ঋষাভ পান্তকে ঠিক ক্রিকেটীয় ব্যাকরণ দিয়ে বর্ণনা করা কঠিন। ক্রিকেট মাঠের খেয়ালি এক রাজপুত্র। তাঁকে নিয়ে সমালোচনা হয়। নিয়মিত রান করতে পারেন না। তবে তাঁর ছোট্ট এই ক্যারিয়ারে যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন, অনেকের পুরো ক্যারিয়ার জুড়েও হয়তো তা থাকে না। যেদিন খেলেন সেদিন আলোচনা তাঁকে নিয়েই হতে বাধ্য। সব আলো তাঁর উপরই পড়া চাই।
আমরা গল্প লিখতে গেলে একটা ভালো শুরু চাই। যেন পাঠক পুরোটা পড়ার আগ্রহ পান। তেমনি ক্রিকেটাররা তাঁদের সেরা দুই একটা ইনিংস সামনে রাখতে চান। কিংবা দুই একটা সেঞ্চুরিকে সামনে রাখেন।
পান্ত তাঁর ক্যারিয়ারে চারটি সেঞ্চুরি করেছেন। কোনটিকে রেখে কোনটি এগিয়ে রাখবেন পান্ত? পান্ত সিদ্ধান্ত নিক। আমরা প্রতিবারের মত লিখে যাবো এটাই পান্তের সেরা ইনিংস। আমি নিশ্চিত এরপর আবার যেদিন পান্ত সেঞ্চুরি করবেন সেদিনও লিখব এটাই পান্তের সেরা।
পান্তরা আসলে এমনই বুঝি হন। গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আহমেদাবাদে সেঞ্চুরি করেছিলেন। এরপর প্রায় একবছর কেটে গেলেও বড় রানের দেখা পাচ্ছিলেন না। এরমাঝে হাফ সেঞ্চুরিই করেছেন মাত্র একবার। পান্তকে নিয়ে সমালোচনা তীব্র হচ্ছিল। অথচ আজ কেপ টাউনে পান্তের ব্যাটেই বেঁচে আছে ভারতের ম্যাচ জয়ের আশা।
আজ মাত্র ৫৮ রানে চার উইকেট হারিয়ে কঠিন বিপদে পড়েছিল ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে রাবাদাদের বিপক্ষে যেনো দাড়াতেই পারছিল না ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ। সেই সময় পান্ত হালটা ধরলেন আবার। চারদিকে যখন অন্ধকার তখন আরেকবার প্রমাণ করলেন তিনি নিজেই এক আলোর উৎস।
প্রথমে বিরাট কোহলিকে সাথে নিয়ে দলকে টেনে তুলতে চেয়েছেন। কোহলি আউট হয়ে ফেরার পর অশ্বিন, শারদুল ঠাকুর, জাসপ্রিত বুমরাহ সবাইকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। একপ্রান্ত ধরে রেখে ভারতকে আগলে রেখেছেন প্রোটিয়া পেস অ্যাটাকের থেকে। শেষ পর্যন্ত ১০০ রান করেই অপরাজিত ছিলেন। তাঁর এই ইনিংসে ভর করেই ১৯৮ রান করতে পারলো ভারত। এখন এই পুঁজি নিয়েই ম্যাচ জয়ের জন্য লড়াই চালাবেন ভারতের পেসাররা।
পান্ত যে কত বড় টিমম্যান তাঁর একটা প্রমাণ আজও পাওয়া গিয়েছে। তিনি তখন ৯৯ রানে অপরাজিত। সেঞ্চুরিটা ছোয়ার জন্য তাঁর প্রয়োজন মাত্র একটি রান। যেকোন ব্যাটসমানই সিঙ্গেল নিয়ে মাইলফলকটা ছোয়ার চেষ্টা করবেন। তবে তিনি দলের কথা ভাবলেন। দলের রান আর কিছু বাড়ানোর জন্য টেলেন্ডারকে স্ট্রাইক দিলেন না। ওভারের প্রথম চার বল কোন সিঙ্গেল নিলেন না। সেঞ্চুরির নামক সোনার হরিণকে ভুলে পান্ত ডুবে ছিলেন দলকে আগলে রাখার ধ্যানে। ঠিক একজন্য পান্ত স্পেশাল।
এই প্রথম কোন কিপার ব্যাটসম্যান ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা তিন দেশেই বিদেশের মাটিতে সেঞ্চুরি করলো। তৃতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এই সেঞ্চুরিকে স্পেশাল না বলে উপায় কী। গত ছয় মাস ধরে টেস্টে সেঞ্চুরির দেখা না পাওয়া প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা আরো ভালো করেই জানেন পান্ত কী কঠিন একটা পাহাড় টপকালেন।
প্রথম ইনিংসে ভারত অল আউট হয়ে গিয়েছিল ২২৩ রানে। জবাবে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরাও সুবিধা করতে পারেননি। তাঁরা করেছিলেন মোট ২১০ রান। ফলে দ্বিতীয় ইনিংসে পান্তের এই সেঞ্চুরি দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য বড় বাঁধা হয়ে উঠতে পারে। চতুর্থ ইনিংসে এই রান পারি দিতেও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন পান্তের মতই কাউকে।