মোহিত শর্মা, রূপকথা বলা এক ফিনিক্স পাখি

২০২৩ আইপিএল যেন নস্টালজিয়ায় ভোগাচ্ছে ক্রিকেটপ্রেমীদের, ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুরনো দিনগুলোতে। কখনো মহেন্দ্র সিং ধোনির ছক্কায় স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ছেন, আবার কখনো পিযুষ চাওলা, অমিত মিশ্ররা মুগ্ধ করছেন দারুণ সব গুগলিতে। বুড়োদের এই ফিরে আসার যাত্রায় মোহিত শর্মা যেন রয়ে গেছেন খানিকটা আড়ালেই, যেমনটা তিনি ছিলেন সেই পুরনো দিনগুলোতেও। 

মোহিত শর্মা! ভারতীয় ক্রিকেটে আক্ষেপের এক নাম। ২০১৪ আইপিএলের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি, ২০১৫ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্ট ভারত দলের সদস্য ছিলেন। তবুও পাদপ্রদীপের আলোয় কখনো আসেননি, সবশেষ গত কয়েক বছরে তো হারিয়েই গিয়েছিলেন টিভির পর্দা থেকে। 

২০১৮ আইপিএল মৌসুমে নিয়মিত খেলেছেন। ২০১৯ এবং ২০২০ মৌসুমে একটি করে ম্যাচ খেলার পর যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন বিস্মৃতির আড়ালে। অনেকে তো ভেবেই নিয়েছিলেন হয়তো বয়সের ভারে মোহিত আর ক্রিকেটটাই খেলছেন না কিংবা অর্থের মায়ায় নাম লিখিয়েছেন আমেরিকাগামী ক্রিকেটারদের দলে। কিন্তু মোহিত ফিরে এসে যেন জানান দিতে চাইলেন তিনি এখনো ফুরিয়ে যাননি!

আইপিএলে পারফরম্যান্সও মন্দ ছিল না। মাঝেমধ্যে দেদারসে রান দিতেন বটে, কিন্তু জরুরি মুহূর্তে উইকেট তুলে নিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তবুও আইপিএলে কোনো দলই তাঁকে দলে নিতে আগ্রহ দেখায়নি। পিঠের ইনজুরিতে মাসের পর মাস মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে, এমনকি জায়গা হারিয়েছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটের দল থেকেও। সবাই ধরেই নিয়েছিলেন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটটা মোহিতকে দিয়ে আর হবে না। 

কিন্তু মোহিত হাল ছাড়েননি, নেটে ঘাম ঝরিয়েছেন সেই প্রথম দিনের মতো। তাঁর আগ্রহ দেখেই কিনা গুজরাট টাইটান্সের কোচ আশিষ নেহরা প্রস্তাব দেন নেট বোলার হওয়ার। নিজেকে প্রমাণ করতে মুখিয়ে থাকা মোহিত সুযোগটা হাতছাড়া করেননি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা থাকা বোলার কিনা নেট বোলার হিসেবে কাজ করছেন! মোহিত এসব কথায় কান দেননি। তিনি জানতেন লেগে থাকলে একদিন সুযোগ মিলবে। কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন নিঃসংকোচে। ভাগ্যবিধাতাও আর ফেরাতে পারেননি, নেট বোলার থেকে মোহিত সোজা ঢুকে গেছেন টাইটান্সের একাদশে। 

নিজের ফিরে আসাটা কি দারুণভাবেই না রাঙিয়ে তুলেছেন এই পেসার। মোহালিতে যেন এদিন সেই পুরনো মোহিত যেন ফিরে এসেছিলেন বারবার। দারুণ সব স্লোয়ার, কাটার কিংবা কখনো বাউন্সারে নিজেকে করে তুলেছিলেন দুর্বোধ্য। চার ওভারে মাত্র ১৮ রানে দুই উইকেট তুলে নিয়ে গুজরাটের জয়ের ভিতটা তো তাঁরই গড়ে দেয়া। 

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে রান বেশি দেয়ার দুর্নাম ঘুচাতে যেন এবারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মোহিত। বোলিংয়েও পরিণতবোধের ছাপ স্পষ্ট, তরুণ মোহিতের চাইতে ক্যারিয়ারের শেষবেলার মোহিত যেন আরো ধারালো। গতিটা খানিকটা কমেছে, কিন্তু অভিজ্ঞতা বেড়েছে বিস্তর। তাঁর বোলিং বৈচিত্র্যের কোনো জবাব যেন নেই প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের কাছে। 

মোহিত শর্মা টেলিভিশনের পর্দা থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন বেশ কয়েক বছরের জন্য। কিন্তু পর্দার আড়ালে তিনি ঠিকই নিজের চেষ্টাটা চালিয়ে গেছেন, নিজেকে প্রস্তুত করেছেন সঠিক সময়ের জন্য। প্রথম সুযোগেই তিনি ফিরেছেন, ফিরেছেন প্রবলভাবেই।    

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link