ভারতের প্রধান নির্বাচকের পদত্যাগ!

কদিন আগেই ভারতের ক্রিকেট পাড়া উত্তাল হয়ে পড়েছিল তাঁর বিস্ফোরক সব বিবৃতিতে। ভারতের ক্রিকেট অন্দরমহলের থলের বেড়াল বেরিয়ে এসেছিল তাঁর মন্তব্যে। এবার নিজেই খবরের শিরোনাম হলেন তিনি। ভারতের প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন চেতন শর্মা। তাঁর এই পদত্যাগ গ্রহণও করেছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব জয় শাহ।

মূলত ভারতীয় টেলিভিশন জি নিউজের অনুষ্ঠান স্টিং অপারেশনের ফাঁদে পড়েই পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন চেতন শর্মা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি স্টিং অপারেশন অনুষ্ঠানে চেতন শর্মার একটি ফুটেজ প্রচারিত হয়। যেখানে ভারতের ক্রিকেট নিয়ে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।

এর মধ্যে উঠে আসে সাবেক অধিনায়ক ও বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলির সাথে বিরাট কোহলির দ্বন্দ্ব, রোহিত শর্মা-বিরাটের মধ্যে ইগোর লড়াই, ভারতীয় ক্রিকেটারদের ইনজেকশন নিয়ে ফিটনেস টেস্টে পাশ করার ঘটনা, হার্দিক পান্ডিয়ার সাথে ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের কথা, জাসপ্রিত বুমরাহ’র ইনজুরি গোপন করার তথ্য সহ আরো বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ভারতের হয়ে ২৩ টেস্ট ও ৬৫ ওয়ানডে খেলা চেতন শর্মা গত মাসেই নির্বাচক প্যানেলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। এটি ছিল তাঁর নির্বাচক হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদের সময়কাল। তবে চলমান বিতর্কের জেরে বেশিদিন না গড়াতেই নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন তিনি।

অবশ্য প্রথম মেয়াদেই বেশ সমালোচিত ছিলেন চেতন শর্মা। গত বছরের এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত প্রত্যাশিত ফল না পাওয়ায় তাঁকে নির্বাচক প্যানেল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে এরপর আবারো সেই চেতন শর্মার নেতৃত্বেই নতুন নির্বাচক প্যানেল ঘোষণা করে বিসিসিআই।

নতুন মেয়াদের শুরু থেকেই বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়েনি। প্রথম বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন, সরফরাজ খানকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে মিথ্যা আশ্বাসের কারণে। এ মৌসুমে মুম্বাইয়ের হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সরফরাজ দাবি করেন, চেতন শর্মা নাকি তাঁকে বাংলাদেশ সফরে দলে নেওয়ার জন্য আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে বাংলাদেশ সফরের দল তো দূরে থাক, মিডল অর্ডারে শ্রেয়াস আইয়ার, ঋষাভ পান্তের অনুপস্থিতিতেও সরফরাজকে দলে ডাকা হয়নি। আর এ কারণেই সে সময় চরম সমালোচনার মুখে পড়েন চেতন শর্মা।

এ ঘটনার সপ্তাহ দুয়েক পার না হতেই স্টিং অপারেশনের চেতনের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে বিস্ফোরক সব মন্তব্য। ভারতের ক্রিকেটে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য নতুন না হলেও এই প্রথম দলের দায়িত্বশীল পদাবলে থাকা কেউ একজন এভাবে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন। যার কারণে এ ফুটেজ ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন চেতন শর্মা।

বিসিসিআই যদিও শুরুতেই কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তবে গুঞ্জন ছিল, বরখাস্ত হতে পারেন চেতন শর্মা। অবশ্য তিনি সেটির সুযোগই রাখলেন। জলঘোলা হওয়ার আগেই নিজে থেকে পদত্যাগ করলেন।

চেতন শর্মা বিদায় নেওয়ার পর নির্বাচক প্যানেলে এখন আছেন সলিল অ্যাঙ্কোলা, শিব সুন্দর দাস, সুব্রত ব্যানার্জি এবং এস শরত। বিসিসিআই এখনও যদিও নতুন প্রধান নির্বাচকের নাম ঘোষণা করেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে চেতন শর্মার জায়গায় প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পেতে পারেন শিব সুন্দর দাস।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভারতের নির্বাচক প্যানেলে প্রথমবারের মতো চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন চেতন শর্মা। নিজের দায়িত্বকালে দুই বছরের ব্যবধানেই দুই মেয়াদ পার করেছেন তিনি। যদিও দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর সময়কাল আর দীর্ঘায়িত হলো না। তবে নির্বাচক হিসেবে বেশ ব্যর্থ একটা সময়ই কাটিয়েছেন তিনি।

তাঁর সময়কালে একটি শিরোপাও জেতেনি ভারত। তারপরও বিসিসিআই তাঁর উপরেই ভরসা রেখেছিল। কিন্তু হঠাতই বিস্ফোরক মন্তব্যে নিজেকে জড়িয়ে ফেললেন।  স্টিং অপারেশনের এই ফুটেজ প্রকাশের পর নিজেই বুঝে ফেলেছিলেন তাঁর সাথে ক্রিকেটারদের মধ্যে এক ধরনের অনাস্থাবোধ তৈরি হবে। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই পদত্যাগ করলেন তিনি।

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link