এ মিরাজ নতুন মিরাজ

অনূর্ধ্ব-১৯ দলে থাকাকালীন মিডল অর্ডারেই ব্যাট করতেন। তবে জাতীয় দলে আসার পর উপরে ব্যাট করার সেই সুযোগটা আর হয়ে ওঠেনি। তাই বাংলাদেশ দলে মেহেদি মিরাজের ভূমিকাটা ছিল বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে। জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে ব্যাট হাতে রানের ফোঁয়ারা তোলা মিরাজের ঠিক খোঁজ মিলছিল না। মিরাজের কাছে সমর্থকদের প্রত্যাশাও তাই খুব বেশি ছিল না। ব্যাট হাতে যে সম্ভাবনা দেখিয়ে তিনি জাতীয় দলে এসেছিলেন সেটির ছিটেফোঁটাও দেখা মেলেনি প্রথম বছর কয়েকের মাঝে।

সেই মিরাজই এখন লোয়ার অর্ডারে দলের অন্যতম ভরসা। দলের ব্যাটিং ধস হলেও লোয়ার অর্ডারে আছেন একজন মিরাজ। তিনি যে দলের হাল ধরতে পারবেন সেই আস্থাটা এখন বাংলাদেশের সমর্থকদের আছে।

মিরাজের বদলে যাওয়ার পেছনের মূলে আছে ২০২১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ। সেখানে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সাদা পোশাকে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান মিরাজ। এই যেন বদলে গেল মিরাজের ভাগ্য। ব্যাট হাতে এরপর থেকে খেলেছেন বেশ কিছু ভাল ইনিংস।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০৩ রানের ইনিংস পরের টেস্টেই ফিফটির দেখা পান মিরাজ। বড় ইনিংস না খেলতে পারলেও শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে প্রমাণ করেছেন নিজের সামর্থ্যের। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে চলতি বছর এক ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের সাক্ষ্যী হয় বাংলাদেশ। সেখানেও বোল্ট, ওয়াগনারদের সামনে খেলেন ৪৭ রানের ইনিংস।

ব্যাট হাতে উদাসীন মিরাজ এখন বেশ পরিণত। ২০১৭ সালে ওয়ানডে অভিষেকের পর ওই বছর দেখা পান মেইডেন ফিফটির। এরপর তিন বছরে ব্যাট হাতে একেবারেই সাদামাটা পারফরমার ছিলেন তিনি। তবে চলতি বছর ৬ ম্যাচে ৪ ইনিংসে ৭২ গড়ে রান করেছেন ১৪৪! আফগানিস্তানের বিপক্ষে আফিফ হোসেনের সাথে রেকর্ডগড়া জুটির পথে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন এই মিরাজই। খেলেছিলেন ৮১ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও প্রথম ওয়ানডেতে ১৩ বলে ১৯ রানের ক্যামিওর পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে খেলেন ৩৮ রানের ইনিংস।

লোয়ার অর্ডারে ব্যাট হাতে মিরাজের এই ছোট ছোট অবদান বাংলাদেশ দলকে নিয়ে যাচ্ছে বড় সংগ্রহের পথে। লোয়ার অর্ডারে খুব বেশি ওভার খেলার সুযোগও পাননা তিনি। তবে গেল এক বছরে ব্যাট হাতে মিরাজ কতটা পরিণত সেটা তাঁর ব্যাটিংয়ে স্পষ্ট। ক্যারিয়ারের শুরুতে উইকেট দিয়ে আসা মিরাজ এখন দলের দায়িত্ব নিতে জানে। চাপের মুখে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থেকে দলকে টেনে তুলতেও জানেন তিনি, পারেন ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলতে।

ব্যাট হাতে মিরাজ এখন নিঃসন্দেহে বদলে যাওয়া একজন। ২০২১ সালে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ওই সেঞ্চুরি যেন বাতলে দিয়েছে মিরাজের এই নতুন পথ। মিরাজ নিজেও আশায় থাকেন আরও উপরে ব্যাট করার। হয়তো সেই সুযোগটা মিলছে না কিন্তু লোয়ার অর্ডারে মিরাজের অবদান বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে বড় পাওয়া।

মিরাজের বোলিং সামর্থ্য নিয়ে কখনোই প্রশ্ন ছিল না। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ব্যাট হাতে চার নম্বরে নামা মিরাজকে যেন খুঁজে বেড়াচ্ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট। যুব দলে ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে খেলা মিরাজ জাতীয় দলে এসে বোলিং অলরাউন্ডার। এ নিয়ে হয়তো মিরাজেরও আক্ষেপ আছে। ঘরোয়া ক্রিকেট কিংবা ফ্র‍্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল) তিনি ওপেনিংয়ে খেলতে চেয়েছেন একাধিকবার।

ব্যাটিংয়ে উন্নতি করার সদিচ্ছা মিরাজের আছে। পরিশ্রম আর প্রচেষ্টা দিয়ে হয়ত নিজেকে আরও বদলে ফেলবেন মিরাজ। ব্যাট হাতে লোয়ার অর্ডারে নতুন এই মিরাজ বাংলাদেশের জন্য বড় প্রাপ্তি। টেস্টে মাটি কামড়ে পড়ে থাকা, রঙিন পোশাকে লোয়ার অর্ডারে ছোট ছোট অবদান – মিরাজ যেন দিনে দিনে ঠিক আগের মত হয়ে উঠছেন একজন জেনুইন অলরাউন্ডার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link