জীবনে কখনো ক্রিকেট খেলেননি ক্লেয়ার পোলোসাক।
শিক্ষকতা করতেন। সেই সাথে মা-ঠাকুমার কাছে ক্রিকেটের গল্প শুনতেন। ঠাকুমাকে বলতেন, ‘আমি ছেলে হলে ঠিক টেস্ট ক্রিকেট খেলতাম।’
যে মানুষটি কখনো ক্রিকেট খেলেননি, তার স্বপ্ন টেস্ট ক্রিকেট!
এটা কী সত্যি হয় নাকি? হয়। পোলোসাকের মত স্বপ্ন দেখতে পারলে অনেক কিছুই হয়। সেই স্বপ্ন দেখা টেস্ট ক্রিকেট অবশেষে পোলোসাকের হাতের তালুতে এসে ধরা দিলো। ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ‘অভিষেক’ হলো পোলোসাকের। সেই সাথে বিশ্বে এক নতুন ইতিহাসের যাত্রা শুরু হলো।
এই প্রথম পাঁচ দিনের ক্রিকেট ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে কাজ করছেন একজন নারী। এই প্রথম একজন নারী আম্পায়েরর নাম উঠলো পুরুষদের টেস্ট ক্রিকেটে; হোক সে রিজার্ভ আম্পায়ার হিসেবে।
‘প্রথম’ ব্যাপারটা পোলোসাকের জীবনে এই প্রথম নয়। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে জন্ম নেওয়া এই আম্পায়ার নারী আম্পায়ার হিসেবে অনেক প্রথমের স্বাক্ষী হয়েছেন এবং অনেক ইতিহাস তিনি তৈরী করেছেন।
ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও নানা কারণে সেটা হয়ে ওঠেনি। তবে আম্পায়ার হওয়ার দৃঢ়তা থেকে তাকে কেউ রুখতে পারেনি। বাবাকে বলেছিলেন, তিনি মেয়েদের খেলার আম্পায়ার হতে চান। বাবা তার স্বপ্নপূরণের জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন গৌলবার্ন শহরে। সেখানে আম্পায়ারিং কোর্স করেন পোলোসাক। প্রথম দফা পাশ করতে না পারলেও কঠোর পরিশ্রম করে কোর্স শেষ করেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া কাঠামো থেকে শুরু করেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে আইসিসির কাঠামোতে প্রবেশ করেন। সে বছর নারী বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে আম্পায়ারিং করা চার জন নারী আম্পায়ারের একজন ছিলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটেই একটা ‘প্রথম’ রেকর্ড করে ফেলেন। ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর প্রথম নারী আম্পায়ার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার পুরুষদের কোনো ম্যাচে আম্পায়ারিং করেন তিনি। সেদিন জেএলটি কাপে নিউ সাউথ ওয়েলস বনাম ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া একাদশের ম্যাচে অনফিল্ড আম্পায়ার ছিলেন তিনি।
পরের বছর জানুয়ারিতে আরেকটা রেকর্ড করেন। কোনো পুরুষ জাতীয় দলের ম্যাচে প্রথম কোনো নারী আম্পায়ার হিসেবে মাঠে দাড়ান পোলোসাক। অস্ট্রেলিয়া সফররত ইংল্যান্ড পুরুষ দলের বিপক্ষে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া একাদশের ম্যাচে আম্পায়ারিং করেন তিনি।
২০১৯ সালে এসে ঘটে সবচেয়ে বড় ঘটনা। নামিবিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি ক্রিকেট লিগের ডিভিশন-টুতে আম্পায়ার হিসেবে নিয়োগ পান পোলোসাক। আর এখানে ফাইনাল ম্যাচটি ছিলো ওমান ও নামিবিয়ার। এই ম্যাচটি ওয়ানডে স্ট্যাটাসের ছিলো। আর এই ম্যাচে এক প্রান্তের আম্পায়ার ছিলেন পোলোসাক। ফলে ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পুরুষ আর্ন্তজাতিক একদিনের ম্যাচে কোনো নারী আম্পায়ার দেখা গেলো।
এর মধ্যে একটার পর একটা কীর্তি করেছেন, নতুন চূড়া স্পর্শ করেছেন। গত বছর আরেকটা চূড়া স্পর্শ করেছেন। মেয়েদের বিগ ব্যাশের ফাইনালে আম্পায়ারিং করেছেন তিনি ও এলোসি শেরিডান। ফলে প্রথমবারের মতো কোনো ক্রিকেট ম্যাচের দু প্রান্তে নারী আম্পায়ার দেখা গেলো।
এবার পোলোসাক আরেকটা বাঁধ টপকালেন। চলে এলেন পুরুষ টেস্ট আঙ্গিনায়। তাও আবার অস্ট্রেলিয়া-ভারতের ম্যাচে।
এই অসামান্য প্রাপ্তির পর পোলোসাক বলেছেন, ‘আমি কখনো ক্রিকেট খেলিনি। কিন্তু এটাই আমার স্বপ্নের খেলা। আমাকে হয়তো একটু বেশীই পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু এটা আমি খুব উপভোগ করি। আশা করি, খুব দ্রুত টেস্ট মাঠেও নামবো।’
তাই হোক, পোলোসাক আরেক ধাপ এগিয়ে টেস্টের মাঠেই চলে আসুন।