শ্রীলঙ্কার উত্থান, টেকিং পয়েন্টস

এক সময় শ্রীলঙ্কা ছিল ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি। কিন্তু সময়ের আবর্তনে লঙ্কান কিংবদন্তিরা যখন অবসরে গিয়েছেন, সাথে করে নিয়ে গিয়েছেন লঙ্কান ক্রিকেটের জৌলুশ। তিলকারত্নে দিলশান, সনাথ জয়াসুরিয়া, কুমার সাঙ্গাকারাদের অবসরের পরেই মূলত পিছিয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট। তবে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কানরা।

ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে ওয়ানডে সিরিজ হারানোর পর সম্প্রতি পাকিস্তানকেও টেস্টে হারিয়েছে লঙ্কানরা। আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের অন্তর্ভূক্ত এই সিরিজে প্রথম ম্যাচ হারলেও শেষ ম্যাচে জিতে সমতায় ফিরেছেন তারা। এই গল স্টেডিয়ামে টানা চারটি ম্যাচ আয়োজন করেছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি)।

তবে চার ম্যাচেই ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করেছে গলের পিচ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাইশ গজে বেশ টার্ন এর দেখা পাওয়া গেলেও পাকিস্তান সিরিজে পিচ ছিল ফ্ল্যাট। আপাতত সদ্য সমাপ্ত সিরিজটির কয়েকজন সেরা পারফর্মারের দিকে আলোকপাত করা যাক।

পুরোটা সিরিজ জুড়ে অধিনায়ক বাবর আজম অবিশ্বাস্যভাবে পারফর্ম করেছেন। সফরকারীদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। প্রথম ম্যাচে রেকর্ড ৩৪২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করার সময় ৫৫ রান এবং এর আগে প্রথম ইনিংসে বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে ১১৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

শেষ টেস্টে দল হারলেও একাই লড়াই করেছেন, ৮১ রানের চমৎকার এক ইনিংস এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। গত এক বছরে বাবরের ব্যাটিং গড় ৬৩ এর উপরে। আইসিসির র‍্যাংকিংয়ে জো রুট এবং মার্নাস লাবুশেনের পরেই আছেন তিনি। এছাড়া ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে নাম্বার ওয়ান লাহোরের এই ক্রিকেটার। 

তবে পাকিস্তানের হয়ে সিরিজের একমাত্র তারকা বাবর আজম নয়। তরুণ ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক নিজেও ব্যাট হাতে ছিলেন দুর্দান্ত। তাঁর প্রথম টেস্টে ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ১৬০ রানের ইনিংসটি সমর্থকদের মনে থাকবে অনেকদিন। 

সেই ম্যাচে ২২ বছর বয়সী শফিক ধৈর্য এবং দৃঢ়তার সাথেই ব্যাট করেছেন। অধিনায়কের প্রশংসাও মিলেছে তাঁর কপালে। আব্দুল্লাহ শফিক যে পাকিস্তানের অন্যতম ভবিষ্যৎ তারকা হতে যাচ্ছেন সেটি স্বীকার করেছেন বাবর। 

অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে সেরা পারফর্মার নি:সন্দেহে স্পিনার প্রভাত জয়সুরিয়া। এখন পর্যন্ত মাত্র তিন টেস্ট খেলা প্রবাথ ইতোমধ্যে চারবার ফাইফারের দেখা পেয়েছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে পুরো সিরিজে ১৭ উইকেট নিয়ে একাই সফরকারীদের ধ্বসিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ইনফর্ম বাবর আজমও তিনবার তাঁর ফাঁদে আটকা পড়েছিলেন।

সবমিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সাথে অভিষেকের পর থেকে ৩ ম্যাচে ২৯ উইকেট শিকার করেছেন প্রবাথ। অবশ্য তাঁর এমন পারফরম্যান্সের জন্য কিছুটা অভিবাদন পেতে পারেন সতীর্থ রমেশ মেন্ডিস। শেষ ম্যাচে নয় পাক ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে প্রবাথের কাজ অনেকটা সহজ করে দিয়েছিলেন মেন্ডিস। 

লঙ্কান ব্যাটারদের মাঝে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন দিনেশ চান্দিমাল। পাক বোলারদের বিরুদ্ধে একেবারে নিখুঁত ছিলেন তিনি। সাবেক লঙ্কান অধিনায়ক প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৭৬ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৯৬ করেছিলেন। সেবার দলের জয় আনতে পারেননি ঠিকই তবে পরের ম্যাচেও তাঁর ব্যাটে রান মিলেছে।

দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর ৮০ রানের নকটি শ্রীলঙ্কার জয়ের ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিল। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া সিরিজেও তিনি ফর্মে ছিলেন, অজিদের বিপক্ষে নিজের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন চান্দিমাল। এরা ছাড়াও তরুণ নাসিম শাহ, অলরাউন্ডার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা নিজ দলের হয়ে দারুণ পারফরম্যান্স করেছেন সদ্য সমাপ্ত দুই ম্যাচের সিরিজে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link