২০১৯ বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো দলে ডাক পেয়েছেন মিস্টার ইউনিভার্স বস। আর তাতেই বলেছেন তৃতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে তুলতে চান। ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজও (সিডব্লিউআই) তাঁকে সেই লক্ষ্যেই দলে ফিরিয়েছে।
টপ অর্ডারে ওপেনিংয়েই জীবনের বেশিরভাগ সময় ব্যাট করলেও গেলো ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএলে) পাঞ্জাবের হয়ে ব্যাট করেছিলেন তিন নম্বরে৷ তিনে ব্যাট করে ৯ ইনিংসে করেন ৩৯৫ রান! ১৪৪ স্ট্রাইক রেটে প্রায় ৪৪ গড়ে রান করেন তিনি।
অ্যান্টিগাতে বসে সংবাদ মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, কোচ ফিল সিমন্স এবং অধিনায়ক পোলার্ড তাকে যেখানে ব্যাট করতে বলবেন তিনি সেখানেই খুশি থাকবেন। লঙ্কানদের বিপক্ষে সিরিজে উইন্ডিজের দেওয়া ১৪ জনের স্কোয়াডে গেইলের সাথে এভিন লুইস, আন্দ্রে ফ্লেচার, লেন্ডল সিমন্স সহ আছেন মোট চার ওপেনার!
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়ে তিনে আমি এখন বেশ অভিজ্ঞ। পাঞ্জাবের কোচ অনিল কুম্বলে আমাকে এই রোল প্লে করতে বলেছিলো। সে অবশ্য এটি আমাকে আইপিএল শুরুর আগেই বলেছিলো, এটি নিয়ে আমার কোনো সমস্যা ছিলো না। যখন আমি দলে সুযোগ পেলাম তারা চাচ্ছিলো আমি আমার অভিজ্ঞতাটা তিনে কাজে লাগাই। কারণ আগারওয়াল ও রাহুল ওপেনিংয়ে দারুন করছিলো তখন।’
বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে তৈরি করছেন গেইল। তিনি বলেন ‘এটা কোনো সমস্যা না। আমি স্পিনেও ভালো খেলি, যেমনটা আমি পেসারদের বিপক্ষে খেলি ওপেনিংয়ে। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট আমাকে যেই রোলই দিবে আমি সেটা পূরণ করতে চাই, আমি সেই নির্দিষ্ট রোলে খেলতে চাই। আমরা এ ব্যাপারে এখনো সম্পূর্ণ আলোচনা করিনি তবে এর মাধ্যমে আমি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। যদি ওপেনিং হয় আমি প্রস্তুত আছি, যদি তিন অথবা পাঁচে৷ হয় আমি সেখানেও মানিয়ে নিবো। আমি তিন এবং পাঁচেও বিশ্বের সেরাদের একজনই থাকবো।’
গেইল জানান, জাতীয় দলে খেলতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সিতেই তিনি বেশি আনন্দ পান। তিনি বলেন, ‘আমি যখনই উইন্ডিজের জন্য ডাক পাই আমি বলেছি যে আমি খেলবো কারণ এখানে খেলা আমার হৃদয়ে থাকে। আমি ভেবেছিলাম আমি ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াবো। কিন্তু মানুষ বললো না, এটা করো না, করো না। থাকো এবং যতদূর সম্ভব খেলে যাও। তাই আমি সিদ্ধান্ত নেই খেলা চালিয়ে যাওয়ার। আমি ভেবেছিলাম ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলবো সমর্থকদের আনন্দ দেবো যতদিন পারি। এবং নিজের মধ্যে যা বাকি আছে তা পুরো পৃথিবিকে দেখাতে চাই।’
পিএসএলের মাঝপথ থেকে ফেরা গেইল বলেন, ‘তাঁরা যখন আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি খেলার জন্য ইচ্ছুক কিনা, আমি বলেছিলাম ‘হ্যা’ আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে চাই৷ এটাই সবসময় আমার হৃদয়ে থাকে। আমি পাকিস্তান সুপার লিগ থেকে আসার কারণ নিজেকে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত করা, যাতে আমরা একটি গ্রুপ হিসেবে ভালো খেলতে পারি এবং আমি আশা করি আমরা এবছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতবো।’
৪১ বছর বয়সেও নিজেকে ধরে রাখতে পারছেন। রহস্যটা কি? গেইলের মতে, ‘৪১ বছর বয়সে প্রতিদিনই শারীরিক এবং মানসিক মচাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখি। এখনও মন থেকে চায় যে মারো পার্কের বাইরে মারো, এখনো ব্যাটিং টা উপভোগ করতে চাই, মজা করতে চাই। এই ব্যাপার গুলোই আমাকে খেলা চালিয়ে যেতে সাহায্য করে। যদি মন থেকে সাপোর্ট না পাই তখন নিজেকে প্রশ্নের মুখোমুখি করতে পারবো তবে আপাতত এটাই আমার মানসিক লক্ষ্য। মানিসক লক্ষ্য এখনো বেশ ভালো। আমি এখনো নিজেকে নিয়ে কাজ করছি, আমি ট্রেনিং করছি। অনেকেই জিজ্ঞেস করছে আমি কি ডায়েট করছি কিনা? আমি এখনো ঠিকভাবেই খাচ্ছি, আমি এখনো যা মনে চায় খাই, আমি এখনো উপভোগ করছি। আমি সবসময় নিশ্চিত করি যে সর্বটা আমার মনকে সতেজ রাখতে। যখনি আপনার মন সতেজ থাকবে আপনি খুশিমতো সব করতে পারবেন।’
গেইল জানিয়েছেন, তাঁর প্রাথমিক লক্ষ্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের তিন ম্যাচ সিরিজ হলেও তার বড় লক্ষ্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফি পুনরায় ঘরে তোলা। গেইল বিশ্বের আট ক্রিকেটারের একজন যিনি কিনা ২০১২ এবং ২০১৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে ট্রফি জেতে। এবং তিনি মনে করেব তার ফেরায় দলের দীর্ঘ পরিকল্পনায় কোনো সমস্যা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করতে চাই যা পরবর্তীতে বিশ্বকাপে কাজে লাগাতে চাই। আমার বেল্টে তিনটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টাইটেল বসাতে চাই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে এটাই আমার মূল লক্ষ্য। সামনে আমাদের বেশ কিছু খেলা আছে এগুলো থেকে যথাসম্ভব ভালো কিছু আদায় করতে হবে।’
বিশ্বকাপে চোখ রাখা গেইল বলেন, ‘বিশ্বকাপ এখনো অনেক দূরে তবে আপনাকে অবশ্যই চিন্তায় রাখতে হবে সামনেই বিশ্বকাপ। তাই আমাদেরকে শক্তি সঞ্চিত রাখা সহ ফিট থাকতে হবে৷ তৈরি থাকতে এবং আমরা যে সক্ষম এই দল নিয়ে সেটা প্রমাণ করতে হবে।’