আইসিএলে হারানো সম্ভাবনাময় প্রতিভা

সেটা ছিল আধুনিক ক্রিকেটের এক অন্ধকার অধ্যায়। প্রায় এক যুগ পূর্বে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ (আইসিএল) নামে একটি টি-টোয়েন্টি লিগ চালু করা হয় ভারতে। এটাই  বিশ্বে প্রথমবারের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট প্রবর্তন করে। যদিও আইসিএল আয়োজনে ভারতের সর্বোচ্চ ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) অনুমতি নেওয়া হয়নি।

তাই, বিসিসিআই সরাসরি আইসিএলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। একই সাথে বিসিসিআইয়ের চাপের মুখে বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট বোর্ড তাদের খেলোয়াড়দের এ লিগে খেলতে বাঁধা দেওয়ার জন্য খেলোয়াড়দের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আইসিসিও ছিল তাঁদের পাশে।

সে সময় বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার ধ্বংস হওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করে এই আইসিএল। ওই ভুল না করলে হয়তো অন্যরকম হতে পারতো তাঁদের ক্যারিয়ারের গতিবিধি।

  • আফতাব আহমেদ (বাংলাদেশ)

আফতাব আহমেদ ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একজন তারকা ক্রিকেটার। মাত্র ১৯ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তাঁর। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ৮৫ টি ওয়ানডে, ১৬ টি টেস্ট ও ১১ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন তিনি।

২০০৮ সালে আইসিএল খেলতে যাওয়ায় যে কয়জন বাংলাদেশি ক্রিকেটারের ওপর ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তাদের মধ্যে আফতাব অন্যতম। কার্যত এখানেই তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি ঘটে যায়।এর দুই বছর পর নিষেধাজ্ঞা মওকুফের ফলে পুনরায় জাতীয় দলে ফিরলেও বেশিদিন খেলতে পারেননি তিনি।

  • রোহান গাভাস্কার (ভারত)

সুনীল গাভাস্কারের একমাত্র পুত্র রোহান গাভাস্কার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন ২০০৪ সালে। শুরুতেই তাঁর কাছ থেকে অনেক প্রত্যাশা ছিল ভারতীয়দের। তবে তাদের সে চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হন তিনি। ভারতের হয়ে মাত্র ১১ টি ওয়ানডে খেলেই থেমে যায় তাঁর ক্যারিয়ারের চাকা।

২০০৭ সালে কলকাতা টাইগার্সের হয়ে খেলতে আইসিএলে যোগ দেন রোহান। তিনি সেখানেও তেমন কিছু করে দেখাতে পারেননি। পরবর্তীতে  বিসিসিআই আইসিএলে খেলা তাদের ৭১ জন ক্রিকেটারকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে আবারও খেলায় ফেরেন তিনি। কিন্তু জাতীয় দলে আর ডাক মেলেনি তাঁর। এখন তিনি পুরোপুরি বাবার মত মন দিয়েছেন ধারাভাষ্য কক্ষে।

  • জাস্টিন কেম্প (দক্ষিণ আফ্রিকা)

দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক মারমুখী ব্যাটসম্যান জাস্টিন ক্যাম্প ক্যারিয়ারের সেরা সময়টায় আইসিএলে যোগ দেন। নিজের ব্যাটিং প্রতিভা এবং ম্যাচ শেষ করার দক্ষতার জন্য পরিচিত ছিলেন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে ৮৫ টি ওয়ানডে, ৪ টি টেস্ট ও ৮ টি টি-টোয়েন্টি খেলেন জাস্টিন কেম্প। কিন্তু আইসিএলে খেলতে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি তাঁর ক্যারিয়ারকে নিঃশেষ করে দেয়।

  • মোহাম্মদ সামি (পাকিস্তান)

পাকিস্তানের ওই সময়কার দলের অন্যতম প্রতিভাবান একজন ক্রিকেটার তিনি। ২০০১ সালে তাঁর অভিষেক। দেশের হয়ে ৩৬ টি টেস্ট, ৮৭ টি ওয়ানডে ও ১৩ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন। কিন্তু ২০০৮ সালে আইসিএল খেলতে যাবার পর দীর্ঘ সময় তিনি জাতীয় দলের বাইরে থাকেন। এরপর দলে ডাক পেলেও থিতু হতে পারেননি। ছিলেন আসা যাওয়ার মধ্যে। যদিও বর্তমানে তিনি ক্রিকেটে সক্রিয় তবে বোলিংয়ে তাঁর সেই পুরনো ধারটা আর নেই।

  • শেন বন্ড (নিউজিল্যান্ড)

আইসিএলে খেলতে যাওয়ায় কিউই পেসার শেন বন্ডকে বিশ্বাসঘাতক বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। সে সময়ের অন্যতম প্রতিভাধর এই পেসার ঘন্টায় ১৫০ কিলোমিটার বেগে বল করতে পারতেন। ১৮ টি টেস্ট, ৮২ টি ওয়ানডে ও ২০ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সাজানো ক্যারিয়ারে উইকেট সংগ্রহ করেছেন যথাক্রমে ৮৭, ১৪৭ ও ২৫টি।

যদিও আইসিএলে যোগদানের ২ বছর পর জাতীয় দলে ফিরে সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি তিনি। তারপর ২০১০ সালে ইনজুরির ধকল সামলাতে সামলাতে ক্লান্ত হয়ে পড়া শরীর খানা তাঁর ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টেনে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link