একজন আফগানি আফগানের কীর্তি

আফগানিস্তানের বর্তমান অধিনায়ক আসগর আফগান। আগে তার নাম ছিলো আসগর স্ট্যানিকজাই। সেখান থেকে দেশের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন আসগর আফগান। এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক তিনি। ব্যাট হাতে মিডল অর্ডারে অন্যতম ভরসার নাম তিনি।

নাম পরিবর্তন নতুন কিছু নয়। অনেকেই অনেক কারণে নিজের নাম বদলে ফেলেন। কিন্তু দেশকে ভালোবেসে নাম পরিবর্তন করেছেন এমন ক্রিকেটার কি আদৌ আছেন?

হ্যাঁ, আছেন। তিনি হলেন আফগানিস্তানের বর্তমান অধিনায়ক আসগর আফগান। আগে তাঁর নাম ছিলো আসগর স্ট্যানিকজাই। সেখান থেকে দেশের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন আসগর আফগান। এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক তিনি।

ব্যাট হাতে মিডল অর্ডারে অন্যতম ভরসার নাম তিনি। চলতি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে তিনি নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন।

ক্যারিয়ারে এর আগে খেলেছিলেন মোটে পাঁচটি টেস্ট! আছে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৯০ রানের ইনিংস। তার ইনিংসে ভর করে তাদের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম জয় পায় আফগানরা। অভিষেকের পর থেকেই নিজেকে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে উজাড় করে দিয়েছেন কাবুলের জন্মগ্রহণ করা আসগর আফগান।

২০১৫ সালে মোহাম্মদ নবীর কাছ থেকে অধিনায়কের দায়িত্ব পাবার পর ৪ বছর বেশ ভালো অবস্থানেই আফগানিস্তানকে নিয়ে গিয়েছিলেন আসগর আফগান। টি-টোয়েন্টিতে রাশিদ খান, মুজিব উর রহমান, মোহাম্মদ নবী, মোহাম্মদ শাহজাদদের মতো খেলোয়াড় নিয়ে বেশ ভালো পারফরম্যান্স করে যাচ্ছিলো আফগানরা।

তিন ফর্মেট মিলিয়ে এখন পর্যন্ত (১১ই মার্চ, ২০২১) ৫৯ ম্যাচে ৩৪ জয় আর ২১ হার আছে আসগরের নেতৃত্বে। ৬০% এর বেশি জয়ের হার নিয়ে আফগানিস্তানের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক তিনি। তবে হুট করেই ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে তাকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়! আর দায়িত্ব দেয়া হয় আনকোরা গুলবাদিন নায়েবকে। নায়েবের অধীনে গেলো ওয়ানডে বিশ্বকাপে ১২ ম্যাচে ২ জয় ও ১০ হার নিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করে আফগানিস্তান।

গেলো ওয়ানডে বিশ্বকাপের পরই তিন ফর্মেটে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় রাশিদ খানকে। রাশিদের অধীনের বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে প্রথম জয় পায় আফগানরা। তারপর পুনরায় আবারো তিন ফরম্যাটে অধিনায়কের দায়িত্ব পান আসগর আফগান!

১৪ জুন ২০১৮, প্রথম আফগানিস্তানের অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে অভিষেক হয় আসগর আফগানের। যদিও সে ম্যাচ শেষ হয় মাত্র ২ দিনে! আফগানরা পরাজিত হয় ইনিংস ও ২৬২ রানের বিশাল ব্যবধানে। ২০১০ সালে চার জাতির ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় আসগত আফগানের। নিজের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ১ রানে আউট হন তিনি! আফগানরাও সে ম্যাচ হারে ৫ উইকেটে।

এর আগে ২০০৯ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক হয় তার! মূলত ওয়ানডে দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন আসগর। তবে সে ম্যাচে তিনি মাত্র ৯ রান করলেও আফগানরা জয় পায় ৮৯ রানের বড় ব্যবধানে।

চলতি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করেন আসগর আফগান। ৪র্থ উইকেটে হাসমতুল্লাহ শাহিদির সাথে ৩০৭ রানের জুটির পথে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেন তিনি। দু’জনের ৩০৭ রানের জুটিটি টেস্টে আফগানিস্তানের সেরা জুটি। ১৪ চার ও দুই ছয়ে ১৬৪ রানে সিকান্দার রাজার বলে লেগ বিফোরের শিকার হয়ে আউট হন আসগর।

আফগানিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসে হয়তো অনেক অধিনায়ক আসবে যাবে, তবে আসগর আফগানের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আফগানিস্তানের যে নব্য সূচনা হয়েছে তা আজীবন ইতিহাস হয়ে থাকবে। যে দেশের প্রতি ভালোবাসায় নিজের নামের সাথে দেশের নাম জুড়ে দেন তার ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে কারো সন্দেহ থাকবার কথা নয়। যতদিন ক্রিকেটে থাকবেন এভাবেই হয়তো আফগানিস্তান ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন নিজের প্রতিভা আর কৌশল দিয়ে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...