথমবার ১৯৫৮ বিশ্বকাপে তিনি করেন পাঁচ গোল। এরপর ১৯৬২ বিশ্বকাপে পেলের অবর্তমানে তিনি গোল করার দায়িত্বটা নিজ কাঁধে নিয়ে করেছেন চার গোল।
- জারজিনহো
১৯৭০ বিশ্বকাপ জয়ের পেছনে জারজিনহোর অবদান আড়াল করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। দলে প্রয়োজনে বিভিন্ন পজিশনের খেলার দক্ষতা তাঁর রয়েছে। সে সাথে গোল আদায় করে নিতেও তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তিনি তাঁর সময়ে খেলেছেন তিনটি বিশ্বকাপ। তবে তিনি নিশ্চয়ই ১৯৭০ বিশ্বকাপটাই তাঁকে চিরকাল আলাদা সম্মান আদায় করে দেবে ব্রাজিল সমর্থকদের পক্ষ থেকে।
কেননা সেই এক বিশ্বকাপেই তিনি একাই করেছিলেন সাত গোল। সেবারই যেন নিজের ফর্মের তুঙ্গে ছিলেন তিনি। বাকি দুই বিশ্বকাপে তাঁর করা গোলের সংখ্যা কেবল দুইটি। সে দুইটিও তিনি করেছেন ১৯৭৪ বিশ্বকাপে। ১৮৬৬ বিশ্বকাপে তিন ম্যাচ খেলেও কোন গোল করতে পারেননি তিনি।
- অ্যাডেমির
ব্রাজিলের হয়ে মাত্র একটি বিশ্বকাপ খেলেছিলেন অ্যাডেমির। আর তাতেই তিনি ছাপ ফেলে রেখে গেছেন দেশটির বিশ্বকাপের ইতিহাসে। তাঁর মত গোলদাতারাই প্রমাণ রেখে যান যে বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিল ঠিক কতটা ভয়ংকর।
১৯৫০ সালে মাত্র একটি বিশ্বকাপের ছয়টি ম্যাচ খেলেন অ্যাডেমির। সেই এক আসরেই তিনি করেন আটটি গোল। যদিও সেবার শিরোপা জিততে পারেনি ব্রাজিল। ফাইনালের হেরে যায় উরুগুয়ের কাছে। তবে সেবার ঠিকই সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন অ্যাডেমির।