ক্রিকেট মাঠে পাকিস্তান বড্ড আনপ্রেডিক্টেবল। ঐতিহাসিকভাবে এটাই যেন সর্বজন স্বীকৃত। দলটি কখন কেমন পারফর্ম করবে, তা একরকম অননুমেয়ই বটে। এই যেমন ফেবারিট হয়েই এবারের এশিয়া কাপ যাত্রা শুরু করেছিল বাবর আজমের দল। তবে দুর্দান্ত শুরুর পরও শেষের ব্যর্থতায় ৬ দলের টুর্নামেন্ট তাঁরা ৪-নম্বরে থেকে বিদায় নিয়েছে।
তবে এশিয়া কাপ ভরাডুবির পরেও ৯২-এর বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের লক্ষ্য এবার বিশ্বকাপ জিতে দীর্ঘ ২৯ বছরের বিশ্বকাপখরার অবসান ঘটানো। সেই যাত্রায় এবারের পাকিস্তান দলটার শক্তি কোথায়, দুর্বলতাটাই বা কোথায়? চলুন দেখে নেওয়া যাক।
পেসারদের স্বর্গরাজ্য বলা হয় পাকিস্তানকে। বরাবরের মতো এবারও তাদের মূল শক্তি পেস বোলিং লাইনআপ। যদিও নাসিম শাহকে মিস করবে ম্যান ইন গ্রিন। এশিয়া কাপে ইনজুরি শেষ করে দিয়েছে তরুণ এ পেসারের বিশ্বকাপ স্বপ্ন। তবে তাঁর জায়গায় আবার দলে এসেছেন পাকিস্তানের ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের নায়ক হাসান আলী।
এ ছাড়া শাহীন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ তো আছেই। এর সাথে মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র থাকছেন ব্যাকআপ পেসার হিসেবে। আর পেস বোলিংয়ের পাশাপাশি স্লগে ব্যাটিং করার দক্ষতা রয়েছে ফাহিম আশরাফের। সব মিলিয়ে এবারের বিশ্বকাপে শাহিন-নাসিম-রউফে পেসত্রয়ীয় পেস তাণ্ডবের দেখা না মিললেও প্রতিপক্ষকে পেস বোলিং দিয়ে ভড়কে দেওয়ার মতো রসদ আছে পাকিস্তানের।
সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান দলের জন্য বড় মাথাব্যাথার নাম ‘ব্যাটিং’। দলটার অধিনায়ক বাবর আজম ওয়ানডে ক্রিকেটের নাম্বার ওয়ান ব্যাটার। মিডল অর্ডারেও ইফতিখার আহমেদের মতো ব্যাটিং রয়েছে। সৌদ শাকিলের মতো তরুণ ব্যাটারের অন্তর্ভূক্তি স্কোয়াডকে আরো ব্যালান্স করেছে।
তবে যত দুশ্চিন্তা ওপেনিং পজিশন নিয়ে। ফখর জামান ছন্দে নেই। ইমাম উল হক দারুণ শুরু করেও সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর ইনিংসগুলোকে পূর্ণতা দিতে পারছেন না। খুব সম্ভবত এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের প্রথম একাদশে ইমাম টিকে গেলেও বাদ পড়বেন ফখর জামান। তাঁর জায়গায় খেলতে পারেন আব্দুল্লাহ শফিক।
পাকিস্তানের আরেক দুশ্চিন্তার নাম স্পিন ইউনিটও। দলের নিয়মিত মুখ শাদাব খান নিজেকে রাঙাতে পারছেন না। মোহাম্মদ নওয়াজকে নিয়েও তেমন উচ্চাশার কিছু নেই। তরুণ লেগি উসামা মীর যদিও আছেন। তবে আনকোরা এ স্পিনারকে নিয়ে পাকিস্তানের আদৌ কতটা পরিকল্পনা রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
১৯৯২ সালে অজি আর কিউই দূর্গে বিশ্বকাপ জিতেছিল পাকিস্তান। ২৯ বছর আগে জেতা সেই বিশ্বকাপ শিরোপাটাই এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের জন্য প্রথম ও শেষ হয়ে আছে। বাবর আজমের দল এবার ভাঙতে চায় সেই বিশ্বকাপখরা। অবশ্য ১২ বছর আগে, ২০১১ বিশ্বকাপে উপমহাদেশে হওয়া বিশ্বকাপে পাকিস্তান সেমিফাইনালে উঠেছিল।
এক যুগ বাদে, আবারো উপমহাদেশের মাটিতে ফিরছে বিশ্বকাপ। নিজেদের সহজান কন্ডিশনে তাই বিশ্বজয়ের দিকেই চোখ বাবর আজমদের। তবে তার জন্য তাদের পাড়ি দিতে হবে অনেক প্রতিকূল পথ। পাকিস্তান সেই যাত্রায় কতদূর এগোবে, তা সময়ই বলে দিবে। তবে আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তানের বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে আগামী ৬ অক্টোবরে, প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস।