নাজমুল হোসেন শান্ত, পুরো দেশের চোখে ছিলেন লর্ড। দিনের পর দিন বিশ্রী রকমের ব্যঙ্গ বিদ্রূপ সহ্য করতে হয়েছিল তাঁকে, কিন্তু ২০২২ সালের শেষদিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবার ধারাবাহিকভাবে রান পান তিনি। এরপর থেকে আর সমালোচনার সুযোগ দেননি বললেই চলে।
তবে ব্যাটিংয়েই শেষ নয়, হুট করে অধিনায়কত্বের সুযোগ পেয়ে সেখানেও ক্রিকেটপ্রেমীদের মুগ্ধ করতে শুরু করেন শান্ত। ব্যাটিংয়ের মত নেতৃত্বের ব্যাটন হাতে পারফর্ম করতে তাঁর অবশ্য সময় লাগেনি, একেবারে সূচনা থেকেই হয়ে উঠেছেন পারফেক্ট লিডার।
ফরম্যাট অনুযায়ী বলা যাক, বনেদি সাদা পোশাকে এই বাঁ-হাতি প্রথম টস করতে নামেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। প্রথম ম্যাচেই জয়! আর অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি। এর আগে কোন বারই বাংলাদেশ ঘরের মাঠে কিউইদের টেস্ট হারাতে পারেনি, এর আগে কখনোই কোন বাংলাদেশি অধিনায়ক নেতৃত্বের অভিষেকে শতক হাঁকাননি – তিনি কি না একসাথেই গড়েছেন এই দুই বিরল কীর্তি।
ওয়ানডেতে অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক ম্যাচে ৭৬ রান করে আগেই রেকর্ড গড়েছিলেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। তবে পুর্নাঙ্গভাবে দায়িত্ব পান নিউজিল্যান্ড সফরে, ওয়ানডে সিরিজে কখনো ক্যাপ্টেন্সি না করেও সাহসে ভর করে ঠিকই ঘোষণা দিয়েছিলেন সিরিজ জয়ের। না, তিনি কথা রাখতে পারেননি; টাইগাররা সিরিজ জেতেনি।
কিন্তু তৃতীয় ওয়ানডেতে শরিফুল, তানজিমদের দাপুটে বোলিংয়ের পর অপরাজিত হাফসেঞ্চুরি করে দলকে ঠিকই অ্যাওয়ে ওয়ানডে প্রথম জয়ের স্বাদ দিয়েছেন এই তারকা। এরপর বাকি ছিল কেবল টি-টোয়েন্টি, এই ফরম্যাটেও টস করতে নেমে জয় দিয়েই শুরু করেছিলেন। দিন শেষে জিতেছেন ম্যাচটাও।
এদিন ব্যাট হাতে বলার মত পারফর্ম না করলেও বরাবরের মতই অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন দারুণভাবে। ফিল্ড সেট আপ, বোলার রোটেশনে যে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন তাতে তাঁর ক্রিকেটীয় মস্তিষ্কের প্রখরতা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে আরো অনেকটা।
সাকিব, তামিমদের ক্যারিয়ার এখন প্রায় শেষের দিকে; তাঁদের জায়গা নিতে শুরু করেছে নতুন আরেকটা প্রজন্ম। ঠিক এই সময় ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন শান্তর উত্থান টিম বাংলাদেশের কত বড় আশীর্বাদ সেটা ক্রিকেট উপলব্ধি করতে পারা প্রতিটা মানুষই বুঝতে পারছেন; প্রতি চলনে বলনে শান্ত আসলে বুঝিয়ে দিচ্ছেন টাইগারদের ভবিষ্যৎ দলপতি হতেই তাঁর এমন জাগরণ।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিশ্চয়ই সেটা টের পেয়েছে, স্থায়ী অধিনায়ক তাই এই ব্যাটারকেই করা হবে সেটা প্রায় নিশ্চিত। তবে এই পদক্ষেপ যত দ্রুত নেয়া হবে, ততই লাভবান হবে লাল-সবুজের ক্রিকেট।