রোহিত শর্মা, মহাকাল মনে রাখবে তাঁকে

এত কাছে, তবু কত দূরে। ভারতের দুর্দান্ত বিশ্বকাপযাত্রা থামলো ফাইনালের মঞ্চে এসে। হাতছোঁয়া দূরত্বে শেষ হলো রোহিত শর্মার বিশ্বকাপ অভিযান। ভারতীয় এ ওপেনারের নেতৃত্বে ভারতের জয়রথ ছুটছিল গোটা টুর্নামেন্ট জুড়েই। ফাইনালের আগে কোনো পরাজয়ের তিক্ততা নেই। রাউন্ড রবিন লিগে বলতে গেলে সিংহভাগ ম্যাচেই জয় এসেছে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে।

সেই ভারতই কিনা ফাইনালে হারল যাচ্ছেতাইভাবে! টুর্নামেন্টের প্রথম হারের দিনে বিশ্বকাপটাও পাওয়া হলো না রোহিত শর্মার। বয়স, ফিটনেস বিবেচনায় যেটাকে তাঁর শেষ বিশ্বকাপই ভাবা হচ্ছে। সুযোগ ছিল সেই শেষটা রাঙানোর। কিন্তু আহমেদাবাদের ফাইনালে শেষটা হলো বড্ড বিষণ্নতায়।

এবারের বিশ্বকাপে রোহিত শর্মা কতটা দুর্দান্ত ছিলেন, তা আর নতুন করে না বললেও চলে। ১১ ম্যাচে ৫৯৭ রান করেছেন। যেটি আবার এক আসরে অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ রান করার নতুন রেকর্ড। এক আসরে সর্বোচ্চ ৩১ ছক্কার রেকর্ডটাও আবার তিনিই দখলে নিয়েছেন। তবে সবচাইতে নজর কেড়েছে ইনিংসের শুরুতেই তাঁর আক্রমণাত্বক ব্যাটিং।

 

পুরো আসরে ১২৫.৯৪ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন তিনি। প্রায় প্রতি ম্যাচেই এনে দিয়েছেন উড়ন্ত সূচনা। নিজের ইনিংসটা বড় করতে পারেননি বটে। তবে তাঁর আগ্রাসী ইনিংসই ভারতকে বড় সংগ্রহের একটা ভিত্তি গড়ে দিয়েছে সিংহভাগ ম্যাচেই। আহমেদাবাদে ফাইনালেও দারুণ শুরু করেছিলেন রোহিত। চার, ছক্কার শুরুতে ভারতের রানরেট উঠে গিয়েছিল প্রায় ৮-এর কাছকাছি। কিন্তু ৩১ বলে ৪৭ রানে আউট হয়ে ফেরার পরই শুরু হয় ভারতের ইনিংসে ছন্দপতন।

এ দিন আর রোহিতের আগ্রাসী শুরুটাকে আর কেউ পূর্ণতা দিতে পারেননি। উল্টো বাউন্ডারি বের করতে গিয়ে হাপিত্যেশ হয়েছে অন্য ব্যাটারদের। ভারতের পুরো ইনিংসের বাউন্ডারি হয়েছে ১৭ টা। সেখানে ৭ টা এসেছে রোহিতের ব্যাট থেকে। মজার ব্যাপার হলো, ভারতীয় এ ওপেনার ঐ ৭ বাউন্ডারি পেয়েছিলেন প্রথম ১০ ওভারের মাঝেই। অথচ, রোহিত বাদে বাকি ব্যাটাররা মিলে পুরো ইনিংসের বাউন্ডারি মেরেছেন ১০ টা। ভারতের পিছিয়ে যাওয়া সেখান থেকেই।

স্কোরবোর্ডে রান ওঠেনি। বোলিংয়ের শুরুটা ভাল হলেও হেড-লাবুশানের বিপক্ষে আর কেউ পরে চড়াও হতে পারেনি। ফলাফল, সরস বিশ্বকাপের নিরস ফাইনালে ৬ উইকেটের পরাজয় বরণ করেছে ভারত। তবে বিশ্বকাপ না জিতলেও রোহিত শর্মার কৃতিত্বকে সামনে আনতেই। পুরো বিশ্বকাপে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। রিকি পন্টিংয়ের পর তিনিই প্রথম অধিনায়ক যার বিশ্বকাপে টানা ১০ ম্যাচ জয়ের কীর্তি আছে।

দলগত সাফল্য ছাড়াও ব্যক্তিগত অর্জনে বেশ সমৃদ্ধই ছিলেন রোহিত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড গড়েছেন এই বিশ্বকাপেই। তবে বিশ্বকাপের ইতিহাসে এখন সর্বোচ্চ ছক্কার মালিকও তিনি। বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ এ আসরে ২৮ ম্যাচ তিনি ৫৪ টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। এর আগে ৪৯ ছক্কা নিয়ে এ রেকর্ডের মালিক ছিলেন ক্রিস গেইল।

ক্যারিয়ারের কখনোই বিশ্বকাপ জেতা হলো রোহিত শর্মার। এবারের বিশ্বকাপে যেভাবে এগোচ্ছিলেন, তাতে ইতিহাসের অংশ হওয়ার দিকেই ছুটছিলেন তিনি। তবে এক রাশ আক্ষেপ সঙ্গী হলো তাঁর। রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো তাঁকে।

বিশ্বকাপ জেতা হয়নি ব্রায়ান লারা, এ বি ডি ভিলিয়ার্স, জ্যাক ক্যালিসদের মতো আরো অনেক মহাতারকার। বিশ্বকাপ না জিতলেও রোহিত শর্মা সেই মহাতারকাদেরই একজন। যাকে মহাকাল রাখবে মনে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link