নিভৃতচারী খেলা হিসেবে পরিচিত দাবা খেলাকে বাংলাদেশের জন্য সবসময়ই অমিত সম্ভাবনাময় হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাষ্টার হওয়া সেটাই প্রমাণ করে। কিন্তু যতটা এগিয়ে যাওয়ার কথা ঠিক ততটা সম্ভব হয়নি। ইনডোর গেমস হিসেবে প্রায় সারাবছরই ব্যস্ত থাকেন দেশের শীর্ষস্থানীয় দাবাড়ুরা। অনেকটা নীরবেই দেশে ও দেশের বাইরে খেলে থাকেন তারা। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই কিছুটা স্থবির হয়ে পড়ে সবকিছু।
অনলাইন দাবা দিয়ে শুরু হওয়ার পর আর থেমে থাকেনি দাবা। এখন খেলাটিতে চলছে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব। প্রথম আসর শেষে এখন চলছে এশিয়ান জোনাল দাবা প্রতিযোগিতা। এই আসর থেকেও বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার টিকিট পাওয়া যাবে। কারণ এখন আর দেশের কোটায় কারো খেলার সুযোগ নেই। নিয়াজ মোরশেদকে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন সেই সুযোগ দিয়ে রেখেছে। এখন যারা খেলার জন্য উৎসাহী তাদেরকে নিজেদের মতো করে সুযোগ করে নিতে হবে পারফরম্যান্স প্রদর্শন করার মাধ্যমে। সেই সুযোগটাই নিতে চান জিয়াউর রহমান ও এনামুল হোসেন রাজীব। দেশের শীর্ষস্থানীয় এই দুই গ্র্যান্ডমাষ্টার তাই এশিয়ান জোনাল দাবায় বেশ সিরিয়াস হয়েই খেলছেন।
বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করবেন, এমন লক্ষ্য নিয়ে দেশের মাটিতে খেলছেন তারা। হাতের কাছে পাওয়া এই সুযোগটাকে হাতছাড়া করতে রাজি নন তারা। এর বাইরে তিন আন্তর্জাতিক মাষ্টার মোহাম্মদ ফাহাদ রহমান, মোহাম্মদ মিনহাজউদ্দিন আহমেদ সাগর ও আবু সুফিয়ান শাকিল খেলছেন এই আসরে। এর বাইরে বাংলাদেশের আরও ১৬ জন প্রতিযোগী খেলছেন। তবে সবাই বিশ্বকাপের টিকিট পাওয়ার লক্ষ্যে নয়, বেশিরভাগই খেলছেন রেটিং বাড়ানোর লক্ষ্যে।
দাবা ফেডারেশনের সভাপতি ও বাংলাদেশ পুলিশের মহা পরিদর্শক ড. বেনজির আহমেদ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দাবাড়– জওলাই মাসে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ দাবায় সরাসরি খেলার সুযোগ পাবেন। গত আসরের জোনাল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফাহাদ রহমান সরাসরি বিশ্বকাপে খেলেন। সে হিসেবে বয়সে সবচেয়ে নবীন এই দাবাড়ুরও লক্ষ্য রয়েছে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার। দেশের সর্বকনিষ্ট ফিদে মাষ্টার থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মাষ্টারও হয়েছে কম বয়সে। ফাহাদের চোঁখে তাই বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্নও।
বড় সাফল্য বলতে বছর দুয়েক আগে চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ডমাষ্টার দাবার শিরোপা জিতেছিলেন ফাহাদ। এবারের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে নিজের পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে ফাহাদ রহমান বলেন, ‘আমি সর্বশেষ আসরেও বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ফল করেছি। শেষ রাউন্ডে ফিলিপাইনের একজন গ্র্যান্ডমাষ্টারকে হারিয়েছিলাম। এবার এশিয়ান জোনাল দাবায় আগেরবারের মতো শিরোপা জিতে বিশ্বকাপে খেলতে চাই। আমি সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে টুর্নামেন্টটি শুরু করেছি।’
অনলাইন দাবার শিরোপা জিতে বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করার লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন গ্র্যান্ডমাষ্টার জিয়াউর রহমান, ‘করোনার কারণে দুমাস পর বোর্ডে ফিরলাম। প্রিমিয়ার লিগে খেলেছি সর্বশেষ। এবার লক্ষ্য বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জণ করা। এখানে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে সেই সুযোগ পাব। আমরা বিশ্বাস আমি সেই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারব বলেই বিশ্বাস’। দেশের আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব নিজের পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘বিশ্বকাপে খেলার লক্ষ্য নিয়েই এশিয়ান জোনাল দাবায় খেলছি আমি। যদি এখানে শিরোপা জিততে পারি তাহলে বিশ্বকাপে খেলতে পারব। আমার লক্ষ্য বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করব এবার।’
তিনি আরো বলেন, ‘ফেডারেশন থেকে এখন নিয়মিতই দাবার বিভিন্ন অনলাইন টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হচ্ছে। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের যে কারোরই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম, এশিয়ান অনলাইন জোনাল দাবার আগে আমরা ভাল করেছিলাম। সে হিসেবে এই টুর্নামেন্ট নিয়ে আমি দারুণ আশাবাদী। আমরাই চ্যাম্পিয়ন হব সেই বিশ্বাস আমার মনের মধ্যে রয়েছে। এই অঞ্চলে আমরা শক্তিশালী দল হিসেবেও নিজেদের প্রমাণ করেছি। আমাদের দুজন গ্র্যান্ডমাষ্টার আর তিনজন আন্তর্জাতিক মাস্টারকে নিয়ে টুর্নামেন্টটিতে খেলছি। নিয়াজকে আগেই দেশের কোটায় সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এবার বাইরে থেকে যে কোন একজন সুযোগ পাবে বলেই আমি আশা করছি।’
বাংলাদেশের বাইরে এই আসরে মালদ্বীপ থেকে ২ জন, নেপাল থেকে ৩ জন, পাকিস্তান থেকে ১০ ও শ্রীলঙ্কা থেকে ৩ জন খেলোয়াড় এ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করছেন। ফেডারেশন থেকে সে কারণেই শিরোপা জেতার ব্যপারে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
এর আগে ফিদে বিশ্বকাপ দাবায় কোয়ালিফায়িং এশিয়ান কন্টিনেন্টাল হাইব্রিড দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের অষ্টম রাউন্ডে ফিলিপাইনের লরেঞ্জো কিমুয়েল অ্যারনকে হারিয়েছিলেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মাস্টার ফাহাদ রহমান। নিয়াজ এই টুর্নামেন্ট দারুণ খেললেও শেষ রাউন্ডে হেরেছেন। সাবেক জুনিয়র বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন এবং এ ইভেন্টের টপ সিডেড খেলোয়াড় ইরানের গ্র্যান্ডমাস্টার মাকসোদলো পারহামের কাছে তার পরাজয়টি যদিও অপ্রত্যাশিত ছিলনা। এবারের আসরে ভাল করলেই কেবল মুছে যাবে আগের আসরের ব্যর্থতা।