চেন্নাই সুপার কিংস, নেট রান রেটের রাজা

এবারের আইপিএলে পয়েন্ট তালিকায় সেরা দুইয়ে থেকেই শেষ চারে উঠেছে চেন্নাই সুপার কিংস। লখনৌ সুপার জায়ান্টসের সাথে পয়েন্ট সমান থাকলেও রান রেটে এগিয়ে ছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। কেবল এবারের আসর নয়, এ নিয়ে ছয় বার রানরেট বেশি থাকার সুবাদে শেষ চারের টিকিট কেটেছে দলটি। 

আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে ধারাবাহিক দলের নাম চেন্নাই সুপার কিংস। চারবার শিরোপা জেতার পাশাপাশি ১৪ আসরে মাঝে ১২ আসরেই প্লে অফে উঠেছে দলটি। এবারের আসরেও সবার আগে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে দলটি। 

মৌসুমের শেষদিকে প্রতিটি দলই যেখানে পয়েন্ট এবং রানরেটের হিসেব মেলাতে ব্যস্ত, সেখানে প্রায় প্রতি মৌসুমেই নেট রানরেটের দৌড়ে বাকিদের চাইতে এগিয়ে থেকেছে দলটি। 

চেন্নাইয়ের নেট রান রেটে এগিয়ে থাকার শুরুটা হয়েছিল ২০১০ মৌসুমে। সেবারে প্লে অফের শেষ দুই পজিশনের জন্য সমান পয়েন্ট নিয়ে লড়াই করছিল চারটি দল। কিন্তু সবার চাইতে ভালো নেট রান রেট থাকার তৃতীয় স্থানে থেকে শেষ চারে উঠেছিল দলটি।

পরের বছরেও বদলায়নি দৃশ্যটা, সেবারে সমান ১৮ পয়েন্ট নিয়েও নেট রান রেটে এগিয়ে থাকার সুবাদে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে পেছনে ফেলে সেরা দুইয়ে নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করে চেন্নাই। এরপর তো কোয়ালিফায়ার এবং ফাইনালে দুবার রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে।   

এরপর ২০১২, ২০১৯, ২০২১ এবং ২০২৩  মৌসুমেও নেট রান রেটে এগিয়ে থাকার সুবিধা নিয়েই প্লে অফে উঠেছিল চেন্নাই। একমাত্র ২০১২ মৌসুম বাদে প্রতিটি আসরেই শিরোপা জিতেছে দলটি। 

এবারের আসরেও ইতোমধ্যেই ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে দলটি। কেবলমাত্র ২০১৪ মৌসুমেই কলকাতা নাইট রাইডার্সের সাথে নেট রান রেটে পিছিয়ে থেকে সেরা দুইয়ে নিজেদের জায়গা হারিয়েছিল দলটি।  

নিশ্চিতভাবেই নেট রান রেটে ধারাবাহিকভাবে তাদের এই সাফল্য রাতারাতি আসেনি কিংবা আশ্চর্যজনক কোনো ঘটনা নয়। বরং গোটা মৌসুমজুড়ে পরিকল্পনা করে হিসেব কষে এগিয়েছে দলটি। তাতেই মিলেছে বাকি দলগুলো থেকে এগিয়ে থাকার সাফল্য। 

কোনো দল নেট রান রেট বাড়াতে চাইলে উপায় হচ্ছে বড় লক্ষ্য যত কম ওভারে সম্ভব তাড়া করে জেতা কিংবা প্রতিপক্ষে বড় রান তাড়ার চাপে ফেলে অল্পতেই গুটিয়ে দেয়া। তবে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকার পূর্ব শর্তই হচ্ছে নিজেরা বড় ব্যবধানে না জিততে পারলেও বড় ব্যবধানে হারা যাবে না।

চেন্নাই ঠিক এই কাজটাই করে গেছে গোটা মৌসুমজুড়ে। যে তিন ম্যাচে আগে ব্যাট করে হেরেছে দলটি, প্রতিটি ম্যাচেই খেলা গড়িয়েছে শেষ ওভার পর্যন্ত। দৃশ্যটা বদলায়নি রান তারা করার বেলাতেও, তাদের সর্বোচ্চ হারের ব্যবধানটা ছিল ৩২ রানের। রাজস্থানের বিপক্ষে সেদিন বাজে দিন কাটিয়েছিলেন চেন্নাইয়ের ব্যাটসম্যানরা। 

অন্যদিকে, রাজস্থান রয়্যালস দুই ম্যাচে ৫০ রানের বেশি ব্যবধানে জেতার পরও রানও রেটে সুবিধা করতে পারেনি। কেননা ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে ১১২ রানের হারের পাশাপাশি গুজরাট তাঁদের বিপক্ষে ম্যাচ জিতে নিয়েছিল ১৪ ওভারেই। ফলে নিজেরা বড় ব্যবধানে জিতলেও নেট রান রেটে এগিয়ে থাকতে পারেনি দলটি, বিদায় নিতে হয়েছে শেষ চারের আগেই। 

অন্যদিকে, চেন্নাই প্রতি ম্যাচেই নজর রেখেছে নেট রান রেটের দিকে। মহেন্দ্র সিং ধোনি জানতেন মৌসুমের শেষদিকে নেট রানরেট হয়ে দাঁড়াবে শেষ চারে ওঠার বড় হাতিয়ার। সেই কারণেই কিনা কোন ম্যাচেই অসম্ভবের পেছনে ছোটেননি, বরং নিশ্চিত হারা ম্যাচেও নজর রেখেছেন যাতে ব্যবধানটা বড় না হয়। 

বলাই বাহুল্য, মৌসুমের এই পর্যায়ে বুঝাই যাচ্ছে নেট রানরেটের শিল্পটা ভালোই আয়ত্ত্বে আছে চেন্নাই সুপার কিংসের। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link